গুমের শিকার ৩৩০ জনের ফেরার আশা ক্ষীণ

লেখক:
প্রকাশ: ৭ দিন আগে

গুমের শিকার হয়ে ফিরে না আসা ৩৩০ জন ব্যক্তির বর্তমান অবস্থা জানতে অনুসন্ধান চলছে বলে জানিয়েছেন এ বিষয়ে গঠিত তদন্তে কমিশনের প্রধান অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী। তবে তাদের ফিরে আসার আশা ক্ষীণ বলে মন্তব্য করেন তিনি। গতকাল মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর গুলশানে গুম কমিশনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই মন্তব্য করেন।

 

ভারতে বন্দি থাকা বাংলাদেশিদের যে তালিকা পাওয়া গেছে সেখানে গুম হওয়া কোনো ব্যক্তি আছে কি না, তা মিলিয়ে দেখা হচ্ছে জানিয়ে মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভারতের কারাগারে বন্দি বাংলাদেশি নাগরিকদের তালিকা চাওয়া হয়েছিল। ভারত ১ হাজার ৬৭ জনের একটি তালিকা দিয়েছে, সেটি গুম সংক্রান্ত কমিশন মিলিয়ে দেখছে, সেই তালিকায় গুম হওয়া কোনো ব্যক্তি আছে কিনা, তা অনুসন্ধান করা হচ্ছে। এই তালিকা ভারত আরো দিবে।

মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, কমিশনে ১ হাজার ৭৫২টি অভিযোগ জমা পড়েছে, যার মধ্যে ১ হাজারটি অভিযোগ ও তার সঙ্গে সংযুক্ত কাগজপত্রের যাচাই-বাছাই প্রাথমিকভাবে সম্পন্ন হয়েছে। কমিশনে ২৮০ জন অভিযোগকারীর জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার বিভিন্ন পর্যায়ের প্রায় ৪৫ জন কর্মকর্তার বক্তব্য রেকর্ড করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, সীমান্তবর্তী জেলার পুলিশ সুপার ও বিজিবির সেক্টর কমান্ডারদের কাছ থেকে আগস্টের পর ভারত থেকে বাংলাদেশে পুশ-ইন করা ১৪০ জনের তথ্য পাওয়া গেছে। প্রাথমিক অনুসন্ধানে তাদের মধ্যে কোনো গুমের শিকার ব্যক্তির নাম এখনো পাওয়া যায়নি।

গুম কমিশনের প্রধান বলেন, ধামরাই থেকে গুম হওয়া মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ নামের এক ব্যক্তিকে গত ২২ ডিসেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পুশ-ইন করা হয়েছে। এ বিষয়ে কমিশন অনুসন্ধান করছে। সরকারের সর্বোচ্চ নির্দেশদাতা ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তার নির্দেশে গুমের ঘটনা ঘটেছে। এটা আমরা আগেও বলেছি।

গুমের অপরাধের দায় ব্যক্তির, এ দায় কোনো বাহিনীর নয় মন্তব্য করে কমিশনের সভাপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার যে সকল সদস্যের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের নাগরিকদের গুম করার অভিযোগ আছে, তাদের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে অনুসন্ধান করছে কমিশন। কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন যে গুমের সঙ্গে জড়িত কতিপয় ব্যক্তির জন্য পুরো বাহিনী আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে যাচ্ছে। গুমের সঙ্গে জড়িত নির্দেশদাতাদের দায় আছে। তাদের সংখ্যাও অনেক। প্রত্যেক বাহিনীতে নির্দেশদাতা ও গোপন বন্দিশালা ছিল। বাহিনীর যে সব সদস্য গুমে জড়িত তা তাদের ব্যক্তিগত ফৌজদারি দায় বলে তিনি জানান।

গুম কমিশনের সদস্য নূর খান বলেন, বগুড়া পুলিশ লাইনসের ভেতরে কারাগারের মতো গোপন বন্দিশালা তৈরি করে রাখা হয়েছিল। আমাদের ধারণা অনেক ক্ষেত্রে এ ধরনের আরও পাব। এসব বন্দিশালা গত ১৫ বছরে করা হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নে নূর খান বলেন, এগুলো গত ১৫ বছরের মধ্যেই বানানো হয়েছে। এখানে বিভিন্ন জেলা থেকে বন্দিদের এনে রাখা হতো, জিজ্ঞাসাবাদের নামে নির্যাতন করা হতো। এখান থেকেও অনেকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটতে পারে।

উল্লেখ্য, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর গত ২৭ আগস্ট অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের গুম কমিশন গঠন করে সরকার।