চট্টগ্রামে হারের শঙ্কায় বাংলাদেশ

লেখক:
প্রকাশ: ৭ years ago

চট্টগ্রাম টেস্টে কী নিজেদের ইচ্ছেতেই হারতে বসেছে বাংলাদেশ? প্রশ্নটা জাগার কারণ অবশ্যই আছে। বাংলাদেশের করা ৫১৩ রানের জবাবে শ্রীলঙ্কা থেমেছে ২০০ রান বেশি করে, অথ্যাৎ ৭১৩ রান করে। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে যেভাবে উইকেট হারাচ্ছে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা, তাতে নিশ্চিত হারের পথেই যেন বাংলাদেশ। ৮১ রান তুলতেই তিন উইকেট হারিয়েছে মাহমুদউল্লাহর দল। এখনও লঙ্কানদের চেয়ে ১১৯ রান পিছিয়ে স্বাগতিকরা। লঙ্কান স্পিনাররা যেভাবে বল ঘোরাতে শুরু করেছে, তাতে হারের শঙ্কাই জেগে ওঠার কথা বাংলাদেশ শিবিরে।

২০০ রান পিছিয়ে থেকে ব্যাট করতে নেমে যেখানে চরম ধৈয্যের পরিচয় দেয়ার কথা, সেখানে উইকেট বিলিয়ে দেয়ার মিশনে নেমেছে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। নিজে নিজে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসতে হবে ওপেনার ইমরুল কায়েস। লক্ষ্মণ সান্দাকানের ডেলিভারি বুঝতে না পেরে উইকেটরক্ষক ডিকভেলার হাতে ক্যাচ দিয়েছেন তামিম। হেরাথের ঘূর্ণিতে কাবু হয়েছেন মুশফিক। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ৮১ রানেই ৩ উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ।

মুশফিকু রহীমের দুর্ভাগ্যজনক আউপের পরই চতুর্থ দিনের খেলার সমাপ্তি ঘোষণা করেন আম্পায়াররা। চতুর্থ দিন শেষে দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের রান ২৬.৫ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ৮১। উইকেটে রয়েছেন ১৮ রানে মুমিনুল হক। নতুন ব্যাটসম্যান উইকেটেই নামেননি। লঙ্কানদের চেয়ে এখনও ১১৯ রান পিছিয়ে বাংলাদেশ।

দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ইমরুল আর তামিমের সাবধানি সূচনাটা অনেকেরই হয়তো ভালো লেগে থাকবে। কিন্তু টেস্টে ধৈয্যের পরিচয় তো সহসা আউট হওয়ার মধ্যে নয় কিংবা বিপজ্জনক শট খেলার মধ্যেও নয়।

এই চিন্তাটা উদয় হচ্ছে না বলেই বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা বারবার আত্মাহুতি দিয়ে যাচ্ছেন। যেখানে দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের ট্র্যাক রেকর্ড খুব একটা ভালো নেই, সেখানে কেন বিপজ্জনক শট খেলে উইকেট হারিয়ে আসবে? ইমরুল কায়েস আর তামিম ইকবাল তো সে কাজই করলেন।

চট্টগ্রামের উইকেট যে পুরোপুরি ব্যাটিং বান্ধব সেটা তো লঙ্কান ব্যাটসম্যানরা প্রমাণ করেই ছেড়েছেন। সেখানে তামিম আর ইমরুলের সাবধানি শুরু এবং রান করাতে অবাক করার কিছুই নেই। কিন্তু হঠাৎই ধৈয্যহারা হয়ে পড়লেন ইমরুল কায়েস। দিলরুয়ান পেরেরার বলে স্কোয়ার লেগে শট খেলতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দিলেন ইমরুল। সেখানে দাঁড়ানো দিনেশ চান্ডিমালের হাতে অতি সহজেই তালুবন্দী হয়ে যায় বলটি। ১৯ রান করে ফিরে যান ইমরুল।

মুমিনুল হককে আরও ধৈয্যশীল এবং সাবধানি মনে হচ্ছিল তামিম ইকবালকে। এ দু’জনের জুটি চেষ্টা করছিল প্রাথমিক বিপর্যয়টা কাটিয়ে উঠতে। তবে লঙ্কান স্পিনারদের বলে বেশ সতর্কতার সঙ্গে খেলতেও হচ্ছিল বাংলাদেশকে। তবে, ইনিংসের ২২তম ওভারে লক্ষ্মণ সান্দাকানের অফ স্ট্যাম্পে থাকা বলটিকে পুশ করতে চেয়েছিলেন তামিম। অন্য যে কোনো স্পিনারের চেয়ে সান্দাকানের বলের গতি একটু বেশি এবং স্কিডও করে ভালো। ফলে, টাইমিংটা ঠিক মতো হলো না। ফল, ব্যাটের উপরের কানায় লেগে বল গিয়ে জমা পড়লো উইকেটরক্ষকের হাতে।

২৭তম ওভারের ৫ম বলে রঙ্গনা হেরাথের ঘূর্ণির কবলে পড়েন মুশফিকুর রহীম। হেরাথের বলটি একেবারে পুরোপুরি ডিফেন্সিভ খেলেছিলেন মুশফিকুর রহীম। কিন্তু ভাগ্য তার এতটাই খারাপ, বল ব্যাটে লেগে তার ক্যাডসের উপরের অংশে লেগে চলে যায় ক্রিজ ঘেঁষে সিলি পয়েন্টে দাঁড়ানো কুশল মেন্ডিসের হাতে। আম্পায়াররা প্রথমে সন্দিহান ছিলেন আউট হয়েছে কি না তা নিয়ে। তবে, থার্ড আম্পায়ারের সহযোগিতা নেয়ার পর দেখা গেলো আউট হয়ে গেলেন মুশফিক। এরপরই দিনের খেলার সমাপ্তি ঘোষণা করেন আম্পায়াররা।

এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ৫১৩ রান। মুমিনুল ১৭৬, মুশফিক ৯২ এবং মাহমুদউল্লাহ অপরাজিত ছিলেন ৮৩ রানে। জবাব দিতে নেমে শ্রীলঙ্কা ৯ উইকেটে ৭১৩ রানে ইনিংস ঘোষণা করে। ১৯৬ রান করেন কুশল মেন্ডিস, ১৭৩ রান করেন ধনঞ্জয়া ডি সিলভা এবং ১০৯ রান করেন রোশেনা সিলভা।