টাঙ্গাইলে চলন্ত বাসে দলবদ্ধ ধর্ষণ ও ডাকাতির ঘটনার রোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন ভুক্তভোগী নারী। বৃহস্পতিবার (৪ আগস্ট) সন্ধ্যায় টাঙ্গাইলের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রুমি খাতুন ওই নারীর জবানবন্দি নেন।
এ সময় মঙ্গলবার (২ আগস্ট) রাতে ঘটে যাওয়া পৈশাচিক ওই ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন ওই নারী।
ভুক্তভোগী নারী বলেন, ‘আমি মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থেকে ঈগল পরিবহনের বাসে ওঠে ঢাকা যাচ্ছিলাম। সিরাজগঞ্জের তিনটি আলাদা জায়গা থেকে ১০ জনের ডাকাত দল বাসে ওঠে। ডাকাতি শুরুর আগে আমার পাশের খালি সিটে ডাকাতদের একজন বসতে চাইলে তাকে বসতে দিইনি। ডাকাতি শুরু করলে আমি তাদের বাধা দিয়েছিলাম। এ কারণে তারা আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়’।
তিনি বলেন, ‘প্রথমে তিনজন ডাকাত বাসচালকের কাছে গিয়ে তাকে জিম্মি করে। চালকের গলায় ছুরি চেপে ধরে সিট থেকে উঠতে বলে। একপর্যায়ে তারা চালককে বেঁধে ফেলে। এ সময় তারা আমার পাশের সিটে বসা হেলপারকে তুলে নেয়। আমার সঙ্গে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে তারা আমার হাত-মুখ- চোখ বেঁধে ফেলে এবং ধর্ষণ করে’।
ওই নারী বলেন, ‘ডাকাতরা যার কাছে টাকা বেশি পেয়েছে তাকে কিছু বলেনি। সবার কাছ থেকে টাকা, মোবাইল ও স্বর্ণালঙ্কারসহ সবকিছু লুটে নেয়। একজন মহিলা তার স্বামীকে ঢাকায় ডাক্তার দেখাতে যাচ্ছিলেন। ডাক্তার দেখানোর জন্য তার কাছে থাকা সব টাকাও তারা কেড়ে নেয়’।
জবানবন্দিতে ওই নারী ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে বলেন, ‘ঘটনার সঠিক বিচার না হলে আজ এক নারীর সঙ্গে যা ঘটেছে কাল আরেক নারীর সঙ্গেও তা ঘটবে। আমি ওদের ফাঁসি চাই। যাতে ওদের দেখে অন্যরা ভালো হয়ে যায়’।
মঙ্গলবার রাতে কুষ্টিয়া থেকে ছেড়ে আসা ঈগল পরিবহনের একটি বাস ২৪ যাত্রী নিয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। গভীর রাতে সিরাজগঞ্জ পৌঁছালে সেখান থেকে একদল ডাকাত যাত্রীবেশে ওই বাসে ওঠে।
বাসটি বঙ্গবন্ধু সেতু পাড় হওয়ার পর অস্ত্রের মুখে যাত্রীদের বেঁধে ফেলে। এ সময় দলটি বাসটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কয়েক মিনিটের মধ্যে যাত্রীদের কাছ থেকে মোবাইল, নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কার লুট করে নেয়। একপর্যায়ে তারা বাসযাত্রী ওই নারীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ করেন।
বাসটি বিভিন্ন স্থানে ঘুরিয়ে তিন ঘণ্টা তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখেন। পরে পথ পরিবর্তন করে টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ আঞ্চলিক মহাসড়কে মধুপুর উপজেলার রক্তিপাড়া জামে মসজিদের পাশে বালির স্তূপে বাসটি ফেলে পালিয়ে যান।