ঘোষণাপত্র ও কর্মসূচি চূড়ান্ত হওয়ার পরই আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ করবে চার দলের সমন্বয়ে গঠিত রাজনৈতিক জোট ‘যুক্তফ্রন্ট’। জোটের উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জোটের ঘোষণাপত্র তৈরি করতে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটি ঘোষণাপত্রের বিভিন্ন দিক নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করছেন। পাশাপাশি কিছু কর্মসূচি প্রণয়নের কাজও চলছে। একই সঙ্গে তৃণমূল পর্যায়ে জোটের কমিটি গঠন করতে জেলায় জেলায় নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।
যুক্তফ্রন্ট চেয়ারম্যান ও প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, আমাদের জোটের প্রতিশ্রুতি ও কর্মসূচি প্রণয়নের জন্য কমিটি কাজ করছে। এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ করতে পারব। একই কথা জানিয়েছেন জোটের অন্যতম উদ্যোক্তা ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব। তিনি বলেন, জোটের ঘোষণাপত্র ও কর্মসূচি প্রণয়ন হওয়ার পরই আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ। জোটের অন্যতম নেতা ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, কর্মসূচি প্রণয়নের কাজ চলছে, এখনও চূড়ান্ত হয়নি। যত দ্রুত সম্ভব আনুষ্ঠানিকভাবে কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। বিকল্প ধারা বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি. চৌধুরী বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করার আগে ঘোষণাপত্র এবং কর্মসূচি প্রণয়নের কাজ চলছে। একটি কমিটি করে দেয়া হয়েছে, যারা কর্মসূচিগুলো নির্ধারণ করছেন। এগুলো চূড়ান্ত হলেই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসবে।
জোটের উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, বিভিন্ন জেলায় যুক্তফ্রন্টের কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি জেলায় কমিটি গঠনের কাজ চলছে। তৃণমূল পর্যায়ে জোটভুক্ত দলের নেতাকর্মীদের বলা হয়েছে, জোটভুক্ত দলের নেতাদের নিয়ে যুক্তফ্রন্টের কমিটি গঠন করতে। অন্তত ৩০ থেকে ৩৫ জেলায় যুক্তফ্রন্টের কমিটি এক সঙ্গে ঘোষণা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন জোট নেতারা। জোটের নেতারা আরও জানিয়েছেন, যে জেলায় যে দলের সাংগঠনিক অবস্থান তুলনামূলক ভালো, সে দলের নেতাদের নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্টের কমিটি গঠিত হবে। জানা গেছে, ইতোমধ্যে রাজশাহী, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, দিনাজপুর জেলার বিকল্প ধারা বাংলাদেশের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে যুক্তফ্রন্টের কমিটি গঠন করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এসব জেলায় অন্য দলের নেতারাও যুক্তফ্রন্ট কমিটিতে অংশগ্রহণ করবেন। নোয়াখালীতে বিকল্প ধারা বাংলাদেশের মহাসচিবের নির্বাচনী এলাকায় বেশ কিছু বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
জোট উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে জানা গেছে, জোটের ঘোষণাপত্রে বেশ কয়েকটি মূলনীতি থাকবে যেমন, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা, আইনের শাসন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অনুযায়ী রাষ্ট্র বিনির্মাণ, দুর্নীতিমুক্ত ন্যায়বিচার, শোষণমুক্ত মানবিক সমাজ, আধুনিক প্রতিরক্ষা বাহিনী, কর্মসংস্থান উপযোগী উন্নয়ন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও জাতীয় ঐক্য প্রভৃতি। জনগণের মৌলিক ও মানবিক অধিকার, গণতন্ত্র, ভোটাধিকার, ন্যায়বিচার, সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য নির্বাচন, মিছিল-সমাবেশের অবাধ অধিকার, ঘুষ-দুর্নীতি-ব্যাংকসহ সমস্ত লুটপাট বন্ধ, হত্যা-গুম-খুন-অপহরণ-ধর্ষণ-শিশু ধর্ষণ-দখলবাজি বন্ধ, বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান, ছিন্নমূল গরীব মানুষের মাঝে রেশন ব্যবস্থা, সকলের জন্য চিকিৎসা, ইউনিয়ন পর্যায়ে হাসপাতাল, যানজটমুক্ত গণপরিবহন, স্নাতকোত্তর পর্যন্ত বিনামূল্যে শিক্ষা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল, জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল গঠন, প্রদেশ ও ফেডারেল পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থা, স্বশাসিত স্থানীয় সরকার, অসাম্প্রদায়িক নীতিমালা ও ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে শত্রুতা নয়’ পররাষ্ট্রনীতি ইত্যাদি জোটের দাবি হিসেবে থাকতে পারে।
বিগত বছরের ৪ ডিসেম্বর জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রবের বাসায় এক বৈঠকে ‘যুক্তফ্রন্ট’ নামে নতুন জোট গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। বিকল্প ধারা বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে জোটের চেয়ারম্যান করার সিদ্ধান্ত হয় ওই সভায়। জোটভুক্ত হয় আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডি, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ও মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্য। জোটের কাঠামো ও কর্মসূচি ঠিক করার পর সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জোটের আত্মপ্রকাশ ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত হয়। এরপর থেকেই দফায় দফায় বৈঠক চললেও আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশের জন্য আরও সময় প্রয়োজন বলে দাবি জোট উদ্যোক্তাদের।