গীতিকার ও পুলিশ কর্মকর্তা দেওয়ান লালন আহমেদ আর নেই

:
: ২ years ago

গীতিকার ও পুলিশ কর্মকর্তা দেওয়ান লালন আহমেদ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহে রাজিউন)। আজ বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) দুপুর দেড়টার দিকে পুলিশ হাসপাতালে তিনি মারা যান।

জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন তার গাড়িচালক(পুলিশ সদস্য) আলমগীর হোসেন।

জানা গেছে, আজ বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) বাদ আসর রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে জানাজা শেষে দেওয়ান লালন আহমেদের মরদেহ রাজধানীর আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হবে।

দেওয়ান লালন আহমেদের পাঁচ শতাধিকের বেশি গান রয়েছে। সিনেমা, নাটক, সমসাময়িক বিষয়, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু, মা-বাবা, প্রেম-বিরহ নিয়ে তার গান উল্লেখযোগ্য।

এছাড়া তিনি মাটি ও মানুষের চিরায়ত বোধের লোকগান, লালন ফকিরের মানুষতত্ত্ব নিয়েও গান লিখেছেন।

পুলিশের এই কর্মকর্তার বাবা ছিলেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তার কাছ থেকেই দেশপ্রেমের আদর্শ ছোটবেলা থেকে বুকে ধারণ করেছেন। স্কুলজীবনে শিল্প-সংস্কৃতির প্রতি ভালোবাসা ছিল লালন আহমেদের। তারপর লেখালেখির প্রতি আগ্রহ শুরু। তার পাঁচটি বই প্রকাশিত হয়েছে।

২০১৬ সালে ‘বাবার চোখে মুক্তিযুদ্ধ’ গ্রন্থ দিয়ে লালনের প্রথম বই প্রকাশ। বইটি পাঠকের কাছে বেশ জনপ্রিয়তা পায়। মুক্তিযোদ্ধা বাবার কাছ থেকে শোনা বইটিতে যেমন ফুটে উঠেছিল, তেমনি ফুটে উঠেছিল বাবার প্রতি সন্তানের ব্যাকুল ভালোবাসা আর বাবার শূন্যতার হাহাকার।

‘পুলিশের খেরোখাতা’ নামে একটি গ্রন্থে সাধারণ মানুষের সঙ্গে পুলিশের আত্মিক মেলবন্ধ তুলে ধরেছিলেন পুলিশ সুপার লালন আহমেদ। বইটি ২০১৭ সালে প্রকাশিত হয়। প্রায় ২০০ বছর ব্রিটিশ শাসকদের পরাধিনতার কবলে বেনিয়ারা নিজেদের স্বার্থে পুলিশকে কীভাবে জনগণের বিরুদ্ধে নানাভাবে ব্যবহার করেছে, তা-ই বইটিতে তুলে ধরেন তিনি।

২০১৮ সালে শিশুতোষ ছড়া নিয়ে ‘বিতং বনে বনবনিয়ে’ প্রকাশিত হয়। ২০২০ সালে এক রঙ্গা এক ঘুড়ি প্রকাশনী থেকে দুটি বই প্রকাশিত হয় পুলিশের এই কর্মকর্তার। এর মধ্যে একটি পুলিশের ‘খেরোখাতা দ্বিতীয় পর্ব’ এবং অন্যটি ‘সাধুসঙ্গে ডুবাও অঙ্গ’।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেশপ্রেম ও আত্মত্যাগ নিয়েও চারটি গান লিখেছেন দেওয়ান লালন। সেগুলো হলো- ‘বঙ্গবন্ধু, শতবর্ষের মহীরুহ, পাখিরা কাঁদে ও শেখ সাহেব’। এছাড়া ‘মায়ের নেই বিকল্প, মা’, ‘ওরে প্রাণপ্রিয় পুত্র’, ‘জারুল ফুল’, ‘প্রেম আছে বলে’, ‘যোজন যোজন দূরে’, ‘ভালো থেক’, ‘বুকের ভিতর আরেকটি বুক’- এমন অনেক গান বেশ জনপ্রিয়।

এছাড়া অটমনাল মুনের সঙ্গেও তিনি অনেকগুলো গান বানিয়েছেন। যেমন- ‘ভালো থেকো’, ‘প্রেম আছে বলে’, ‘যোজন যোজন দূরে’, ‘যাও মেঘ আকাশকে বলো’, ‘কষ্ট যন্ত্রণা বেদন’, ‘বুকের ভেতর আরেকটি বুক’, ‘স্বপ্ন সুখের ঝুলি’, ‘এমন আপন কেউ হবে না’ ইত্যাদি।

২০১৯ সালে প্রকাশিত ‘পাসওয়ার্ড’ গানটির জন্য ‘চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডে’ আধুনিক গান ক্যাটাগরিতে শ্রেষ্ঠ গীতিকার হিসেবে স্বীকৃতি পান দেওয়ান লালন।

বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে ২৪তম ব্যাচের কর্মকর্তা দেওয়ান লালন মৃত্যুকালে স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন।