গুণীজন জাতির গর্ব ও অহংকার: প্রধানমন্ত্রী

লেখক:
প্রকাশ: ৩ years ago

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একুশের শহীদরা যেমন জাতির অন্যতম শ্রেষ্ঠ সন্তান, তেমন দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সব গুণীজন জাতির গর্ব ও অহংকার। যদিও প্রকৃত গুণীজন পুরস্কার বা সম্মাননার আশায় কাজ করেন না, তবু পুরস্কার-সম্মাননা জীবনের পথ চলায় নিরন্তর প্রেরণা যোগায়।

রোববার (২০ ফেব্রুয়ারি) ‘একুশে পদক-২০২২’ উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে এ কথা বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিবছর ভাষা আন্দোলনের অমর শহীদদের স্মরণে একুশে পদক দেওয়া আমাদের সবাইকে জাতীয়তাবোধের চেতনায় ভীষণভাবে উজ্জীবিত করে। যুগে যুগে অধিকার সচেতন বাঙালি জাতির বীরত্বগাঁথা লিপিবদ্ধ হয়েছে লড়াই-সংগ্রাম ও আত্মোৎসর্গের মাধ্যমে অর্জনের ইতিহাসে। ভাষা আন্দোলনে বাঙালির আত্মত্যাগের মাধ্যমে জাতীয়তাবাদের যে লড়াই শুরু হয়, তারই ধারাবাহিকতায় সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে হাজার বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হওয়ার বাসনায় পূর্ব বাংলার মানুষ একটি স্বাধীন জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়ে সফলতা লাভ করে। আমরা পাই স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।

তিনি বলেন, ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি যে সব বীর শহীদ আমাদের মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রক্ষা করতে প্রাণ উৎসর্গ করেছিলেন, আজ আমি তাদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। আমি পরম শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে নেতৃত্ব দানকারী সে সময়ের তরুণ ছাত্রনেতা শেখ মুজিবুর রহমানসহ সব ভাষাসৈনিককে, যাদের দূরদর্শী ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তে এবং চরম আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমাদের মা, মাটি ও মানুষের অস্তিত্ব রক্ষা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, একুশের চেতনাকে ধারণ করে দেশের শিল্প, সাহিত্য, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতির বিকাশ এবং আলোকিত সমাজ বিনির্মাণে যারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রভূত অবদান রাখছেন, তাদের সবার প্রতি সম্মান জানিয়ে আমরা গৌরবময় একুশে পদক প্রদান করছি। এর আগে প্রতিবছর বাংলাদেশের অল্প সংখ্যক বিশিষ্ট ব্যক্তিরা জাতীয় পর্যায়ে তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ একুশে পদকে ভূষিত করা হতো।

পদকপ্রাপ্তদের সম্মানি অর্থের পরিমাণও ছিল যৎসামান্য। আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদে পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য ব্যক্তিদের পুরস্কার হিসেবে অর্থের পরিমাণ কয়েক দফা বাড়িয়ে গত ২০২০ সালে আমরা চার লাখ টাকায় উন্নীত করেছি। অনুরূপভাবে আমরা ২০১৮ সাল থেকে পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২১-এ উন্নীত করেছি। জাতীয় জীবনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২১ সাল পর্যন্ত মোট ৫২০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি ও ৩টি স্বনামখ্যাত প্রতিষ্ঠানকে একুশে পদক দেওয়া হয়েছে। ২০২২ সালে আমরা মোট ২৪ জনকে এ পদকের জন্য মনোনীত করেছি। এবারে আমরা ভাষা আন্দোলনে ভূমিকা রাখার জন্য দুইজনকে মরণোত্তর, ভাষা-সাহিত্যে দুইজন, শিল্পকলায় সাতজন, মুক্তিযুদ্ধে চারজন, সাংবাদিকতায় একজন, গবেষণায় চারজন, শিক্ষায় একজন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে একজন এবং সমাজসেবায় দুইজন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে এই পদক প্রদান করছি। যারা মরণোত্তর পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন তাঁদের আত্মার শান্তি প্রার্থনা করছি। আর যারা আজ পুরস্কার গ্রহণ করছেন, তাঁদেরকে আমরা আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, আমরা জাতির পিতার আদর্শকে ধারণ করে গত ১৩ বছরে দেশের আর্থসামাজিক খাতের প্রতিটি ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধন করেছি। বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষ উদযাপন করছি। আমরা প্রথম পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনা সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশ এবং নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরিত হয়েছি। রূপকল্প-২০৪১ অর্জনের লক্ষ্যে ২০ বছর মেয়াদি দ্বিতীয় পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছি। ইনশাল্লাহ, অচিরেই আমরা জাতির জনকের স্বপ্নের আত্মমর্যাদাশীল ও উন্নত-সমৃদ্ধ ‘সোনার বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হব।