বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সত্যিকার অর্থে জনগণের প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার প্রতিষ্ঠায় সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি গণআন্দোলন শুরু করার জন্য কাজ করছি। তার অংশ হিসেবে কল্যাণ পার্টির সঙ্গে কথা বলেছি।
বৃহস্পতিবার (২ জুন) গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির সঙ্গে সংলাপ শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
সরকারের বিরুদ্ধে একটা কার্যকরী আন্দোলন গড়ে তুলে তাদের পদত্যাগে বাধ্য করার বিষয়ে একমত হয়েছি উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করেছি, তারই ধারাবাহিকতায় আজ বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির সঙ্গে আলোচনা করেছি। আমরা যে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেছি, তার মধ্যে প্রধান বিষয় ছিল বর্তমান সরকার যে জোর করে ক্ষমতায় বসে আছে সেটা নিয়ে।
তিনি বলেন, সরকার দেশের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা নস্যাৎ করেছে, নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। অর্থনীতিকে একটা লুটপাটের অর্থনীতিতে পরিণত করেছে। দ্রব্যমূল্য এতো বৃদ্ধি পেয়েছে যে, সাধারণ মানুষের জীবন এখন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য সত্যিকার অর্থে জনগণের প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য সব রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি গণআন্দোলন শুরু করার জন্য কাজ করছি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আলোচনায় উঠে এসেছে আমাদের দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে এই সরকার প্রায় তিন বছর ধরে আটক করে রেখেছে- সে বিষয়ে। বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা ৩৫ লাখ মিথ্যা মামলা বিষয়টি নিয়ে কথা হয়েছে। এই অবস্থার প্রেক্ষিতে আমরা মনে করি- খালেদা জিয়ার মুক্তি, দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার একটা বড় দাবি।
তিনি বলেন, দ্বিতীয়ত হচ্ছে আমরা মনে করি এই মুহূর্তে এই সরকারের পদত্যাগ করা উচিত। নিরপেক্ষ-নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে সেই নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। এর ফলে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি পার্লামেন্ট গঠন করে একটি সরকার হবে। আমরা মনে করি যারাই আন্দোলন সংগ্রাম করবেন তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে সরকার গঠন করা হবে। পরে রাষ্ট্রের সমস্যাগুলো আলোচনার ভিত্তিতে সমাধান করা হবে। এগুলো ছিল আলোচনার বিষয়। কারণ এই সরকার রাষ্ট্রের প্রতিটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে ফেলেছে।
কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট সক্রিয় থাকুক বা না থাকুক- কল্যাণ পার্টি বিএনপির নেতৃত্বেই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করবে।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে বিএনপি মতবিনিময় শুরু করেছে। তবে যারা ইতোমধ্যে বিএনপির সঙ্গে জোটে ছিলেন না, তাদের সঙ্গে মতবিনিময় আর যারা জোটে ছিলেন তাদের সঙ্গে মতবিনিময়ের ক্ষেত্রে কাঠামোগত কিছুটা পার্থক্য হবেই। আমরা ১০ বছর একসঙ্গে চলছি। আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করেছি বিএনপির অনুকূলে আন্দোলনে ও বুদ্ধিবৃত্তিক জায়গায় থাকতে।
মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম আরও বলেন, আজকেও আমরা বিএনপিকে প্রস্তাব দিয়েছি। বিএনপির মহাসচিব যেমনটি বলেছেন, আমরা একমত হয়েছি বর্তমান একনায়কতান্ত্রিক সরকারকে সরানোর বিষয়ে। এটা রাজনীতিতে প্রধান অগ্রাধিকার। এটা বাস্তবায়নের জন্য করণীয় হচ্ছে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন গড়ে তোলা। কল্যাণ পার্টি প্রস্তাবে বলেছে, যদি ২০ দলীয় জোটকে সক্রিয় করা সম্ভব না হয়, যেকোনো কারণে, তাহলে আমরা যুগপৎ আন্দোলন করতে প্রস্তুত। এটাও বলেছি, জোটকে সক্রিয় করার কাজে অথবা জোটের মধ্যে বিভিন্ন আরও দলগুলোকে একত্রিত করতে আমরা সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতি পূরণ করতে হলে আমাদেরকে নিশ্চয়ই অন্যান্য পদক্ষেপ নিতে হবে। আরও সীমাবদ্ধতা- বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে সাত হাজার মাইল দূরে রাখা হয়েছে। অতএব, এ দুটো সীমাবদ্ধতাকে মেনে আমাদের এগোতে হবে।