চট্টগ্রামের ৪৮ নদী রক্ষায় বিশেষ উদ্যোগ- তথ্য চেয়ে চিঠি ১১ ডিসিকে

:
: ৬ years ago

চট্টগ্রাম বিভাগের প্রধান নদীগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কর্ণফুলী, হালদা, সাঙ্গু, ডাকাতিয়া ও মেঘনা। তবে দখল-দূষণে প্রধান নদীগুলোর বর্তমান অবস্থা খুবই নাজুক। নদীতীর দখল করে প্রভাবশালীরা নিজেদের ইচ্ছামতো একের পর এক অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করছে। এতে ঐতিহ্যবাহী নদীগুলো হুমকির মুখে রয়েছে। অবৈধ স্থাপনার কারণে নষ্ট হচ্ছে চারপাশের পরিবেশ। চট্টগ্রাম বিভাগের নদ-নদী রক্ষায় এবার মাঠে নামছে বিভাগীয় কমিশন। এ লক্ষ্যে বিভাগের ৪৮ নদ-নদীর তথ্য চেয়ে ১১ জেলা প্রশাসককে (ডিসি) চিঠি দেওয়া হয়েছে।

নদ-নদীর বর্তমান অবস্থা, আয়তন, অবৈধ দখলদারদের সংখ্যা ও তাদের উচ্ছেদ, পানি দূষণসহ নানা বিষয় চিহ্নিত করতেই এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নদ-নদীর পাশাপাশি ডিসিদের কাছ থেকে বিভাগের সব খালের বর্তমান অবস্থাও জানতে চাওয়া হয়েছে। চিঠিতে সমস্যা সমাধানে করণীয় এবং প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ সম্পর্কেও মতামত জানাতে ডিসিদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে নদ-নদীর নাব্য রক্ষায় খননের প্রস্তাবনা দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। এর মাধ্যমে এবার অবৈধ দখলদারদের চিহ্নিত করার পাশাপাশি তাদের উচ্ছেদ করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন সংশ্নিষ্টরা।

চট্টগ্রাম  বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, কুমিল্লা, নোয়াখালী, ফেনী, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, লক্ষ্মীপুর ও চাঁদপুরের ডিসিদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে অবৈধ দখলদারদের চিহ্নিত ও তাদের উচ্ছেদকরণ, নদী-খালগুলোর নাব্য বজায় রাখতে স্বল্প এবং দীর্ঘমেয়াদি খননের প্রস্তাবনা পাঠাতে বলা হয়। চিঠির উত্তর পাওয়ার পর সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণসহ সার্বিক বিষয় জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনে পাঠানো হবে। চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে কুমিল্লার ১৬টি, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ১৪টি, চট্টগ্রামের পাঁচটি, খাগড়াছড়ির চারটি, রাঙামাটির তিনটি, বান্দরবানের তিনটি, নোয়াখালীর দুটি এবং কক্সবাজারের একটি নদ-নদীর সামগ্রিক তথ্য জানতে চাওয়া হয়।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের চিঠি পাওয়ার পর চট্টগ্রাম মহানগরীর ছয়টি ভূমি সার্কেল (সদর, চান্দগাঁও, বাকলিয়া, কাট্টলী, আগ্রাবাদ ও পতেঙ্গা) এবং জেলার মিরসরাই, ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, সীতাকুণ্ড, বোয়ালখালী, পটিয়া, চন্দনাইশ এবং বাঁশখালী উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্মকর্তাদের কাছে চিঠি পাঠানো হচ্ছে।

অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) মোমিনুর রশিদ আমিন বলেন, পুরো বিভাগের নদ-নদীর বর্তমান অবস্থা তুলে ধরতে ১১ জেলা প্রশাসককে চিঠি দেওয়া হয়েছে। নদ-নদী ও খালের অবৈধ দখলদারদের চিহ্নিত করতে ও তাদের উচ্ছেদের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তথ্য-উপাত্ত পাওয়ার পর তা জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনে পাঠানো হবে। চলতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহে এ বিষয়ে বিভাগের সব জেলা প্রশাসকসহ সংশ্নিষ্টদের নিয়ে বৈঠক হবে। বৈঠকে নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যানও থাকবেন। এবার অবৈধ দখলদারদের চিহ্নিত করার পাশাপাশি তাদের উচ্ছেদও করা হবে। দখলদাররা যতই ক্ষমতাবান হোক না কেন, কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।

চট্টগ্রামের ডিসি ইলিয়াস হোসেন বলেন, চিঠি পাওয়ার পর সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তাদেরও চিঠি দেওয়া হচ্ছে। তাদের কাছ থেকে সামগ্রিক তথ্য পাওয়ার পর তা পুনরায় কমিশনার কার্যালয়ে পাঠানো হবে। আমরা চাই নদ-নদী দখলদারমুক্ত হোক। এ জন্য সবাইকে একযোগে এগিয়ে আসতে হবে।

চান্দগাঁও ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার মো. সাব্বির রহমান সানি বলেন, চিঠির উত্তর দিতে সংশ্নিষ্টরা মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করেছেন।

চট্টগ্রাম মহানগর ভূমি সার্কেল অফিসের কর্মকর্তারা জানান, ২০১৫ সালে বিএস খতিয়ান অনুযায়ী কর্ণফুলী নদীর সীমানা নির্ধারণ ও অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু তিন বছরেও অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ কারণে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মেনে যথাসময়ে কর্ণফুলী নদীতে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা যায়নি বলে দিন দিন অবৈধ স্থাপনার সংখ্যা বাড়ছে।