সম্পর্ক ভাঙা-গড়ার খেলায় নিত্যই ডুবে থাকে শোবিজ। আজ এই তারকার বিয়ে তো কাল ওই তারকার ছাড়াছাড়ি! এসব নিয়ে কাঁদা ছোঁড়াছুড়ি তো চলেই। এসব দেখে বিরক্ত দর্শক-ভক্তরাও। তাই কোনো তারকার বিয়ে হলে তারা প্রার্থনা করেন, বিচ্ছেদটা যেন অন্তত শান্তিতে হয়!
চলতি বছর শোবিজের অনেক জনপ্রিয় তারকার সুখের সংসার ভেঙেছে। আবার অনেকেরই বিচ্ছেদ চূড়ান্ত না হলেও ঝুলে আছে আনুষ্ঠানিকতার অপেক্ষায়। অনেকেই আবার স্বামী-সংসার কিংবা বউ ছেড়ে আলাদা থাকছেন। তারকাদের সম্পর্কের নানা গল্প নিয়ে এই আয়োজন-
বছর শেষের বেদনা শাকিব-অপুর বিচ্ছেদ
প্রথমেই বলতে হয় সর্বশেষ বিচ্ছেদ হওয়া তারকা জুটি শাকিব খান ও অপু বিশ্বাসের কথা। অনেক নাটক আর আলোচনা সমালোচনার জন্ম দেয়া এই তারকাদ্বয়ের দাম্পত্য জীবন অবশেষে ভেঙেই যাচ্ছে। ২৮ নভেম্বর অপু বিশ্বাসের কাছে ডিভোর্স নোটিশ পাঠান শাকিব খান। সেই নোটিশ হাতে পেয়ে অবাক হন অপু। যাকে ভালোবেসে ধর্ম, জাত, ক্যারিয়ার সব বিসর্জন দিয়েছেন তার কাছ থেকে বিচ্ছেদের প্রস্তাব? অবিশ্বাস্য লাগছে তার কাছে। তবে শাকিব খান তার ডিভোর্স নোটিশে অপুকে অবাধ্য স্ত্রী দাবি করে তার বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ এনেছেন।
এদিকে অপুও বেশ কিছু পাল্টা অভিযোগ করেছেন শাকিবের বিরুদ্ধে। তিনি দাবি করেছেন, শাকিব তাকে কৌশলে ধর্ম পরিবর্তন করিয়েছেন। তিনবার তার গর্ভপাত করতে বাধ্য করেছেন। স্বামীর প্রতি স্ত্রী অপুর এই অভিযোগ হতবাক করেছে দুই তারকার ভক্তদের। কলকাতার গণমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে শাকিবকে তুলোধুনা করা হয়েছে।
এই মুহূর্তে শাকিব রয়েছেন দেশের বাইরে। অপুও তেমন করে মুখ খুলছেন না। কী সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন তিনি সেটাও জানা যাচ্ছে না। তবে এই দুই তারকার সংসার ভাঙার খবর আলোচনার গরম ইস্যু হিসেবেই দেশময় ছড়িয়েছে। বিভক্ত হয়েছে শাকিব-অপুর ভক্তরা। জ্বালাময়ী অনেক স্ট্যাটাস ফেসবুকে দেখা যাচ্ছে চলচ্চিত্রপ্রেমী, নারীবাদিদের। চায়ের দোকান, বাস স্টেশন, অফিসের ডেস্ক, স্কুল-কলেজের আড্ডা- সবখানেই আলোচিত শাকিব-অপুর ডিভোর্সের বিষয়টি।
তবে চলচ্চিত্রের সিনিয়র কর্মীরা শাকিব-অপুকে বিচ্ছেদে না গিয়ে সমঝোতায় আসার পরামর্শ দিয়েছেন। তারা দুই তারকাকে তাদের একমাত্র সন্তান আব্রাম খান জয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে এক হয়ে পাশাপাশি থেকে যাওয়াটাকেই বুদ্ধিমানের হবে বলে মনে করেন। এদিকে শাকিব ভারতের হারাদারাবাদ থেকে গণমাধ্যমে জানিয়েছেন, তার সিদ্ধান্তে তিনি অটল থাকবেন। শাকিব খানের আইনজীবী শেখ সিরাজুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এবং জানিয়েছেন যে আগামী ৯০ দিনের মধ্যে যদি তাদের মত পরিবর্তন না হয় তাহলে ডিভোর্স কার্যকর হয়ে যাবে।
মিলার দশ বছরের প্রেম টেকেনি দশ মাস
