‘চশমাটা খসে গেলে মুশকিলে পড়ি...’ অঞ্জন দত্তের বিখ্যাত গানটা নিশ্চয় খেয়াল আছে সবার। চশমা খসে গেলে কী যে মুশকিল, চশমিশেরাই শুধু জানে। কিন্তু ক্রিকেট খেলায় এমন অনেক খেলোয়াড়ই আছেন, যাঁরা প্রায় গোটা ক্যারিয়ারই পার করেছেন চোখে চশমা লাগিয়ে। চশমা পরেই দাপিয়েছেন মাঠ, আধিপত্য বিস্তার করেছেন প্রতিপক্ষের ওপর। সেই চশমাধারীদের ক্লাবের সদস্য বাড়ল কি না, সময়ই বলে দেবে। আপাতত অভিষেকে সেঞ্চুরি করে চমক জাগিয়েছেন ইনজামাম-উল হকের ভাতিজা ইমাম-উল হক। আসুন, এই সুযোগে দেখে নিই ক্রিকেটের কয়েকজন বিখ্যাত ‘চার চোখু’কে
[caption id="" align="alignnone" width="640"] ড্যানিয়েল ভেট্টোরি, সাবেক নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক।[/caption]
ড্যানিয়েল ভেট্টরি
ক্রিকেটের সর্বশেষ বিখ্যাত চশমাধারী তিনি। নিউজিল্যান্ড দলে সোনালি রিমের চশমা পরে এক তরুণ বল করছেন—এই দৃশ্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেট দেখেছে প্রায় ১৮ বছর ধরে। ১৯৯৭ সালে টেস্ট অভিষেকের পর দলকে একটা বড় সময়জুড়ে নেতৃত্বও দিয়েছেন তিনি। ২০১৫ বিশ্বকাপ খেলেই তিনি ইতি টেনেছেন ক্যারিয়ারের।
ওয়াল্টার হ্যাডলি
রিচার্ড হ্যাডলির বাবা ওয়াল্টার হ্যাডলি ১৯৪৯ সালের ইংল্যান্ড সফরে নিউজিল্যান্ড দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। টস করা নিয়ে তাঁর মজার একটি গল্প আছে। টস করার সময় কয়েন দেখতে পাচ্ছেন কি না, এমন একটি প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘অবশ্যই! অবশ্যই দেখতে পাচ্ছি। সাদা কাপড়ে কেচাপের দাগ দেখা যায় যেমন, আমি কয়েনটি ঠিক সেভাবেই দেখতে পাচ্ছি।’
[caption id="" align="alignnone" width="639"] ক্লাইভ লয়েড, ‘চার চোখু’দের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত।[/caption]
ক্লাইভ লয়েড
ভারী রিমের চশমা পরা এক ক্রিকেটার বিশ্বকাপ ট্রফি ওপরে তুলে ধরেছেন—ক্রিকেটের সবচেয়ে বিখ্যাত কয়েকটি ছবির একটি এটি। ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় চশমাধারী তারকাই বলা চলে এই ক্লাইভ লয়েডকে। ক্রিকেটের গ্রেটদের তালিকাতেও এই লয়েড ঢুকে পড়েন অনায়াসেই। দু-দুটি বিশ্বকাপ জিতিয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। তাঁর সময়ই ক্রিকেট বিশ্বের অবিসংবাদিত সেরা দলে পরিণত হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
পার্সি ফেন্ডার
শখ করে চশমা পরতেন পার্সি ফোল্ডার। এক শতাব্দী আগের এই ক্রিকেটার প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে মাত্র ৩৫ মিনিটে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন। স্টাইলিশ এই ব্যাটসম্যান অবশ্য ইচ্ছা করলেই চশমা খুলে খেলতে পারতেন, কিন্তু তিনি তা করেননি। চশমা পরেই ক্রিকেট মাঠ দাপিয়েছেন এই ইংলিশ ব্যাটসম্যান।
মাইকেল স্মিথ
ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক স্মিথ গোটা পঞ্চাশেক টেস্ট খেলেছেন চোখে চশমা লাগিয়ে। তাঁর মধ্যে ২৫ টিতেই দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি। মজার ব্যাপার হচ্ছে, তিনি দেশের হয়ে রাগবিও খেলেছেন, তখন অবশ্য চশমাজোড়া মাঠের বাইরে রেখেই মাঠে নামতেন তিনি।
[caption id="" align="alignnone" width="640"] জহির আব্বাস, যাঁর ব্যাটিং ছিল প্রতিপক্ষের ভয়ের কারণ।[/caption]
জহির আব্বাস
পাকিস্তানের কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান জহির আব্বাসও চশমা পরে খেলতেন। রিমলেস চশমায় ফুটে উঠত তাঁর ব্যাটিং-ব্যক্তিত্ব। পাকিস্তানের হয়ে ৭৮টি টেস্ট ও ৬২টি ওয়ানডে খেলা আব্বাসের ব্যাটিং গড় দুই ফরম্যাটেই চল্লিশের ওপরে।
এডি বারলো
