চার হাজার সৈন্য এসে দাঁড়ায় ইমামের তাঁবুর সামনে

লেখক:
প্রকাশ: ৭ years ago

হিজরি ৬১ সালের এই দিনে (৫ মহররম) বসরা ও কুফায় নিযুক্ত ইয়াজিদের গভর্নর ইবনে জিয়াদের নির্দেশে হাসিইন বিন নুমাইর চার হাজার (মতান্তরে ৩৮০০) অশ্বারোহী সেনা নিয়ে কারবালায় আসে হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) এবং তাঁর সঙ্গীদের ক্ষুদ্র দলটির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে।একই দিনে জিয়াদ শাবাশ বিন রবি নামের এক ব্যক্তিকে এক হাজার সেনাসহ কারবালায় পাঠায়।

এ ছাড়াও সে জাহর বিন কাইস নামের এক ব্যক্তিকে ৫০০ সেনাসহ কারবালা ময়দান সংলগ্ন ফোরাত নদীর শাখার একটি সেতুর ওপর এ দায়িত্বে নিয়োজিত করে যে, কেউ যদি ইমাম হোসাইন (রা.)’র পক্ষে যুদ্ধ করতে কারবালায় প্রবেশ করে তাকে সে হত্যা করবে।কিন্তু সা’দা নামের ওই সেতুর ওপর প্রহরা সত্ত্বেও ইমামের অনুরাগী ঘোড়-সওয়ার আমের বিন আবি সালামাহ ৫ মহররম নিজের ঘোড়া নিয়ে একাই জাহরের বাহিনীর ওপর বীর-বিক্রমে হামলা চালান এবং ইয়াজিদ বাহিনীর প্রতিরক্ষা-ব্যুহে ভাঙ্গন ধরিয়ে ইমাম-শিবিরে যোগ দিতে সক্ষম হন। এই মহান বীর আশুরার দিন মারা যান।আগের দিন ৪ মহররম উবাইদুল্লাহ ইবনে জিয়াদ কুফার মসজিদে তার বক্তব্যে বলেন, হে কুফাবাসী!

তোমরা আবু সুফিয়ানের বংশধরদেরকে চিনতে পেরেছ, তারা যা চায় তা-ই করতে পারে! ইয়াজিদকে চিনতে পেরেছ সে চাইলে তোমাদেরকে ক্ষমাও করতে পারে! সে আমাকে নির্দেশ দিয়েছে আমি তোমাদেরকে অর্থ দান করি যেন তোমরা হোসাইনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে যাও।এ অবস্থায় ইয়াজিদ বাহিনীর পক্ষে শিমার চার হাজার, ইয়াজিদ বিন রেকাব দুই হাজার, হাসিইন বিন নুমাইর চার হাজার, মাযায়ের বিন রাহিয়ে চার হাজার এবং নাসর বিন হারসা দুই হাজার প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত সেনা নিয়ে কারবালার উদ্দেশ্যে রওনা হন। এভাবে ৫ মহররম কুফা শহরে বিভিন্ন স্থান থেকে ওমর বিন সাআদের সেনাদলে যোগ দেয়ার জন্য লোকেরা জমা হতে থাকে।কারবালায় ইমাম হোসাইন (রা.)’র সঙ্গে নিজ পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনসহ যারা শেষ পর্যন্ত ছিলেন ও ইয়াজিদের বাহিনীর বিরুদ্ধে অসম যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন তাদের সংখ্যা ছিল প্রায় ১০০ জন।

তাঁদের মধ্যে ৭২ জন মারা যান আশুরার দিন তথা দশই মহররম এবং সব শেষে একই দিনে ইমাম হোসাইন (রা.) ও শাহাদত বরণ করেন।ইমাম হোসাইন (রা.)’র আন্দোলনের একটি বড় বৈশিষ্ট্য ও অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য ছিল সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজে বাধা দেয়া বা নিষেধ করা।  আমর বিল মারুফ ওয়া নাহী আনীল মুনকারের’ উপস্থিতি এই আন্দোলনকে যেমন একটা মহান আদর্শে পরিণত করেছে ঠিক তেমনিভাবে এ আমর বিল মারুফ ওয়া নাহী আনীল মুনকারকে বেশি গুরুত্ববহ করে তুলেছে। ইসলামের এই রোকন ইমাম হোসাইনের (রা.) আন্দোলনকে শুধু ইসলামী বিপ্লবের শীর্ষেই আসন দান করেনি বরং যুগ যুগ ধরে বিপ্লবী মুসলমানদের জন্যে অনুকরণীয় আদর্শে রুপান্তরিত করেছে।যেদিন ইমাম হোসাইন (রা.) মক্কা ছেড়ে আসেন সেদিন মুহাম্মদ ইবনে হানাফিয়ার কাছে লেখা অসিয়তনামায় তিনি এ বক্তব্য তুলে ধরেন।

তিনি লিখেন,  ‘আমি কোনো ধন-সম্পদ বা ক্ষমতার লোভে কিংবা কোনো গোলযোগ সৃষ্টির জন্যে বিদ্রোহ করছি না, আমি শুধু আমার নানার (হযরত মোহাম্মদ (সা.) উম্মতের মধ্যে সংস্কার করতে চাই, আমি আমর বিল মারুফ ওয়া নাহী আনীল মুনকার করতে চাই এবং আমার নানা যে পথে চলেছেন আমিও সেই পথে চলতে চাই।’ইমাম হোসাইন (রা.) দীর্ঘ পথ চলার সময় একাধিকবার তার এই লক্ষ্যকে পুনঃ পুনঃ উল্লেখ করেন। বিশেষ করে এ সময়গুলোতে তিনি বাইয়াত প্রসঙ্গেরও যেমন কোনো উল্লেখ করেননি তেমনি দাওয়াত প্রসঙ্গেরও কোনো উল্লেখ করেননি।আরও আশ্চর্যের বিষয় হলো পথে তিনি যতই কুফা সম্পর্কে ভয়ানক ও হতাশাব্যঞ্জক খবর শুনছিলেন ততই তার বক্তব্য জ্বালাময়ী হয়ে উঠছিল। সম্ভবত ইমামের দূত মুসলিম ইবনে আকিলের শহিদ হবার সংবাদ শুনেই ইমাম এই বিখ্যাত খুতবা প্রদান করেন, ‘ হে মানবমণ্ডলী! পৃথিবী আমাকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করছে, আমাকে বিদায় জানাচ্ছে। পরকাল আমাকে সাদরে বরণ করছে, উপযুক্ত মর্যাদা দিচ্ছে।

তোমরা কি দেখতে পাচ্ছনা যে সত্য অনুসারে আমল করা হচ্ছে না, তোমরা কি দেখতে পাও না যে আল্লাহর বিধানসমূহকে পদদলিত করা হচ্ছে? দেখতে পাওনা যে চারদিকে ফেতনা-ফ্যাসাদে ছেয়ে গেছে অথচ কেউ এর প্রতিবাদ করছে না?এ অবস্থায় একজন মুমিনের উচিত নিজের জীবন উৎসর্গ করে আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জন করা। যদি জীবন উৎসর্গ করতে হয় তাহলে এটাই তার উপযুক্ত সময়।’