স্টাফ করেসপন্ডেন্ট:: ইতালিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে মানব পাচারে বহু বছর ধরে লিবিয়াকে রুট হিসেবে ব্যবহার করছে পাচারকারী চক্র। লিবিয়া থেকে নৌকায় ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি বা অন্য কোনো ইউরোপীয় দেশে পাঠানো হয়। এক্ষেত্রে কয়েক স্তরে কাজ করে চক্রটি। এই চক্রগুলোর সঙ্গে সুদান, মিসর, লিবিয়াসহ নানা দেশের লোক জড়িত।
প্রতিটি স্তরেই পাচারকারীদের এক চক্রের হাত থেকে অবৈধ অভিবাসীদের দলগুলোকে আরেক চক্রের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এভাবে ভাগ্যের অন্বেষণে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্বপ্নের দেশে যেতে আগ্রহী অবৈধ অভিবাসীরা তিন থেকে চার দফায় কেনাবেচার শিকার হন। বাংলাদেশে অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করা গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘রামরু’ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রাপ্ত তথ্য বলছে, লিবিয়ায় মানব পাচারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশি চক্রের সরাসরি যোগসাজশ থাকে লিবিয়ায় বসবাসকারী চক্রের সঙ্গে। এই দালাল চক্র কয়েকটি জেলায় বেশি সক্রিয়।
এই চক্রের মাধ্যমেই লিবিয়ায় গিয়ে দেশটির মিজদা শহরে বৃহস্পতিবার মানব পাচারকারীদের হাতে ২৬ বাংলাদেশি নিহত ও ১২ জন আহত হন। জিম্মিকারী দালাল চক্রকে বাংলাদেশ থেকে দফায়-দফায় লাখ লাখ টাকা পাঠিয়েও স্বজনদের বাঁচাতে পারেনি ভুক্তভোগী পরিবারগুলো।
সাম্প্রতিককালে মানব পাচার প্রতিরোধে র্যাব-৮, বরিশাল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। গত ২৮ মে লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপলির দক্ষিণ শহর মিজদায় আন্তর্জাতিক মানব পাচার চক্র অভিবাসন প্রত্যাশিদেরকে অপহরণ করে মুক্তিপণ না পাওয়ায় ২৬ জন বাংলাদেশিসহ ৩০ জনকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে। বিষয়টি র্যাব-৮ এর নজরে আসলে র্যাব-৮ এর অধীনে ১১টি জেলার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সাথে সংশ্লিষ্ট মানব পাচারকারীদের তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করতঃ দ্রুত গ্রেফতারের লক্ষ্যে অভিযান পরিচালনা করে আসছে।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-৮ জানতে পারে যে, দীর্ঘদিন যাবৎ একটি আন্তর্জাতিক মানব পাচারকারী চক্র ইতালিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে মোটা অংকের বেতনের চাকুরীর প্রলোভন দেখিয়ে মানব পাচার করছে। উক্ত চক্রের সদস্যরা বাংলাদেশ, লিবিয়া ও ইতালিতে সমভাবে সক্রিয়। এদের শিকার মূলত মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের উঠতি বয়সের বেকার যুবকরা। বর্ণিত চক্রটি বাংলাদেশ থেকে প্রাথমিকভাবে যুবকদের লিবিয়ায় পাচার করে থাকে। তৎপরবর্তীতে লিবিয়ায় অবস্থানরত চক্রের সদস্যরা লিবিয়ার বন্দিশালায় তাদেরকে আটক রেখে বিভিন্নভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করে এবং উক্ত বন্দীদের নিকটাত্মীয়দের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা দাবী করে। টাকা প্রাপ্তি সাপেক্ষে তাদেরকে লিবিয়া হতে নৌকাযোগে অবৈধ পন্থায় ইতালিতে গমনের সুযোগ করে দেয়া হয়। ক্ষেত্র বিশেষে বন্দীপ্রতি উক্ত চক্রটি পাঁচ থেকে দশ লক্ষ টাকা পর্যন্ত মুক্তিপণ আদায় করে বলে জানতে পারে র্যাব-৮।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-৮ এর একটি চৌকষ দল কর্তৃক গত ০৩ জুন ২২:০০ ঘটিকায় গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর থানাধীন লোহাইর গ্রাম হতে ১। মোঃ সেন্টু শিকদার(৪৫), পিতাঃ মৃত রত্তন শিকদার, সাং-লোহাইড়, থানাঃ মুকসুদপুর, জেলাঃ গোপালগঞ্জ এবং যাত্রাবাড়ী গ্রাম হতে ২। মোছাঃ নার্গিস বেগম(৪০), স্বামীঃ মোঃ আঃ রব মোড়ল, সাং-যাত্রাবাড়ী, থানাঃ মুকসুদপুর, জেলাঃ গোপালগঞ্জকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা উক্ত চক্রের সক্রিয় সদস্য বলে স্বীকার করেন এবং প্রাপ্ত গোপন তথ্য সমূহের সত্যতা পাওয়া যায়। বর্ণিত চক্রের লিবিয়া অংশের অন্যতম প্রধান ১। মোঃ বশির শিকদার (ধৃত ১নং আসামী সেন্টু শিকদারের ভাই) ও ২। মোঃ সেলিম শেখ(৩৫)। চক্রটি লিবিয়া প্রবাসী ১। মোঃ বশির শিকদার(৩৫) ও মোঃ সেলিম শেখ(৩৫) এর নেতৃত্বে লিবিয়ার বন্দীশালায় পাচারকৃত বাংলাদেশি
যুবকদেরকে অর্ধাহারে-অনাহারে রেখে নানাবিধ শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে এবং গ্রেফতারকৃত ১। মোঃ সেন্টু শিকদার(৪৫) ২। মোছাঃ নার্গিস বেগম(৪০)সহ বাংলাদেশে অবস্থানরত পাচারকারীরা ভিকটিমদের নিকটাত্মীয়দের কাছ থেকে টাকা উত্তোলন করে।
গ্রেফতারকৃত আসামী এবং পলাতক আসামীদের বিরুদ্ধে মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন ২০১২ মোতাবেক মামলা দায়ের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সাম্প্রতিককালে মানব পাচারের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের উপর গভীর নজরদারী রাখা এবং প্রাপ্ত তথ্য উপাত্তের উপর ভিত্তি করে মানব পাচার চক্রের অন্যান্য সক্রিয় সদস্যদের গ্রেফতারে অপারেশন অব্যাহত রয়েছে বলে জানায় র্যাব-৮ ।