ঢাকার ভাড়াটিয়া বাসায় এক সন্তানের জননী গৃহবধূ জান্নাতুল ফেরদৌস হাসিকে (২১) গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা করে স্বামী রাজু আহমেদ বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় মামলা গ্রহণ ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভে ফেটে পড়েন স্বজন ও এলাকার লোকজন।সোমবার (১৫আগস্ট) সকাল ১০টায় জেলা পরিষদের সামনে গৃহবধূর নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়।
এর আগে শনিবার (১৩ আগস্ট) রাত সাড়ে ৮টার দিকে পল্লবী থানার পলাশ নগরের বেলতলা এলাকায় এ হত্যা কাণ্ড ঘটে। হত্যার পর স্ত্রীর বাবার বাড়ির লোকজন খবর পেয়ে ওই রাত্রেই ঢাকায় রওনা দেন। ভোর রাতে গিয়ে পৌঁছালে আইনিপ্রক্রিয়া শেষে রোববার (১৪ আগস্ট) বিকেলে ঝালকাঠিতে নিয়ে আসা হয়।
নিহত হাসি ঝালকাঠি শহরের কৃষ্ণকাঠি এলাকার বাবুল তালুকদারের মেয়ে এবং রাজাপুর উপজেলার বাইপাস এলাকার মোয়াজ্জেম হাওলাদারের পুত্র রাজু আহমেদের স্ত্রী।
নিহত হাসির নিকটাত্মীয় ঝালকাঠি বাস শ্রমিক ইউনিয়নের যুগ্ম সম্পাদক আ. রাজ্জাক রনি জানান, শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে হাসির স্বামী রাজুর এক বন্ধু পরিচয়ে ফোন দিয়ে ভাই কাওসারকে বলেন, আপনার বোন খুব বেশি অসুস্থ, তাকে দেখতে হলে এখনই চলে আসুন।
কিছুক্ষণের মধ্যে ওই এলাকার কাউন্সিলর পরিচয়ে পিতা বাবুল তালুকদারকে ফোন দিয়ে বলেন, আপনার মেয়ে স্ট্রোক করে মারা গেছেন, তাড়াতাড়ি চলে আসুন।
সংবাদটি শুনেই তারা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন। তখনই প্রস্তুতি নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে রাত সাড়ে ৩টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে পৌঁছেন।
ইতোমধ্যে মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পল্লবী থানা পুলিশ সোহরাওয়ার্দি মেডিকেলের মর্গে নেয়। পুলিশের সুরতহাল প্রতিবেদনে গলায় দড়ির দাগ এবং ঘরের মেঝেতে শোয়ানো অবস্থায় উদ্ধার করা হয় বলে উল্লেখ করা হয়।
নিহত হাসির স্বামী রাতেই বাদী হয়ে পল্লবী থানায় অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেন। মর্গে পোস্ট মর্টেমে ওই এলাকার লোকজন এবং পার্শ্ববর্তী ভাড়াটিয়া বাসার লোকজন ছাড়া আর কাউকে পাওয়া যায় যায়নি।
হাসির পিতা বাবুল তালুকদার জানান, আমার মেয়েকে যৌতুকের দাবিতে প্রায়ই মারধর করত। মারধরের সময় তাকে বারবার মাথায় আঘাত করা হত। এসময় সে বেহুশ হয়ে পড়লে কিছুক্ষণ পরে আবার হুশ হত।
এমন একাধিকবার ঘটনা ঘটেছে। তাকে মানসিক ভারসাম্যহীন প্রমাণ করতে মানসিক ডাক্তার দেখালেও তার প্রেসক্রিপ ঘরে রাখত। কিন্তু কোনো ওষুধ সেবন করাত না। আমি আমার মেয়ে হত্যা বিচার চাই।
বোনের শোকে কাতর মিল্লাত হোসেন জানান, আমার বোন নরম ও শান্ত স্বভাবের ছিল। যৌতুকের দাবিতে প্রায় মারধর করা হত তাকে। আমাদের কাছে কান্নাকাটি করে নালিশ করত কিন্তু আমরা গরীব বিধায় উপায়হীন ছিলাম আমরা। যৌতুকের শেষ পরিণতিতে আমার বোনকে হত্যা করেছে ওরা।
ওখানে আমার আড়াই বছর বয়সী ছোট একটা ভাগিনা আছে। ওকেও কোথায় যেন লুকিয়ে রাখছে, আমাদের কথাও বলতে দেয়নি।ঢাকার ঘটনায় সেখানে গিয়ে ওদের অর্থ ও প্রভাবের কারণে মামলা দেওয়া তো দূরের কথা, আমরা কোনো পাত্তাই পাইনি।
আমাদের বোন হত্যাকারীদের নামে ঝালকাঠি থানায় মামলা গ্রহণ, গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই। ঝালকাঠি সদর থানার ওসি মো. খলিলুর রহমান জানান, ঝালকাঠির সন্তান হলেও দুর্ঘটনার স্থান ঢাকার পল্লবী থানায়। পোস্ট মর্টেম হয়েছে সোহরাওয়ার্দি মেডিকেলে। পল্লভী থানায়ই তারা আইনি ব্যবস্থা নিতে পারবেন।