ঘুষ নেওয়ার সময় কর কর্মকর্তা আটক

লেখক:
প্রকাশ: ১ বছর আগে

রাজশাহীতে ঘুষ গ্রহণের সময় হাতেনাতে আয়কর বিভাগের এক কর্মকর্তাকে আটক করেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বিভাগীয় ও সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের কর্মকর্তারা। এসময় ওই কর্মকর্তার টেবিলের ড্রয়ার থেকে ১০ লাখ টাকা জব্দ করা হয়েছে। এদিকে অভিযান চলাকালে দুদক কর্মকর্তা ও আয়করের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে হাতাহাতি ও ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে।

মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজশাহী কর ভবনে অভিযান চালায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বিভাগীয় ও সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের কর্মকর্তারা।

 

আটক কর্মকর্তার নাম মহিবুল ইসলাম ভুঁইয়া। তিনি রাজশাহী কর কমিশনারের কার্যালয়ের সার্কেল-১৩ (বৈতনিক) এর উপ কর কমিশনার। দুপুর আড়াইটার দিকে পুলিশের সহায়তায় দুদক কর্মকর্তারা মহিবুল ইসলামকে আটক করে নিয়ে যান। মহিবুল ইসলামকে যখন বের করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তখন তাঁর গলায় আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে।

আয়কর অফিসের এক কর্মকর্তার দাবি, অভিযান চালানোর সময় মহিবুল ইসলামকে তার দপ্তরের দরজা বন্ধ করে মারধর করা হচ্ছিল। চিৎকার শুনে তারা গিয়ে জানালা দিয়ে এ দৃশ্য দেখেন। এ সময় অফিসের সবাই মনে করেন, বাইরে থেকে সেবা নিতে আসা লোকজন তাকে মারধর করছেন। কারণ, দুদক কর্মকর্তারা সবাই সাধারণ পোশাকেই ছিলেন। তাই দরজা ভেঙে কর কর্মকর্তারা ভেতরে ঢোকেন। তারপর কর্মকর্তারা ‘দুদক’ লেখা জ্যাকেট পরলে তাঁদের পরিচয় নিশ্চিত হন। এরমধ্যেই রাজপাড়া-থানা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে চলে আসে।

অভিযান শেষে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. মনিরুজ্জামান জানান, রাজশাহীর মাদারল্যান্ড ইনফার্টিলিটি সেন্টার ও হাসপাতালের মালিক ডা. ফাতেমা সিদ্দিকা দুদকের প্রধান কার্যালয়ে অভিযোগ করেন। অভিযোগে তিনি কর কর্মকর্তা মহিবুল ইসলাম তার কাছে ঘুষ দাবি করছেন বলে জানান। চাহিদামতো ঘুষ না দিলে তিনি (মহিবুল ইসলাম) মোটা অংকের কর আরোপ করার ভয় দেখাচ্ছেন বলেও অভিযোগে জানানো হয়।

 

তিনি আরও বলেন, ডা. ফাতেমা দুদককে জানান, তাঁর কাছে ৬০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করা হয়েছিল। শেষপর্যন্ত ৫০ লাখ টাকা দেওয়ার কথা হয়েছে। প্রথম কিস্তিতে মঙ্গলবার ১০ লাখ টাকা দেওয়ার কথা ছিলো। কথা অনুযায়ী আজ সকালে ফাতেমা সিদ্দিকা তাঁর স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে মহিবুল ইসলামের দপ্তরে যান এবং ঘুষের ১০ লাখ টাকা দেন। টাকা নিয়ে মহিবুল ইসলাম ড্রয়ারে রাখেন। তখন দুদক কর্মকর্তারা সেখানে গিয়ে টাকা উদ্ধার করেন। এ ঘটনায় মহিবুল ইসলামের বিরুদ্ধে দুদক আইনে মামলা করা হবে।

আয়কর কর্মকর্তা মহিবুল ইসলামকে মারধরের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দুদকের এই কর্মকর্তা বলেন, আমরা কাউকে মারধর করিনি। আয়কর অফিসের কর্মীরাই ঘরে ঢুকে আমাদের ওপর আক্রমণ করেন। তখন আমরা দরজা বন্ধ করে দেই। তারপর তারা দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে আক্রমণ করেন। মারামারি নয়, ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটেছে। এতে মহিবুল ইসলামের গলায় একটা আঁচড় লেগেছে। ধস্তাধস্তির কারণে আমাদেরও তিনজন কর্মকর্তা আহত হয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কর কমিশনার শফিকুল ইসলাম আকন্দ সাংবাদিকদের বলেছেন, অভিযানের বিষয়টি দুদকের রাজশাহী বিভাগের পরিচালক তাঁকে জানিয়েছিলেন এবং সহযোগিতা চেয়েছিলেন। তিনি সব ধরনের সহযোগিতার কথা জানিয়ে দুদক কর্মকর্তাদের তাদের দায়িত্ব পালন করতে বলেন। এরপর অফিসে কী হয়েছে তা তিনি জানেন না বলেও দাবি করেন।

মহিবুল ইসলামকে আটক করে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি শুনেছেন জানিয়ে শফিকুল ইসলাম আকন্দ বলেন, দুদক একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। তারা তাদের দায়িত্ব পালন করেছেন। এটা নিয়ে কোনো আপত্তি নেই। এ বিষয়টি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে জানানো হয়েছে। বোর্ড থেকে এখন যে ধরনের নির্দেশনা আসবে সে অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।