ঘুমের মধ্যে কেঁদে ওঠেন মিন্নি, চিৎকার করেন নিজের অজান্তেই

:
: ৫ years ago

অনলাইন ডেস্ক : অনেক জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে দুইশর্তে হাইকোর্টের রায়ে জামিনে মুক্ত পেয়েছেন নিহত রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি। মামলার প্রধান সাক্ষী এবং অন্যতম আসামি মিন্নি এখন বাবার বাড়িতে অবস্থান করছেন। পুলিশি হেফাজতে নির্যাতন ও দীর্ঘদিন কারাভোগের কারণে মিন্নি স্বভাবতই শারীরিক-মানসিকভাবে অসুস্থ। খুন নিজের চোখে দেখে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত, ঘুমের মধ্যে কেঁদে ওঠেন, চিৎকার করেন নিজের অজান্তেই। জানাচ্ছে মিন্নির পরিবার।

তার পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, মিন্নির উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। কিন্তু মামলার পরবর্তী তারিখ আসন্ন বলে তাকে ভালো কোনো হাসপাতালে ভর্তি করা যাচ্ছে না। বাড়িতেই চিকিৎসা চলছে। মিন্নি মা-বাবা ছাড়া আর কারো সঙ্গে কথা বলছে না। কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে কোনো উত্তর দেয় না। পুলিশ নির্যাতন করেছে কিনা জিজ্ঞেস করলে চলে কান্নাকাটি।

সারাক্ষণ চুপচাপ থাকছেন, একাকিত্ব ভর করেছে মনের মধ্যে। তবে মিন্নির এমন জীবনযাপনে চিন্তিত স্বজনরা। উদ্বিগ্ন তার বাবা-মা।

মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর বলেন, পুলিশ হেফাজতে নির্মম নির্যাতন চালানো হয়েছে মেয়ের ওপর। দুই হাঁটুতে কালো দাগ রয়েছে মিন্নির। হাঁটুর ব্যথায় হাঁটতে পারে না সে। চঞ্চল ও সদালাপী মিন্নি এখন কারও সঙ্গে কথা বলে না। খেতে চায় না কিছুই। নিজের ঘরে সবসময় চুপচাপ থাকে সে। কখনো কখনো কাঁদে মিন্নি। যে ঘরে মিন্নি থাকে সেই ঘরে রিফাতের সঙ্গে তার অনেক স্মৃতি। এসব স্মৃতি মিন্নিকে আপ্লুত করে। ঘুমের মধ্যেও কেঁদে ওঠে, চিৎকার করে মিন্নি।

মোজাম্মেল হোসেন কিশোর আরও বলেন, মিন্নি ভীষণ অসুস্থ। তার উন্নত চিকিৎসা দরকার। কিন্তু করাতে পারছি না। কদিন পর রিফাত হত্যা মামলার ধার্য তারিখ রয়েছে। ওই তারিখে মিন্নিকে আদালতে হাজির হতে হবে। ওই তারিখের পরে মিন্নির উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করব।

মিন্নির অসুস্থতার বিষয়ে জানতে তার আইনজীবী মাহবুবুল বারী আসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, মিন্নির অসুস্থতার বিষয়টি আমি জানি। এ বিষয়ে উচ্চ আদালতে মিন্নির আইনজীবী জেড আই খান পান্নার সঙ্গে কথা বলেছি আমি। মিন্নির চিকিৎসার জন্য আমি মিন্নির বাবাকে পারামর্শ দিয়েছি। আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর রিফাত হত্যা মামলার ধার্য তারিখ রয়েছে। তার আগেই মিন্নিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় কিংবা অন্যত্র নেওয়া যাবে। কারণ ধার্য তারিখে মিন্নিকে আদালতে উপস্থিত থাকতে হবে।

তিনি আবারও বলেন, আমার মেয়ে ছিল সাক্ষী। একটি প্রভাবশালী মহলের কারণে তাকে আসামি করা হয়েছে। আমার মেয়ে তার স্বামীকে বাঁচানোর জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেদিন সন্ত্রাসীদের সামনে পড়েছে। অথচ তাকে আসামি করে দীর্ঘদিন জেলে আটকে রাখা হলো।

গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা না বলা ও বাবার জিম্মায় থাকার শর্তে জামিন পেয়েছেন মিন্নি। জেলখানা থেকে বেরিয়ে আসার সময় মিন্নিকে সেই শর্তের কথা মনে করিয়ে দেন তার আইনজীবী মাহবুবুল বারী আসলাম। এর পর থেকে চুপ হয়ে যান মিন্নি। বাসায় ফিরে বাবা-মা ছাড়া কারও সঙ্গেই কথা বলছেন না তিনি।

বরগুনা সরকারি কলেজগেটের সামনে ২৬ জুন সকালে নয়ন বন্ড, রিফাত ফরাজী ও তার সঙ্গীরা রিফাত শরীফকে কুপিয়ে জখম করে। বিকালে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান তিনি। পরদিন রিফাতের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনকে আসামি করে মামলা করেন।

জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে ১৬ জুলাই মিন্নিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন আদালত ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করলে তা শেষ হওয়ার আগেই ১৯ জুলাই তদন্ত কর্মকর্তা মিন্নিকে বরগুনা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে হাজির করেন।

মিন্নি হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। ২১ জুলাই বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মিন্নির আইনজীবী জামিনের আবেদন করলে তা নামঞ্জুর করেন আদালত। ২৩ জুলাই তার আইনজীবী বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে জামিনের আবেদন করেন। ৩০ জুলাই তা নামঞ্জুর হলে ওই আদেশের বিরুদ্ধে ৬ আগস্ট হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করেন আইনজীবী। ৮ আগস্ট হাইকোর্ট রুল দিতে চাইলে মিন্নির আইনজীবী আবেদন প্রত্যাহার করে নেন। পরে হাইকোর্টের অন্য বেঞ্চে আবেদন করেন আইনজীবী।

এর আগে গত ২৯ আগস্ট মিন্নিকে কেন জামিন দেয়া হবে না- মর্মে জারি করা রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে হাইকোর্টের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ দুই শর্ত দিয়ে মিন্নির অন্তর্বর্তী স্থায়ী জামিন মঞ্জুর করে রায় দেন।