ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় আর্জেন্টিনার

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago

ক্রোয়েশিয়ার কাছে গ্রুপ পর্বের দ্বিতীয় ম্যাচে বিধ্বস্ত হওয়ার পর গুঞ্জন উঠেছিল- হোর্হে সাম্পাওলির অধীনে আর খেলবেন না লিওনেল মেসিরা। সেই গুঞ্জনের ডালপালা আরও গজায়, যখন আর্জেন্টিনার তারকা খেলোয়াড় সার্জিও আগুয়েরোর মুখ দিয়ে কোচের প্রতি বিষোদ্গার বের হয়- ‘উনার যা খুশি বলুক।’ তাতেই লাগে খটকা। যেন কেঁচো খুঁড়তে বেরিয়ে এলো সাপ। রঙবেরঙের হেডলাইন দিয়ে গণমাধ্যমগুলো ফলাও করে ছাপায় আলবেসেলেস্তিদের ঘরে আগুন লাগার খবর।

বাদ যায়নি আর্জেন্টিনার নামিদামি সংবাদ-মাধ্যমগুলোও। তারাও এর পিছু নেয়। এরই মাঝে দেশটির ফুটবল ফেডারেশনের বিবৃতি। যার সারমর্ম অনেকটা এমন, ‘এ খবর পুরোপুরি মিথ্যা। তারা সাম্পাওলিকে সরানোর কোনো কথাই বলেনি। দলে কোনো বিভেদ নেই।’ পাশাপাশি আরেকটি খবরও ঘুরতে থাকে। রাশিয়া বিশ্বকাপের পর নাকি মেসির নেতৃত্বে দলের বেশ কয়েকজন ফুটবলার অবসর নেবেন। যাদের মধ্যে আছেন আগুয়েরো, মার্কো রোহো, এভার বানেগা, অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়া, হাভিয়ের মাশ্চেরানোরা ও গঞ্জালো হিগুয়েইনের মতো প্রথম সারির তারকারা। এতেও কান দেয়নি আর্জেন্টাইন ফেডারেশন।

অবসরের খবর রীতিমতো তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেয় দু’বারের বিশ্বকাপজয়ী দলটির হর্তা-কর্তারা। তবে আকাশি-সাদাদের ফেডারেশন যতই বড় গলায় কথা বলুক না কেন, গত শুক্রবারের ট্রেনিং  দেখার পর অনেকের মনে হবে কিছু একটা আসলেই হয়েছে। বরাবরের মতো মস্কোর ব্রৎনসি বেস ক্যাম্পে দলবল নিয়ে হাজির হন সাম্পাওলি। প্রথম পলকে দেখা যায় এক পাশে নাহুয়েল গুজম্যান বলের ওপর বসে আছেন। তার সামনে আরেক গোলকিপার ফ্রাঙ্কো আরমানি। দু’জন কী যেন ভাবছেন। এরপর দেখা গেল দলবেঁধে হাঁটছেন হিগুয়েইন, বানেগা, রোহো, ওটামেন্ডিরা। বোঝাই যাচ্ছে চোখেমুখে রাজ্যের চাপ এখন ভর করে আছে। খনিকক্ষণ বাদে শুরু হয়ে গেল অনুশীলন। যে যার মতো করে দৌড়াচ্ছেন। কেউ বল নিয়ে, আবার কেউ বল ছাড়। ঠিক এমন সময় ক্যামেরায় ফ্রেমে ধরা পড়ল সাম্পাওলিকে। বল পায়ে মাথাটা নিচু করে কচ্ছপগতিতে হাঁটছেন তিনি। পাশে শিষ্যরা কে কী করছেন সেদিকে নেই কোনো নজর। বোধহয় আগের রাতে ঘুমটা একেবারে হয়নি।

