গ্যাস–সংকটে নগরজুড়ে দুর্ভোগ

:
: ৬ years ago

ঢাকার মাদারটেকের আদর্শপাড়ার একটি পরিবার চার বার্নারের গ্যাসের চুলার জন্য মাসে ১ হাজার ৬০০ টাকা বিল দেয়। বাড়ির গৃহিণী হোসনে আরা বেগম দুঃখ করে বলেন, পবিত্র রমজান শুরুর পর এক দিনও বাসায় ইফতারি তৈরি করতে পারেননি। কারণ, চুলা জ্বলে না। বাইরে থেকে ইফতারি আনতে হয়। সাহ্‌রি তৈরিতে ভোগান্তি হচ্ছে।

এই চিত্র ঢাকার অনেক এলাকার। রমজান মাসজুড়ে, এমনকি তারপরেও এই অবস্থা অব্যাহত থাকবে। কারণ, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় ঢাকাসহ তিতাস গ্যাসের বিতরণ এলাকায় ঘাটতি প্রায় ৭০ কোটি (৭০০ মিলিয়ন) ঘনফুট। এই ঘাটতি পূরণের জন্য ভরসা করা হয়েছিল আমদানি করা এলএনজির ওপর। কিন্তু এলএনজি সরবরাহ বিলম্বিত হয়ে এখন জুলাইতে গেছে। তাই আরও মাস দেড়েক সংকট চলবে।

তিতাসের পরিচালক (উৎপাদন) এইচ এম আলী আশরাফ জানিয়েছেন, রমজান মাসে বিদ্যুৎ–ব্যবস্থা নিরবচ্ছিন্ন রাখতে বিভিন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রে বাড়তি গ্যাস দিতে হচ্ছে। যে গ্যাস ঢাকার আবাসিক গ্রাহকদের দেওয়া যেত। ঢাকার গ্যাস–সংকট কমাতে এখন সম্পূর্ণ এলএনজির ওপর নির্ভর করা ছাড়া কোনো উপায় নেই।

গত দুদিন নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গ্যাস–সংকটে বাসিন্দারা চরম ভোগান্তির মধ্যে রয়েছেন। ইফতারের ও সাহ্‌রির খাবার তৈরি করতে কেরোসিনের মতো বিকল্প জ্বালানি, ইনডাকশন, রাইসকুকার ইত্যাদি ব্যবহার করা হচ্ছে। এক একটি পরিবারে এ বাবদ মাসে খরচ হচ্ছে আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা।

তাঁতীবাজার গোয়ালনগর এলাকার একজন বাড়িওয়ালা রকিবুল ইসলাম  বলেন, ‘অন্য কোনো বছর রমজানে এত সংকট দেখিনি।
এখন এলাকার প্রায় প্রত্যেকের ঘরে কেরোসিনের চুলা কেনা হয়েছে। মাসে বাড়তি খরচ দাঁড়াচ্ছে ২ হাজার ৬০০ টাকা।’

এ ছাড়া এলপি গ্যাস ব্যবহার করছেন অনেকে। রাজার দেউড়ির বাসিন্দা মোকাররম হোসেন বলেন, রমজানে গ্যাস–সংকট বেড়ে যাওয়ায় কেরোসিনের চুলার দাম বেড়ে গেছে। মহল্লায় প্রতি লিটার কেরোসিনে পাঁচ টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে।

রান্না নিয়ে চরম ভোগান্তির কথা জানিয়েছেন মধ্য ও পূর্ব ঢাকার বাসিন্দারাও। দিলকুশা ও মিরপুরে তিতাসের দুটি জরুরি নিয়ন্ত্রণকক্ষে গত এক সপ্তাহে প্রায় ২০০টি অভিযোগ জমা পড়েছে, যেগুলোয় গ্যাস–সংকটের কথা রয়েছে। শান্তিনগর বাজার রোডের ১৫১ নম্বর বাড়ির বাসিন্দা আবদুর রহমান বলেন, আগে শীতকালে গ্যাসের ভোগান্তি ছিল। এখন গরমকালে রমজান মাসে গ্যাস না থাকায় খুবই সমস্যা হচ্ছে। কবি জসীমউদ্‌দীন রোডের ৩/১ নম্বর বাড়ি থেকে অভিযোগ করা হয়, রমজান শুরুর পর বেশির ভাগ সময় গ্যাস থাকছে না। উত্তর যাত্রাবাড়ীর একাধিক বাড়ি থেকে অভিযোগ করা হয়, সারা দিন তো গ্যাস থাকেই না, এখন রাতেও চুলা জ্বলে না।

মোহাম্মদপুর তাজমহল রোড এলাকায় গ্যাসের তীব্র সংকটের কথা জানান এলাকাবাসী। ২৬/২৩ নম্বর বাড়ির গৃহিণী কাউসার পারভীন বলেন, ইফতারি তৈরি করার সময় কখনোই চুলায় আঁচ থাকে না।

পুরান ঢাকার লালবাগ, সোয়ারীঘাট, কামরাঙ্গীরচর, পোস্তগোলা, যাত্রাবাড়ী ও মালিবাগ, খিলগাঁও সি ব্লক, মিরপুরের পল্লবী, ইব্রাহিমপুর, কাফরুলসহ অনেক এলাকায় গ্যাস–সংকটের অভিযোগ করেছেন বাসিন্দারা।