সবখানে এখন আলোচিত কণ্ঠশিল্পী মিলার সংসার ভাঙার গল্প। চলতি বছরের ১২ মে বিয়ে করেছিলেন তিনি। বছর না পেরুতেই গুঞ্জন ছড়িয়েছিলো ভেঙে যাচ্ছে তার সংসার। গেল ১৮ সেপ্টেম্বর বেশ কিছু গণমাধ্যমে প্রকাশ হয় চূড়ান্ত বিচ্ছেদের পথেই যাচ্ছেন মিলা ও তার স্বামী বেসরকারি এয়ারলাইন্সের পাইলট পারভেজ সানজারি। তবে বিনোদনের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে সব খবরকে মিথ্যে বলে দাবি করেন তিনি। বলেন, ‘বললেই তো আর ডিভোর্স হয়ে যায় না। যারা বানোয়াট মনগড়া নিউজ ছড়াচ্ছেন তাদের বলব আল্লাহর ওয়াস্তে মনগড়া নিউজ করে বিভ্রান্তিতে ফেলবেন না।’
অবশেষে ৭ অক্টোবর শুক্রবার রাত ৩টার দিকে মিলা তার ফেসবুক ভেরিফায়েড ফ্যান পেজে ডিভোর্সের বিষয়টি নিজেই ঘোষণা দেন। তিনি লেখেন, ‘১০ বছর সম্পর্কের পর আমরা বিয়ে করি। যে লোক এত দীর্ঘ সম্পর্কের পরও আমার সঙ্গে এমন আচরণ করতে পারে, তার সঙ্গে আমি থাকতে পারব না। আর চুপ করে সহ্য করা উচিত না। নিজ হাতেই আমার ভাগ্য গড়তে হবে আর বের হয়ে আসতে হবে এই অসহনীয় পরিস্থিতি থেকে।
শুধু ডিভোর্সেই নয়, মিলার দাম্পত্য শেষ হবার গল্পটি গড়িয়েছে আদালত পর্যন্ত। শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের দায়ে মিলা তার স্বামীর নামে মামলা করেন। তার প্রাক্তন স্বামী এখন কারাগারে বন্দী।
বছর শুরু হয়েছিলো হাবিবের বিচ্ছেদে
না বললেই নয় একটি কথা। সেটি হলো চলতি বছরে বিয়ে-বিচ্ছেদে বেশি আলোচিত হয়েছে সংগীতাঙ্গন। বছরের শুরুতেই দারুণ ধাক্কা দিয়ে গেল হাবিবের সংসার ভাঙনের খবর। গেল বছরের শেষদিকে হঠাৎ গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল হার্টথ্রব সংগীতশিল্পী হাবিব ওয়াহিদের সাংসারিক টানাপোড়ন চলছে। হাবিবের একাধিক ঘনিষ্ঠজনও বলেছিলেন সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না এই দম্পতির। দু’জনে নাকি গেল বছরের শেষে আলাদাও থেকেছেন কিছুদিন।
সেই গুঞ্জন সত্যি হলো অবশেষে। দ্বিতীয় স্ত্রী রেহানের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে ডিভোর্স হয়ে গেল হাবিবের গত ২৬ জানুয়ারি। দুই পরিবারের সমঝোতায় ডিভোর্স হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাবিব।
শিল্পী জীবনের প্রথমে ২০০৩ সালে লুবিয়ানা নামের এক নারীর সঙ্গে প্রেম করে প্রথম বিয়ে করেন হাবিব ওয়াহিদ। কিছুদিন পর সেই সংসার ভেঙে যায়। এরপর মডেল-অভিনেত্রী মোনালিসার সঙ্গে গভীর সম্পর্কে জড়ান এই শিল্পী। ঘোষণা দেয়া হয়েছিলো তারা বিয়েও করবেন। কিন্তু কোনো এক কারণে সেই সম্পর্কে পরিণতি আসেনি। তার কিছুদিন পরই হুট করে ২০১১ সালের ১২ অক্টোবর পারিবারিক সিদ্ধান্তে চট্টগ্রামের মেয়ে রেহানকে বিয়ে করেন হাবিব। এই সংসারে হাবিবের আলিম ওয়াহিদ নামে এক ছেলে সন্তান রয়েছে।
মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির প্লেবয় খ্যাত এই তারকা বিচ্ছেদের পরপরই সম্পর্কে জড়ান মডেল-অভিনেত্রী তানজিন তিশার সঙ্গে। সেই সম্পর্ক যখন প্রকাশ্যে আসতে শুরু করলো সবখানে তখনই হাবিবের সাবেক স্ত্রী রেহান ফেসবুকে এক স্ট্যাটাস দিয়ে তোলপাড় করে দিলেন। তিনি দাবি করেন, তানজিন তিশার সঙ্গে পরকীয়ার জের ধরেই হাবিবের সঙ্গে ভেঙেছে তার সংসার। শুধু তাই নয়, রেহানের দাবি পিয়া বিপাশার সঙ্গেও সম্পর্ক ছিলো হাবিবের। এই স্ট্যাটাসের পর শুরু হয় রেহান-হাবিব ও তিশার ত্রিমুখী লড়াই। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত হাবিবের সঙ্গে এখন তিশার সম্পর্কটাও ভালো যাচ্ছে না। বর্তমানে সিঙ্গেলই রয়েছেন হাবিব।
ভক্তদের থমকে দিয়েছে তাহসান-মিথিলার ডিভোর্স
চলতি বছরে ডিভোর্স ঘোষণা নিয়ে ভক্তদের শোকের মিছিলে ভাসিয়েছেন শোবিজের আদর্শ জুটি বলে খ্যাত তাহসান-মিথিলা। অনেকদিন ধরেই শোনা যাচ্ছিলো তাদের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিলো না। তবে এই বিষয়ে প্রশ্ন এলে তারা দুজনই কৌশলে এড়িয়ে গেছেন। অবশেষে সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে গেল ২০ জুলাই (বৃহস্পতিবার) দুপুরে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে তাহসান আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের ডিভোর্সের বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছেন। দুজন যৌথভাবে এই স্ট্যাটাসটি দিয়েছেন।
সেখানে তাহসান-মিথিলা বলেন, ‘অতি দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে আমাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হচ্ছে। গত কয়েক মাস ধরেই আমরা বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলাম। আমরা জানি আমাদের এ সিদ্ধান্তে অনেকে ব্যথিত হবেন। সেজন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি।’
প্রসঙ্গত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালে কণ্ঠশিল্পী হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন মেধাবী ছাত্র তাহসান। সে সময় মিথিলার সঙ্গে পরিচয়। এরপর তাহসানের মনের ঘরে বাঁধা পড়েন মিথিলা। ২০০৬ সালের ৩ আগস্ট এক সুতোয় বাঁধা পড়ে তাহসান-মিথিলার জীবন। তাহসান-মিথিলার ঘরে রয়েছে একমাত্র কন্যাসন্তান আইরা তাহরিম খান। বর্তমানে মিথিলার কাছেই থাকে আইরা।
শোবিজের মানুষেরা মনে করছেন এমন একটি আদর্শ ও সুখী দম্পতির পতন তারকাদের সংসার জীবনের প্রতি সাধারণ মানুষের মধ্যে শ্রদ্ধাবোধে দারুণভাবে আঘাত করেছে।
ভেঙেছে নোভার ঘর
ঘর ভাঙনের সেই মিছিলে সর্বশেষ নাম নোভা আহমেদ। ছোট পর্দার এই অভিনেত্রী ভালোবেসেই বিয়ে করেছিলেন জনপ্রিয় নাট্য নির্মাতা রায়হান খানকে। ২০১১ সালের ১১ নভেম্বর বিয়ে করেছিলেন তারা। ২০১৩ সালের ২৮ জুলাই তাদের ঘরে জন্ম নেয় রাফাজ রায়হান। ছয় বছর সংসার করার পর গত ২৬ আগস্ট ঢাকা জজকোর্ট কাজী অফিসে তারা পরস্পরকে ডিভোর্স দেন। তা প্রকাশ হয় গত ৮ অক্টোবর।
জানা গেছে, এ ডিভোর্সে তাদের পারিবারিক সম্মতি ছিল। তবে কী কারণে তাদের সংসারে ভাঙন এল সে বিষয়ে স্পষ্ট কিছু জানা যায়নি।
ভালোবেসে বিয়ে করেও স্পর্শিয়ার ডিভোর্স
