গরম আসতে না আসতেই খুলনার দাকোপে সুপেয় পানির চরম সংকট

লেখক:
প্রকাশ: ৫ years ago

পাপ্পু সাহা,দাকোপ, খুলনা :


গরমের হাওয়া না আসতেই সুপেয় পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে খুলনার দাকোপ উপজেলায়। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে বাড়ছে পানির ব্যবহার, দ্রুত শুকিয়ে যাচ্ছে পুকুরের পানি।
সরেজমিনে উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন এবং পৌরসভা ঘুরে দেখা যায়, উপজেলা জুড়ে সুপেয় পানির চরম সংকট চলছে। অনেকের বাড়ীতে দৈনিকের ধোয়া-মোছার পানি থাকলেও পান করার জন্য সুপেয় পানি সংগ্রহ করতে হয় অনেক দূর থেকে। ভূগর্ভস্থ্য পানিতে লবণ, আর্সেনিক এবং আয়রণ বেশী থাকায় গভীর ও অগভীর নলকুপের পানি পানের অনুপযোগী তাই জংগল কেটে আবাস স্থল বানানোর সময় থেকে আজ অবধি শতাধীক বছর ধরে এ এলাকার মানুষের সুপেয় পানি প্রাপ্তির প্রধান উৎস হল পুকুর। দিনবদলের সাথে সাথে পুকুরগুলোর আকৃতি প্রকৃতি যেমন বদলেছে তেমনি বহুদিন খনন না করায় অনেক পুকুরের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়েছে।
জানা গেছে, দিনে দিনে বাড়ছে জনসংখ্যা, বাড়ছে মানুষ ও অন্যান্য গৃহপালিত পশুর পানির ব্যবহার ফলে সুপেয় পানির সংকট এ এলাকার মানুষের জন্য দৈনন্দিন সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। সুপেয় পানির সংকট নিরসনে দীর্ঘদিন ধরে জিও এবং এনজিও পর্যায়ে কাজ চললেও এখনও পর্যন্ত এ অভাব দূর করা সম্ভব হয়নি। এর প্রধান কারণ হলো স্থানভেদে সঠিক পরিকল্পনার অভাব, প্রয়োজনের তুলনায় সম্পদের স্বল্পতা, জিও এনজিওদের কাজে সমন্বয়ের ও জবাবদিহিতার অভাব, মনিটরিং ও পরিচর্যার অভাব। এছাড়াও সিডর ও আইলার মত ঘূর্ণিঝড়ে অনেক পুকুর নষ্ট হয়ে গেছে।
সুত্রমতে, উপজেলায় সুপেয় পানির সরকারি পুকুর ৪০টি ব্যক্তিগত ২৮৪টি অর্থাৎ সুপেয় পানির পুকুর রয়েছে ৩২৪টি।
আরও জানা গেছে, কামারখোলা, সুতারখালী, বানিশান্তা চুনকুড়ি, পশ্চিম বাজুয়া,কৈলাশগঞ্জ সহ কিছু কিছু এলাকায় ৫ থেকে ৬ কিলোমিটার দূর থেকে পানি নিয়ে আসতে হয় সেখানে সময় লেগে যায় প্রায় অর্ধদিবস। ৮৫ শতাংশ এর বেশী পরিবার শুকনো মৌসুমে বৃষ্টির পানির পরিবর্তে পুকুরের পানি পান করে থাকে। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বড় ট্যাংকির অভাবে অনেক পরিবার সারা বছর খাবার জন্য বৃষ্টির পানি ধরে রাখতে পারে না।
উপজেলার বাজুয়া গ্রামের  নিমাই হালদার বলেন আমাদের গ্রামের একটাই খাওয়ার জলের উৎস ফির্স এক্সপোর্ট এর পুকুর  তাতে জে আই জেড এর সুপিও জলের প্লান্ট এর পাইপ লাইন দিয়ে বিভিন্ন ওয়ার্ডে জল সাপ্লাই করে আর সেই জল খেয়ে আমাদের এলাকার লোকজন বেচে আছে। কিন্তু প্রথম প্রথম ভাল ছিল এখন বিভিন্ন লাইন নষ্ট আর লাইন দিয়ে ময়লা আসে যা খাওয়ার উপযোগী নয়।
আর এক জনের সাথে কথা বলে জানাযায়  ফির্স এক্সপোর্ট এর মালিক পুকুরে মাছ চাষ করে এবং ফিড খাবার দেয় যার কারনে জলে গন্ধ লাগে এবং যারা এই ফিল্টার তত্তাবধান করে তারা যদি নিয়মিত ফিল্টার পরিস্কার করে তাহলে জলে ময়লা আসবেনা।
সুপেও পানির প্রয়োজন অনুযায়ী পুকুরের অভাব আবার পুকুর থেকে পিএসএফ এবং অন্যান্য যে সিস্টেম রয়েছে সেগুলি অধিকাংশই নষ্ট। রেইন হার্ভেষ্টিং- সিস্টেম যতগুলো দরকার ততগুলো নেই।
বাড়ি হতে ৭কিঃমিঃ পথ পায়ে হেটে খাওয়ার পানির নিয়ে আসে কালাবগী গ্রামের লাকি বেগম। তিনি জানায়, গভীর ও অগভীর নলকুপ এ এলাকাতে কার্যকর নয়। এর পানি দিয়ে ধোয়া-মোছার কাজ ছাড়া পান করা যায় না। ফলে পানির অভাব থেকেই যাচ্ছে।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকার অন্তত ১৮ জনের সাথে কথা বলে জানা যায়, এ অঞ্চলের পানির অভাব পূরন করতে হলে প্রতি ওয়ার্ডে জনসংখ্যা হিসাবে সুপেয় পানির পুকুর খনন করা এবং প্রয়োজন মত রেইন ওয়াটার হার্ভেষ্টিং-এর ব্যবস্থা করা। সর্বোপরি প্রতি ইউনিয়নের বিশেষ বিশেষ স্থানে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপন করার দরকার।