বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের উদ্যোগে নগর ও উপজেলা মিলিয়ে ২৮৬টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত করা হয়েছে। এছাড়া চিকিৎসা সম্পর্কিত যাবতীয় বিষয় তদারকি করতে খোলা হয়েছে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ (নম্বর ৮৮০৩১৬৩৪৮৪৩)।
বুধবার (২৬ মে) সকাল ১০টার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি।
তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবিলায় জেলার সিভিল সার্জন কার্যালয়ের উদ্যোগে ২৮৬টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রাম নগরে সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে বেশকিছু সংখ্যক মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। এখনো পর্যন্ত আবহাওয়া কার্যালয় সূত্রে জানতে পেরেছি, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ভারতের উড়িষ্যা-পশ্চিমবঙ্গে আঘাত হানতে পারে।
তিনি আরও বলেন, ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশে সরাসরি আঘাত না হানলেও এর প্রভাব মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। বিশেষ করে দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপ ও উপকূলবর্তী সীতাকুণ্ড, বাঁশখালী, আনোয়ারা ও মিরসরাই এলাকায় এর প্রভাব পড়তে পারে। তাই এসব উপজেলাসহ সিভিল সার্জন কার্যালয়ের আওতাধীন সব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
এদিকে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বিভিন্ন উপজেলায় পাঁচশ’র অধিক আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রত্যেক উপজেলায় গবাদি পশুর খাদ্যের জন্য এক লাখ টাকা করে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়া মাইকিংসহ সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানোর জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক বলেন, বন্দরে ইতোমধ্যে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় প্রস্তুতি সভা করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সবাইকে যার যার দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। বন্দরের উদ্যোগে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। যখনই আবহাওয়া অফিস সংকেত চার দেখাতে বলবে, তখনই পুরোদমে কাজ শুরু হবে।
বুধবার সকালে সকালে ইয়াস সম্পর্কিত ১৫ নম্বর বিশেষ বুলেটিনে আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ইয়াস আজ ভোররাত ৩টায় (২৬ মে) চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৫১৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৫০৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকট সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৮৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া আকারে ১৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে।
ইয়াস আরও উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে আজ দুপুর নাগাদ উত্তর উড়িষ্যা-পশ্চিমবঙ্গ উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমের সময় খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, ভোলা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর ও চট্টগ্রাম জেলাগুলোয় এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোয় ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টিসহ ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
ইয়াস ও পূর্ণিমার প্রভাবে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, ভোলা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর ও চট্টগ্রাম জেলাগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩ থেকে ৬ ফুট অধিক উচ্চতার জোয়ারে প্লাবিত হতে পারে।
উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে বলেও বিশেষ বুলেটিনে উল্লেখ করা হয়েছে।