ভারতে অবস্থান করেও একজন এমপিওভুক্ত সহকারী শিক্ষিকা নিয়মিত স্বাক্ষর করছেন স্কুলের হাজিরা খাতায়। ব্যাংক হতে উত্তোলন করছেন বেতন-বিলের টাকাও। দীর্ঘ প্রায় এক বছর ধরে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের যোগসাজশে বেতনের টাকা ভাগাভাগির শর্তে চলছে এমন ‘তুঘলকি কাণ্ড’। এ ঘটনা খুলনার পাইকগাছা উপজেলার হরিঢালী ইউনিয়ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের।
অভিযোগ রয়েছে, বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুধাংশু কুমার মণ্ডল প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব পালনকালীন নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। এমনকি, প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়ের হিসাব কিংবা অভ্যন্তরীণ অডিট করার নির্দেশনা থাকলেও না করারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তবে, প্রতিষ্ঠানের সহকারী শিক্ষিকা লিপিকা রাণী ভদ্র বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থেকে কীভাবে দীর্ঘ এক বছর নিয়মিত হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করছেন, কীভাবে তার বেতনের টাকা উত্তোলন করছেন- এটা শুনে রীতিমত অবাক হয়েছেন সহকর্মী ও প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীবৃন্দ।
এদিকে, হরিঢালী ইউনিয়ন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুধাংশু কুমার মণ্ডল ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন। তিনি জানান, লিপিকা রাণী ভদ্রের স্বামী ভারতে বসবাস করেন। তিনি অসুস্থ, তাই সভাপতির কাছ থেকে ছুটি নিয়ে ভারতে গিয়েছেন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত লিপিকা ভারতে অবস্থান করছেন বলেও জানান তিনি। তবে, ঠিক কতদিনের ছুটি নিয়েছেন, ভারতে অবস্থান করার ক্ষেত্রে সরকারি নিয়ম অনুসরণ করে ছুটি নিয়েছেন কি না কিংবা এই ছুটির অনুমতি প্রদানে কোনও রেজুলেশন রয়েছে কি না- এমন প্রশ্নের কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি।
অন্যদিকে, নিয়ম বহির্ভূতভাবে লিপিকা ভদ্র অনুপস্থিত থাকা অবস্থায় সরকারি অর্থ উত্তোলনে সহযোগিতার অভিযোগ অস্বীকার করে স্কুল পরিচালনা পরিষদের সভাপতির দিকে অভিযোগের আঙুল তোলেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আরও বলেন, লিপিকা ভদ্র আমার দায়িত্বকালের পূর্বেও এমন কাজ করেছেন। তৎকালীন প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের সুবাদে তিনি স্কুলের কিছু টেবিল ও বেঞ্চ জরিমানা স্বরূপ প্রদান এবং প্রধান শিক্ষককে সন্তুষ্ট করে সে সময় রক্ষা পান।
হরিঢালী ইউনিয়ন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. মুনছুর আলী সরদার পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, আমি একজন বয়স্ক মানুষ। আমাকে ভুল বুঝিয়ে ও ভুল তথ্য দিয়ে বেতন-বিলের স্বাক্ষর করিয়ে নিয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুধাংশু কুমার মণ্ডল নিজে লিপিকার স্বাক্ষর জাল করে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। আমি (সভাপতি) প্রতিষ্ঠানটি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার স্বার্থে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপ-পরিচালক, দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয়, খুলনা বরাবর লিখিত আবেদন করেছি।
সদ্য যোগদানকৃত পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আল-আমিন বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে এ ধরনের কাজ করার কোনও সুযোগ নেই। আমি শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।