চার প্রতিষ্ঠানে জিম্মি রড ব্যবসা

লেখক:
প্রকাশ: ৭ years ago

দেশের চার প্রতিষ্ঠানের কাছে রড ব্যবসা জিম্মি বলে অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি রডের যে অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি, এর পেছনেও ওই চার প্রতিষ্ঠানের হাত রয়েছে। এমন অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের।

প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- বিএসআরএম স্টিল লিমিটেড, রহিম স্টিল, বন্দর স্টিল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এবং আবুল খায়ের স্টিল মিলস লিমিটেড। এ চার প্রতিষ্ঠানের ওপর রডের মূল্য ওঠা-নামা নির্ভর করে।

রড ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশে রডের বাজারের প্রায় ৩০ শতাংশই বিএসআরএম’র দখলে। রহিম স্টিল (আরএসএম), বন্দর স্টিল এবং আবুল খায়ের স্টিল লি. এর দখলে রয়েছে প্রায় ১৫ শতাংশ বাজার। এছাড়া রডের যে কেমিক্যাল আমদানি হয় তার প্রায় ৮০ শতাংশই আনে রহিম স্টিল।

ব্যবসায়ীরা জানান, ওই চার প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি কবির স্টিল (কেএসআরএম), রতনপুর রি-রোলিং মিলস (আরএসআরএম), আনোয়ার ইস্পাত, শফিউল আলম স্টিল, শাহরিয়ার স্টিল মিলসও রডের বড় একটি অংশ জোগান দেয়। তবে রডের মূল্য ওঠা-নামার পেছনে এসব প্রতিষ্ঠানের খুব একটা ভূমিকা থাকে না। মূলত রডের মূল্য বাড়বে, নাকি কমবে তা নির্ভর করে বিএসআরএম’র ওপর।

পুরান ঢাকার ইংলিশ রোডের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, কাঁচামাল আমদানি, পরিবহন খরচ ও ডলারের মূল্য বেড়েছে। কিন্তু এসব কারণে রডের মূল্য যে হারে বাড়ার কথা, বেড়েছে তার থেকে অনেক বেশি। রডের মূল্য কেজিতে বেড়েছে প্রায় ১৫ টাকা। এটা কিছুতেই স্বাভাবিক নয়। এর পেছনে সিন্ডিকেট আছে।

তারা বলেন, এ সিন্ডিকেটের মূলহোতা বিএসআরএম। এ প্রতিষ্ঠানটিকে ধরলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। বিএসআরএম যদি রডের মূল্য কমায় দেখবেন সব রডের মূল্য কমে গেছে। এখন যে মূল্য বেড়েছে এর পেছনেও বিএসআরএম জড়িত। এখন নির্মাণকাজের মৌসুম। ফলে রডের চাহিদ এ সময় বেশি। এ সুযোগটা কাজে লাগাতে মূল্য বাড়ানো হয়েছে।

ব্যবসায়ীরা আরও বলেন, পরিবহন খরচ তো অনেক আগেই বেড়েছে। কাঁচামালের মূল্য বেড়েছে সম্প্রতি। কিন্তু এখন যেসব কাঁচামাল আসছে তার এলসি তো আরও আগে করা। তাহলে কাঁচামালের মূল্য বাড়ার কারণ দেখিয়ে রডের মূল্য বাড়ানো কতটা যুক্তিসংগত, সেটা সংশ্লিষ্টদের ভেবে দেখা উচিত।

এ বিষয়ে ইংলিশ রোড আয়রন অ্যান্ড স্টিল মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সচিব মো. আবু তাহের  বলেন, এখন নির্মাণকাজের প্রধান মৌসুম। এ সময় রডের চাহিদা বেশি। এটা টার্গেট করে সিন্ডিকেট চক্র রডের মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে। এ সিন্ডিকেটের পেছনে বিএসআরএম, রহিম স্টিল এবং বন্দর স্টিল জড়িত থাকতে পারে। এরাই তো রডের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে।

তবে সিন্ডিকেট করে মূল্য বাড়ানোর বিষয়টি অস্বীকার করেছে বিএসআরএম কর্তৃপক্ষ। প্রতিষ্ঠানটির কোম্পানি সচিব শেখর রঞ্জন কর বলেন, স্ক্র্যাপ ও ডলারের মূল্যের সঙ্গে পরিবহন খরচ, বন্দরের খরচ ও সুদের হার বেড়েছে। এসব কারণেই রডের মূল্য বাড়তি। এখানে কোনো কারসাজি বা সিন্ডিকেটও নেই। যদি সিন্ডিকেট করে রডের মূ্ল্য বাড়ানো হতো তাহলে সবার রডের মূল্য সমান হতো।

চাহিদা বেশি থাকায় রডের মূল্য বাড়ছে, খুচরা ব্যবসায়ীদের এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নির্মাণকাজের মৌসুম হওয়ায় মূল্য বাড়ছে এটা সঠিক নয়। তবে বর্ষা আসলে মূল্য কমেও যেতে পারে। তার মানে এ নয় যে, সিজনাল কারণে রডের মূল্য বাড়ানো হয়েছে। তবে ‘বিএসআরএমর ওপর রডের মূল্য ওঠা-নামা নির্ভর করে’- বিষয়টি স্বীকার করেন এ কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, বিএসআরএম মূল্য বাড়ালে অন্যরাও বাড়াবে, এটা স্বাভাবিক। কারণ বিএসআরএম পুরাতন এবং বড় প্রতিষ্ঠান।

বাংলাদেশ অটো রি-রোলিং অ্যান্ড স্টিল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ও শাহরিয়ার স্টিল মিলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে মাসুদুল আলম মাসুদ বলেন, কারসাজি নয় রডের মূল্য বৃদ্ধির কারণ হলো আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামাল ও ডলারের মূল্য বৃদ্ধি, গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি এবং পরিবহন খরচ বৃদ্ধি পাওয়া। এসব কারণে রডের মূল্য বেড়েছে। এছাড়া সিজনাল কারণেও মূল্য কিছুটা বেড়েছে। এ সময় রডের চাহিদা কিছুটা বেশি থাকে, যে কারণে মূল্য কিছুটা বাড়ে। আমরা তিন মাস ব্যবসার সুযোগ পাই। বর্ষার সময় তো লোকসানে মাল বিক্রি করি। সে সময় তো কেউ খোঁজ নেয় না।

তিনি আরও বলেন, রডের মূল্য বাড়লেও তা অস্বাভাবিক নয়। সরকারি রেটের চেয়ে দাম এখনও কম আছে। সরকারি হিসাবে এখন রডের মূল্য ৮৪ টাকা কেজি। কিন্তু কেউ তো ৭২ টাকা কেজির বেশি বিক্রি করছে না। এরপরও আশা করছি ডলারের মূল্য কমলে রডের মূল্যও কমে যাবে।