কী করে হবে। লুকা মডরিচ-ইভান রাকিটিচরা আর্জেন্টাইন কোচকে ঘুমোতে দিলে তো। টেনিং সেশন বিরতি। সবাই গোল হয়ে জড়ো হলেন। কোচের খবর নেই। নিজেদের মধ্যে চলছে শলা-পরামর্শ। একবারে শেষ দিকে এলেন সাম্পাওলি। ছাত্রদের কিছু একটা বলে হাওয়া। ক্রোয়াটদের কাছে হারার পরদিন আর্জেন্টিনা দলের অনুশীলন কেমন চলছিল বর্ণনা দিতে গিয়ে আসল কথাটাই বলা হলো না। সেদিন অনুশীলনের প্রথম সেনশটায় ছিলেন না মেসি-আগুয়েরা। অবশ্য পরে গতকাল যোগ দিয়েছেন লিও। তাতেই যে জেগে উঠেছে মস্কোর বেস ক্যাম্প। মেসির পা পড়ার পর আগের চেয়ে খানিকটা প্রাণোচ্ছল মনে হচ্ছে সাম্পাওলির স্কোয়াড। যেন মরা নদীতে জোয়ার এলো। নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে দলটির শুভাকাঙ্ক্ষীরাও। আর এক ম্যাচ। দিতে হবে মরণ কামড়। যে করেই হোক উড়াতে হবে জয়ের কেতন। এমন লক্ষ্য নিয়েই হয়তো কথিত বিভেদ ভুলে, নব উদ্যোমে মেসিদের এই যাত্রা। তবে এই নতুন যাত্রায় দেখা যায়নি বিতর্কিত গোলরক্ষর উইলি কাবায়েরোকে। নতুন কোনো গন্ধ পাচ্ছেন? পেতেও পারেন। হ্যাঁ, নাইজেরিয়ার বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে হয়তো কয়েকটা পরিবর্তন আসবে। সেই পরিবর্তন আনতে গিয়ে সবার আগে কাবায়েরোকেই ছেঁটে ফেলতে পারেন সাম্পাওলি। তেমন একটা আভাস দিয়েছে আর্জেন্টিনার স্থানীয় কয়েকটা গণমাধ্যমও।

তাদের আভাসের সঙ্গে মিলে গেছে আরেকটা পট। গতকাল পর্যন্ত আর্জেন্টিনার ট্রেনিং ক্যাম্পে কেবল গুজম্যান আর আরমানিকেই দেখা যায়। এই দু’জনের মধ্যে সুপার ঈগলসদের বিপক্ষে হয়তো আরমানিকেই বাছবেন আর্জেন্টিনার কোচ। অনুশীলনেও তিনি ছিলেন ফুরফুরে। মনে হচ্ছে এরই মধ্যে তার কানে কানে কিছু বলেও দিয়েছেন সাম্পাওলি। এমন কিছু হলে কিছুটা চিন্তা ঝেড়ে ফেলতেই পারেন আর্জেন্টিনার সমর্থকরা। অন্তত কাবায়েরোর মতো হাস্যকর ভুলে পা দেবেন না আরমানি। তার অতীত যে সেই কথাই বলছে। ২০১৭-১৮ মৌসুমে রিভার প্লেটের হয়ে সব প্রতিযোগিতা মিলে ১৭ ম্যাচ খেলেছেন। যেখানে নয় ম্যাচেই কোনো গোল খায়নি তার দল। মঙ্গলবার নাইজেরিয়ার বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচ খেলতে নামবে আর্জেন্টিনা। নকআউট পর্বের টিকিট বগলদাবা করতে হলে ম্যাচটি কেবল জিতলেই হবে না, বড় ব্যবধানও গড়তে হবে। না হলে একই দিন ক্রোয়েশিয়াকে যদি হারিয়ে দেয় আইসল্যান্ড, তাহলে আর্জেন্টিনাকে বসতে হবে গোল ব্যবধানের হিসাব-নিকাশ নিয়ে। এই মুহূর্তে আর্জেন্টিনার গোল ব্যবধান (-৩)। অন্যদিকে আইসল্যান্ডের গোল ব্যবধান (-২)। তবে আইসল্যান্ড যদি ক্রোয়াটদের কাছে ধরা খায়, আর আর্জেন্টিনা নাইজেরিয়াকে কোনো মতেও হারাতে পারে, তবে যোগ-বিয়োগ ছাড়াই মেসিরা চলে যাবে নকআউট পর্বে।