ঘর ভেঙেছে মডেল-অভিনেত্রী অর্চিতা স্পর্শিয়ার। তার স্বামী নির্মাতা রাফসান আহসানের সঙ্গে গত ২১ আগস্ট রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কাজী অফিসে ডিভোর্সের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়েছে। স্পর্শিয়ার সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদের খবরটি নিশ্চিত করেছেন রাফসান নিজেই। তিনি বলেন, ‘আমাদের দুজনের সিদ্ধান্তে ডিভোর্স হয়েছে। ডিভোর্সের সময় আমার এবং স্পর্শিয়ার কাছের বন্ধুরা উপস্থিত ছিলেন।’
ভালোবেসেই পারিবারিকভাবেই তো বিয়ে করেছিলেন? কিন্তু ডিভোর্স হলো কেন? এ প্রশ্নের জবাবে রাফসান বলেন, ‘আমাদের মধ্যে তৃতীয় ব্যক্তি ঢুকেছিল। সত্যি কথা বলতে চারপাশের কিছু মানুষের কারণে আসলে বিষয়টি জটিল হয়ে গেছে। যার কারণে আমরা ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
ধোঁয়াশায় শখ-নিলয়ের সংসার
আরেক জনপ্রিয় জুটি শখ-নিলয়ের ডিভোর্সের খবরও বেশ কষ্ট দিয়ে গেছে শোবিজের মানুষ ও দুই তারকার ভ্ক্তদের। চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি দীর্ঘদিনের প্রেমকে মধুর পরিণতি দিতে বিয়ে করেন নিলয়-শখ। পারিবারিক আয়োজনের বিয়েতে তাদের দেনমোহর নির্ধারিত ছিল ১০ লাখ টাকা। তারপর শখ তার পুরান ঢাকার বাসা ছেড়ে মিডিয়ায় নিয়মিত কাজ করবেন বলে নিলয়ের সঙ্গে উত্তরায় বাসা ভাড়া নিয়েছিলেন।
কিন্তু বিয়ের বছর না যেতেই শোবিজে গুঞ্জনের ডালপালা মেলেছে নিলয়-শখের বৈবাহিক সম্পর্কে ফাটল ধরেছে! বারবার সেই প্রসঙ্গটি এড়িয়ে গেলেও সম্প্রতি জানা গেল, বিচ্ছেদের পথেই এগিয়েছে এই সংসার। তবে সংসার ভাঙন নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি দুই তারকার কেউই। তাদের কাছের সূত্রে জানা গেছে, আপাতত আলাদাই থাকছেন নিলয় ও শখ। দেনমোহরের ঝামেলায় আটকে আছে ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত।
আড়ালেই ছিলো বাঁধনের বিচ্ছেদের খবর
ডিভোর্স হয়ে গেছে লাক্স তারকা আজমেরী হক বাঁধনের। কয়েক বছর ধরে বিষয়টি ছিলো গুজব-গুঞ্জন। তবে বাঁধনের স্বামী মাশরুর সিদ্দিকী সনেট গেল ২১ সেপ্টেম্বর দেয়া এক সাক্ষাতকারে জানান,
২০১৪ সালের ২৬ নভেম্বর আনুষ্ঠানকিভাবেই বিচ্ছেদ হয়েছে তাদের। বাঁধন নিজেই ঢাকা সিটি করপোরেশনের সালিশী পরিষদে বিচ্ছেদের জন্য আবেদন করেছিলেন।
আবেদনটি করেছিলেন ২০১৪ সালের আগস্টের ১০ তারিখ। বিচ্ছেদ চাওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে দাঁড়ানোর ৯০ দিন পার হয়ে গেলেও দুই পক্ষের কেউই আপস মীমাংসার জন্য হাজির হননি এবং কোনো আবেদন করেননি। স্বাভাবিক নিয়মেই বিচ্ছেদটি গৃহীত হয় ২৬ নভেম্বর। তবে ডিভোর্স সার্টিফিকেটে বিচ্ছেদের তারিখ হিসেবে ১০ আগস্টকেই গণ্য করা হয়েছে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে বাঁধনও ডিভোর্সের বিষয়টি কাছে স্বীকার করে নেন। তবে তিনি বলেন, ‘ডিভোর্সের আবেদন আমি করিনি। সনেটই ডিভোর্স চেয়ে আমাকে নোটিশ পাঠিয়েছে।’