গোল্ডেন পাওয়া মেয়েকে পড়াতে হিমসিম খাচ্ছেন কাশিপুরের ইলিয়াছ শেখ।

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago

সোহেল আহমেদ.

একজন ইলিয়াস শেখ। পাটি বিক্রি করা তার বর্তমান পেশা। সওদাগড় প্রতি পিচের নির্দিষ্ট একটি দামের উপর যে কমিশন দেন তা দিয়ে চলে সংসার। তিনশ থেকে ছয়শ টাকা প্রতি দিন আয় করলেও শেখের সংসার চালানো দায়।

তিন ছেলে মেয়ে সহ ৫ সদস্যের হতদরিদ্র সেই পরিবারের কালো মেয়েটি যে সমাজের আলোর প্রদিপ হবে তাকি কেউ ভেবেছে? জানতেন বাবা ইলিয়াস শেখ নিজেও।

প্রতিবেশীর দেয়া পোষাক পরিধান করে স্কুলে যেত কালো মনি। আত্ববিশ্বাসী কালো মেয়েটি গত বছর জে এস সি পরীক্ষায় গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছিলো। বর্তমানে নবম শ্রেনিতে পাশ করে দশম শ্রেনিতে উর্ত্তিন হয়েছে।

যশোরের নড়াইলের কাশিপুর এলাকার সাধারন মানুষের কাছে অত্যান্ত গর্বের নাম কালো মনি। দারিদ্রকে হার মানা এই শিক্ষিত হবার স্বপ্নে বিভোর মেয়েটির কথা সবার মুখে মুখে। লেখা পড়ায় ভালো বলে স্কুলের প্রধান শিক্ষক মেয়েটিকে বিনা মুল্যে শিক্ষা দান করিয়ে আসছিলেন।

জানতে চাইলে,ইলিয়াস শেখ প্রতিবেদককে বলেন,আমি জিবনে কোন দিন স্কুলের বাড়ান্দায়ও পা দেয়নি। কালো মনিটার মাথা ভালো শুনেছি। কিন্তু এতো ভালো তা বুজিনি। ওর স্কুলের জামা কাপর পর্যন্ত বানায়া দিতে পারি নি। এ কথা যখন বলছিলেন ইলিয়াসের চোখে তখন টলটল করে অস্্রু ঝড়ছিলো।

তিনি জানান,৭১ এর যুদ্ধের সময় তার বয়স আনুমানিক ৬/৮ বছর। দেশে তখন একদিকে মানুষ মারার আতংক অপর দিকে অনাহারে কষ্টে কাটত রাত। এক দিন বিকেলে হাটে গেলেন সরকারের ত্রান সংগ্রহ করতে। সবাই যখন লাইন দিয়ে দাড়িয়ে ত্রানের জন্য অপেক্ষা তখনই পাক বাহিনি কয়েক জনের মাথা রামদা দিয়ে উড়িয়ে দিলো। চারদিকে ছোটাছুটি। তারপর প্রতিবেশীর বাড়ি আশ্রয় নিয়ে ভাতের মার খেয়ে খেয়ে কাটিয়ে দেন শৈসব কাল।

এরপর ধিরে ধিরে নিজেকে কর্মে নিয়োজিত করেন। মানুষের কামলা থেকে শুরু করে জিবীকার জন্য যখন যে কাজ পেয়েছেন করেছেন। অভাবের ঘরে জন্মের পর বাবা মা দুজনকেই হারিয়ে বড় একা হয়ে যান ইলিয়াস।

গত দশ বছর যাবত পাটি বিক্রি করছেন। একটি এনজিও থেকে ৫০ হাজার টাকা কিস্তি নিয়ে একটি ঘর বানিয়েছেন। সে জন্য সপ্তাহে সাত শত টাকা করে কিস্তি গুনতে হয়। এর মধ্যে আবার যমুনার ভাঙ্গনে ভিটে বাড়ি যা ছিলো নদীতে বিলীন হয়ে যায়। স্থানিয় চেয়ারম্যানের সহযোগীতায় সরকারের খাস জমিতে টিনের ছাপরা দিয়ে বাস করছেন।

এতো অভাবের মাঝেও সমাজের আর দশ জনের মত তিনি মেয়েকে উচ্ছ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে চান। তার জন্য রক্ত বিক্রি করতে হলে তাও করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন।