গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে বন্ধ হচ্ছে আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগ

লেখক:
প্রকাশ: ৭ years ago

সরকারি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে আর লোকবল নিয়োগ করা হবে না। এখন থেকে এসব দপ্তরে চতুর্থ শ্রেণি পদে সরাসরি নিয়োগ দেওয়া হবে। এমন নির্দেশনা রেখে আউটসোর্সিং নীতিমালা-২০১৮ প্রণয়ন করছে সরকার। এরই মধ্যে নীতিমালার খসড়া চূড়ান্ত করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়েছে, নিরাপত্তা ও রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা বিঘ্নিত হয় এমন কোনো পদে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে লোকবল নিয়োগ দেওয়া যাবে না।

এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোজাম্মেল হক খান বলেন, আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে লোকবল নিয়োগ নতুন নয়। এটি অনেক আগে থেকে প্রশাসনের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কোনো কোনো পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। এটিকে সুশৃঙ্খল করতে বিদ্যমান নীতিমালা আরও যুগোপযোগী করা হচ্ছে। শিগগিরই এটি প্রণয়ন করা হবে।

সূত্র জানায়, মাঠ প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায় থেকে আউটসোর্সিংয়ে লোকবল নিয়োগ না দেওয়ার বিষয়ে যুক্তি তুলে ধরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ওই চিঠিতে নিয়োগপ্রাপ্তদের নিয়ে নানা অভিযোগও করা হয়েছে। অভিযোগে বলা হয়, সরকারি অফিসে চতুর্থ শ্রেণির পদে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে জনবল নিয়োগের ফলে গুরুত্বপূর্ণ সরকারি তথ্য ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। এতে সরকারি গুরুত্বপূর্ণ নথি ও তথ্যাদি সংরক্ষণ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে। দুর্বল হয়ে পড়ছে অফিস ব্যবস্থাপনা। এমন বাস্তবতায় সম্প্রতি কয়েকজন বিভাগীয় কমিশনার আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে সরকারি শূন্য পদে জনবল নিয়োগ বন্ধ করার পক্ষে মত দিয়েছেন। বিশেষ করে উপজেলা ভূমি অফিস, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়, জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শূন্য পদেই আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়।

মাঠ প্রশাসনে কর্মকর্তাদের এমন প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতেই আউটসোর্সিংয়ে জনবল নিয়োগের নীতিমালা কঠোর করছে সরকার। নয়া নীতিমালা অনুযায়ী, আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে এমএলএসএস পদে নিয়োগে শিক্ষাগত যোগ্যতা নূ্যনতম এসএসসি পাস এবং চতুর্থ শ্রেণির অন্যান্য পদের জন্য অষ্টম শ্রেণি পাস, গাড়িচালক পদের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণি পাস নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠান ছাড়াও কোনো ব্যক্তি আউটসোর্সিংয়ে লোক সরবরাহে সরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করতে পারবে। তবে তাদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সরবরাহ করতে হবে। বিদ্যমান নীতিমালায় সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো শুধু আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে লোক নিতে পারত। নয়া নীতিমালায় এটিকে সম্প্রসারণ করা হয়েছে।

নীতিমালায় আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগের ক্ষেত্রে কিছু পদে সাবধানতা অবলম্বন করার কথা বলা হয়েছে। বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে এমন গুরুত্বপূর্ণ পদে এ ধরনের নিয়োগ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বিদ্যমান নীতিমালায় এসব পদের ক্ষেত্রে আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগে স্পষ্ট কিছু বলা ছিল না। নয়া নীতিমালা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগে সাময়িক সময়ের জন্য নিয়োগপত্র দেওয়ার এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে। তবে যাদের এভাবে নিয়োগ দেওয়া হবে, তাদের স্থায়ী করা হবে না বলে ওই নিয়োগপত্রে উল্লেখ থাকবে। নীতিমালা অনুযায়ী নিয়োগপ্রাপ্তদের বেতন ব্যাংকে দেওয়া হবে। যেসব পদে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হবে, ওই সব পদের জাতীয় বেতন স্কেলের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তাদের বেতন দেওয়া হবে।

সূত্র জানায়, ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন করপোরেশন এবং বিভিন্ন প্রকল্পে সেবা গ্রহণের লক্ষ্যে লোক নিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এ জন্য আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে সেবা গ্রহণ নীতিমালা-২০০৮ নামে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। এর মাধ্যমে প্রয়োজন অনুযায়ী অফিসে কর্মী নিয়োগের বিধান ছিল। নীতিমালায় তাদের পারিশ্রমিক দৈনিক, মাসিক ও বার্ষিক ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়ার বিধান রাখা হয়। ওই নিয়োগবিধিতে চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগে সর্বনিম্ন ১৮ থেকে সর্বোচ্চ ৬০ বছর নির্ধারণ করা হয়। চতুর্থ শ্রেণি ছাড়া অন্যান্য পদের জন্য নির্ধারিত সর্বনিম্ন বয়সসীমা প্রযোজ্য রাখা হয় এবং সর্বোচ্চ ৬০ বছর নির্ধারণ করা হয়। আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নির্ধারিত পদে স্থায়ী, অস্থায়ী বা সাময়িক কোনো নিয়োগপত্র প্রদান না করার বিধান রাখা হয়। এ বিধান অনুযায়ী কিছু পদে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে লোকবল নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে যেভাবে পরিকল্পনা ছিল, নীতিমালার কিছু বিষয়ে অস্পষ্ট থাকায় পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। বিশেষ করে নিয়োগপত্র না দেওয়া, নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সরকারি চাকরি, মজুরি দৈনিক ভিত্তিতে প্রদান, চাকরির নিরাপত্তা না থাকা, কম বেতন নির্ধারণ করাসহ বিভিন্ন কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান পরিকল্পনা অনুযায়ী আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে লোক নিয়োগ দিতে পারেনি। আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠানগুলো নীতিমালার এমন বিধানের কারণে লোক সরবরাহে অনাগ্রহ দেখায়। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে নীতিমালা সংশোধন করে নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংশ্নিষ্ট শাখার এক কর্মকর্তা বলেন, আউটসোর্সিংয়ের নিয়োগপ্রাপ্তদের বেতন কাঠামো বাজারমুখী করতে নীতিমালা সংশোধন করা হচ্ছে। এ নীতিমালায় এমন কিছু বিধান রাখা হচ্ছে, যার কারণে আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগ সহজ হবে।