খেলাধুলায় দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা প্রতিভা বিকশিত করতে বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকদের অগ্রণী ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, তারা সুযোগ-সুবিধা পেলে বিশ্বে বাংলাদেশের জন্য সম্মান বয়ে আনবে।
এ সময় দেশের ক্রীড়া ও সাংষ্কৃতিক অঙ্গনে শেখ কামালের অবদান স্মারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে খেলাধুলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গেছে। তার ভিত্তিটা তৈরি করে দিয়ে গিয়েছিলেন শেখ কামাল।’
শনিবার (৫ আগস্ট) সকালে শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তার নামে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ পুরস্কার-২০২৩ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় ৮টি ক্যাটাগরিতে ১০ ব্যক্তি ও ২ প্রতিষ্ঠানের হাতে শেখ কামাল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ পুরস্কার-২০২৩ তুলে দেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কামালের সাংগঠনিক দক্ষতা ছিলো প্রবল। কিন্তু কখনও নেতা বা পয়সা বানারোর চিন্তা ছিলো না।’
বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামাল বেঁচে থাকলে আজ এতো দায়িত্ব নিতে হতো না বলে মন্তব্য করেন তার বড় বোন শেখ হাসিনা।
ক্রীড়াঙ্গন থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘অগ্রগতির এই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘জাতির উন্নতিতে ক্রীড়া ও সংস্কৃতি চর্চার উন্নতিও দরকার। এ জন্য বিভিন্ন প্রান্তে থাকা প্রতিভা কুড়িয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে। তাদের বিকশিত হওয়ার সুযোগ তৈরিতে বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকদেরও এগিয়ে আসতে হবে।’
সরকার সাধ্যমতো যুগোপযোগী নাগরিক গড়ে তোলার সব প্রয়াস অব্যাহত রেখেছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শেখ কামাল জাতির পিতার সুযোগ্য সন্তান হিসেবে নিজেকে তৈরি করেছিল। সে বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী ছিল। সে একাধারে দেশের সেরা ক্রীড়া সংগঠক ও ক্রীড়াবিদ, অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র এবং শিল্প-সংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ছিল। কামাল ‘স্পন্দন শিল্পীগোষ্ঠী’ প্রতিষ্ঠা করেছিল, সেখানে ধ্রুব সংগীতের পাশপাশি আধুনিক পশ্চিমা ধারার পপ্- সংগীতও চালু করেছিল। বিখ্যাত নাট্যদল ‘ঢাকা থিয়েটার’-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিল।
শেখ কামাল সাদা-মাটাভাবে চলাফেরা করতো; কিন্তু তার ব্যক্তিত্ব ছিল অসাধারণ মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সে অত্যন্ত বিনয়ী, নির্লোভ, নিরহঙ্কার ও সদালাপী ছিল। প্রধানমন্ত্রী/রাষ্ট্রপতির সন্তান হিসেবে সে কখনোই পরিচয় দিত না।’
তিনি বলেন, শেখ কামাল মুক্তিযুদ্ধ থেকে ফিরে এসে ১৯৭২ সালে ‘আবাহানী ক্রীড়াচক্র’ প্রতিষ্ঠা করে। ১৯৭২ সালে সে জার্মানির মিউনিখে ‘সামার অলিম্পিক’ দেখতে যায়। সে ১৯৭৩ সালে জার্মানির বার্লিনে ১০ম বিশ্ব যুব সম্মেলনে যোগদানের জন্য বাংলাদেশ থেকে ৭৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে গিয়েছিল। ফুটবল ছাড়াও, আবাহনী ক্রীড়াচক্রের অধীন সে হকি, ক্রিকেট এবং টেবিল টেনিস দলও গঠন করে। সে নিজে যখন বিদেশে যেত, তখন তার ক্লাবের খেলোয়াড়দের জন্য আধুনিক পোশাক এবং ক্রীড়াসামগ্রী কিনতো। সে আবাহনীতে প্রথম বিদেশি কোচ মি. বিল হার্টকে নিয়োগ করেছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা সদ্য স্বাধীন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে মননিবেশ করেন। তিনি ক্রীড়া খাতকেও যথাযথ গুরুত্ব দিয়েছিলেন। ১৯৭২ সালে তিনি জাতীয় ক্রীড়া নিয়ন্ত্রণ সংস্থা গঠন করেন এবং ১৬টি জাতীয় ক্রীড়া ফেডারেশন অনুমোদন করেন। ১৯৭৪ সালে আরও ১৮টি জাতীয় ক্রীড়া ফেডারেশন এবং বিভিন্ন জেলা ক্রীড়া সংস্থা অনুমোদন দেন। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ আইন, ১৯৭৪ (হাল নাগাদ-২০১৮) প্রণয়ন করে বাংলাদেশ ক্রীড়া নিয়ন্ত্রণ সংস্থা- আজকের জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭৫ সালে তিনি ক্রীড়াসেবী ও সংস্কৃতিসেবী কল্যাণ ফাউন্ডেশন গঠন করেন। তিনি ক্রীড়াবিদদের তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন, পূর্ব জার্মানি এবং ভারতে উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য প্রেরণ করেন। শেখ কামাল জাতির পিতার কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা অনুদান নিয়ে ‘খেলোয়াড় কল্যাণ তহবিল’ গঠন করে।
এ সময় সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা পেলে সারা দেশের প্রতিভাগুলো বেরিয়ে আসবে। তাদের তুলে আনেন। দেখবেন বাংলাদেশের জন্য এরাই সম্মান বয়ে আনবে। আমাদেরে সন্তানরা সীমিত সুযোগকেও কাজে লাগিয়ে সম্মান বয়ে আনছে। তাদের এখন পৃষ্ঠপোষকতা দরকার। সরকারতো করছেই, বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দরকার।