ইচ্ছা ছিল পাইলট হব। ভর্তিও হয়েছিলাম বিজ্ঞান বিভাগে। গ্রামের স্কুল। বিজ্ঞান বিভাগে পড়ার জন্য পর্যাপ্ত পরিবেশ না থাকায় পরে বিভাগ পরিবর্তন করে ভর্তি হলাম মানবিক শাখায়। এ বিভাগ থেকেই স্কুল, কলেজ শেষ করি। পরে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পড়ার সুযোগ পাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। অজপাড়াগাঁ থেকে এসে শহরের পরিবেশের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেওয়াই ছিল আমার জন্য অগ্নিপরীক্ষা। ইংরেজিতে খুবই দুর্বল ছিলাম। কিন্তু শহরের সবাই কথায় কথায় ইংরেজি বলে! ভাবলাম, আমি কেন পারব না? যেই ভাবা সেই কাজ। একটি ভাষায় চটপটে হওয়ার জন্য দরকার সেই ভাষার প্রচুর শব্দ জানা। নিচের ক্লাসের কিছু বই কিনে সেখান থেকে গুরুত্বপূর্ণ শব্দগুলো নোট করা শুরু করলাম। ডিকশনারি খুঁজে খুঁজে শব্দগুলোর সামনে বাংলা অর্থ লিখতাম। প্রতিদিন ১০-১৫টা শব্দ নোট করতাম। এভাবে প্রয়োজনীয় সব শব্দই আমার আওতার মধ্যে চলে আসে। তারপর গুরুত্ব দিলাম, কিভাবে এই শব্দ দিয়ে বাক্য তৈরি করা যায়। নোট করা শব্দগুলো দিয়ে সারা দিনই নিজে নিজে বাক্য তৈরি করতাম। একসময় আমার ইংরেজি ভাষায় ফ্রিহ্যান্ড রাইটিং স্কিলের বেশ উন্নতি হলো। আমার জন্য যেকোনো বিষয়ে ইংরেজিতে লেখা ও বলা সহজ হয়ে গেল। সঙ্গে আত্মবিশ্বাসটাও বেড়ে গেল বহুগুণ। দুটিই আমার চাকরি পাওয়ায় ক্ষেত্রে দারুণ কাজে লেগেছে। বরাবরই আমার নতুন কিছু জানার আগ্রহ। একটি বিষয় সব সময় কাজ করেছে—কিভাবে আরো ভালো করা যায়। না বোঝা পর্যন্ত আমি চেষ্টা করতেই থাকি। বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে ও চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার ক্ষেত্রেও তা-ই করেছি। যে বিষয়টি জটিল মনে হয়েছে, তা বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করেছি। আলোচনার মধ্য দিয়ে অনেক জটিল বিষয়ের সহজ সমাধান বন্ধুরা মিলে বের করতাম।
মানবিক শাখার ছাত্র হাওয়ায় হিসাব-নিকাশ কম বুঝতাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে আমার রুমমেট ছিল বাণিজ্য শাখার। ওদের বই থেকে ব্যাংকিং ও বাণিজ্যের বিষয় সম্পর্কে ধারণা নিতাম। মাঝেমধ্যে ওরাও আমাকে বুঝিয়ে দিত। ব্যাংক জব ও বিসিএসের জন্য ইংরেজি ও গণিতে ভালো দখল ছাড়া সফল হওয়া যায় না। তাই অনার্স শেষ করেই বই কিনে প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছিলাম। বিভিন্ন ব্যাংকের বিগত সালের প্রশ্ন সমাধান করতাম। বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় দেখেছি, লিখিত পরীক্ষায় সাধারণত একাডেমিক বিষয়ে প্রশ্ন আসে। আর এসব বিষয়ে আমার দখল ভালো থাকায় লিখিত পরীক্ষায় টিকে যেতাম।
অনার্স শেষ হওয়ার পর চাকরির জন্য বিভিন্ন জায়গায় আবেদন করি। বিসিএস, প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা, বাংলাদেশ ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশন, অগ্রণী ব্যাংকসহ ১০-১২টি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির পরীক্ষা দিই। নানাবিধ কারণে অনেক জায়গায় চাকরি হওয়া সত্ত্বেও যোগদান করতে পারিনি। বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়েও পছন্দের ক্যাডার না পাওয়ায় যোগ দিইনি। পরে অগ্রণী ব্যাংকে টিকে গেলে এখানেই যোগ দিই।
অগ্রণী ব্যাংকে লিখিত পরীক্ষায় টেকার পর ভাইভার জন্য নির্বাচিত হই। কিন্তু বিপত্তি বাধে ভাইভার তারিখ নিয়ে। আমার সিরিয়াল অতিক্রম করে দুই দিন পরে গিয়েছিলাম ভাইভা দিতে। শুরুতে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আমার ভাইভা নেবে না বলে আমাকে তাড়িয়ে দেয়। পরে অনেক অনুরোধ করার পর ভাইভা নিয়েছিল। প্রথমেই প্রশ্ন করেছিল আমার সাবজেক্ট নিয়ে। তারপর আন্তর্জাতিক বিষয়ে কয়েকটি প্রশ্ন করেছিল। রাষ্ট্রবিজ্ঞান থেকে কেন ব্যাংকে চাকরি করতে আসতে চাচ্ছি, এ নিয়েও প্রশ্ন করেছে। আমি সব প্রশ্নের উত্তর গুছিয়ে দিয়েছিলাম। উত্তর শুনে তাঁরা খুবই খুশি হয়েছিলেন। তবে কিছু কৌশলী প্রশ্নের জুতসই উত্তর দিতে পারিনি বলে ধরে নিয়েছিলাম এ চাকরি হবে না। কিন্তু পরে দেখি, অফিসার পদে টিকে গেছি।
ব্যাংকিং পেশাটা অনেক উপভোগ করি। এখানে কাজের পরিবেশ খুবই ভালো। কাজের অনেক চাপ। সবার মধ্যে সহযোগিতার মনোভাব আছে বলেই চাপটা সামলাতে পারি।