বাংলাদেশের সাবেক কোচ এডি বারলো তাঁর খেলোয়াড়ি জীবনে চশমা পরেই খেলতেন। দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই অলরাউন্ডার বর্ণবাদের কারণে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খুব বেশি খেলতে পারেননি। বিশ্ব একাদশের হয়ে ৫ বলে ৪ উইকেট নেওয়ার দারুণ কৃতিত্ব আছে তাঁর। টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার কিছু দিন আগে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের কোচ হয়ে এসেছিলেন। কিন্তু মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে আক্রান্ত হওয়ার কারণে তাঁর অনন্য অভিভাবকত্ব খুব বেশি দিন পায়নি বাংলাদেশ।
বিল বোয়েস
চশমাধারী পেস বোলার! বিল বোয়েস চশমা পরেই আগুন ঝরাতেন বলে। বডিলাইন সিরিজে তিনি স্যার ডন ব্র্যাডম্যানকে বাউন্সার দিয়ে বোল্ড করেছিলেন! হুক করতে গিয়ে বলকে স্টাম্পে টেনে এনেছিলেন ব্র্যাডম্যান।
[caption id="" align="alignnone" width="640"] চার্লস কভেন্ট্রি, ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ ইনিংসের রেকর্ড গড়েছিলেন যিনি।[/caption]
চার্লস কভেন্ট্রি
শচীন টেন্ডুলকার ওয়ানডের প্রথম দ্বিশতক হাঁকানোর আগ পর্যন্ত ওয়ানডেতে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন এই চশমাধারী ব্যাটসম্যান। বাংলাদেশের বিপক্ষে করা তাঁর ওই ইনিংসটি আন্তর্জাতিক ম্যাচে এখন পর্যন্ত তাঁর একমাত্র শতক।
বিজয় আনন্দ
চশমা পরিহিত এই যুবক ছিলেন বিজয়নগরের রাজকুমার। প্রচণ্ড রগচটা এই রাজকুমার ১৯৩৬ সালের ইংল্যান্ড সফরে ভারতীয় দলের অধিনায়কত্ব করেন। অবশ্য ৬ ইনিংসে ৩৩ রান নেওয়ার পর আর টেস্ট খেলা হয়নি তাঁর।
আলফ ভেলেন্টাইন
ইংল্যান্ডে খেলতে গিয়ে ভেলেন্টাইন প্রথম চশমা তুলেছিলেন চোখে। ক্রিকেট মাঠে স্কোরবোর্ড দেখতে অসুবিধা হওয়াতেই সতীর্থেরা জোর করে চোখের ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন তাঁকে। এরপর থেকে চশমাই তাঁর নিত্যসঙ্গী। চশমা পরেই ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের নাভিশ্বাস তুলেছিলেন এই ক্যারিবীয় ফাস্ট বোলার।
টমি মিশেল
অধিনায়ক পছন্দ না হলে তিনি নাকি ঠিকমতো বলই করতে পারতেন না। ১৯৩২ সালের বডিলাইন সিরিজে ইংলিশ এই ক্রিকেটার ডগলাস জার্ডিনের নেতৃত্বে খেলেছিলেন মাত্র একটি টেস্ট। ওই একটি টেস্টে তিনি দখল করেছিলেন ৩ উইকেট। তিনিও চশমা পরেই নামতেন ক্রিকেট মাঠে।
[caption id="" align="alignnone" width="638"] আজহার হোসেন, বাংলাদেশের প্রথম ফিফটি করার কীর্তি তাঁর।[/caption]
আজহার হোসেন
বাংলাদেশের টেস্ট-পূর্ব যুগের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। শান্টু নামেই দেশের ক্রিকেটে অধিক পরিচিত। বাংলাদেশের হয়ে ১৯৮৮ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত সাতটি এক দিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছিলেন আজহার। তিনিই ওয়ানডে ক্রিকেটে ফিফটি করা বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান। অফব্রেক বোলার হিসেবে ওয়ানডেতে সাত ম্যাচে তাঁর আছে চারটি উইকেট। এই প্রজন্মের অনেকেই হয়তো জানেন না, এই আজহার চশমা পরেই নামতেন ক্রিকেটের মাঠে। ব্যাটিং কিংবা বোলিং—চশমা থাকত তাঁর নিত্যসঙ্গী।
© স্বত্ব আর্থটাইমস্ ২৪.কম
প্রকাশক ও সম্পাদক: মোঃ জাকারিয়া আলম (দিপু)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ:বরিশাল-৮২০০।
আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:::
নিউজ মেইল:::
earthtimes24@gmail.com(নিউজ)
news@earthtimes24.com(নিউজ)
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
২০১৭ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত earthtimes24.com