সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যার অডিও টেপ শুনতে চাননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। টেপটিকে ভয়াবহ উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, টেপে কী আছে, তা তাঁকে জানানো হয়েছে। তিনি নিজে সেই দুঃসহ টেপ শুনতে চান না।
আজ সোমবার বিবিসি অনলাইনের খবরে বলা হয়, গতকাল রোববার ফক্স নিউজে প্রচারিত সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এসব কথা উঠে আসে। তিনি বলেন, ‘এটা যন্ত্রণা ভোগের টেপ, ভয়াবহ টেপ।’
গত ২ অক্টোবর তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেট ভবনের ভেতর সৌদি চরেরা জামাল খাসোগিকে হত্যা করে। এ হত্যার ঘটনা বিশ্বব্যাপী আলোড়ন তুলেছে। শুরু থেকে তুরস্ক এ হত্যার ব্যাপারে সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে দায়ী করে। তবে সেই হত্যার ঘটনা অস্বীকার করলেও পরে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সৌদি আরব কনস্যুলেট ভবনের ভেতরেই সৌদি নাগরিকদের হাতে খাসোগি নিহত হওয়ার কথা স্বীকার করে। এ হত্যার সঙ্গে যুবরাজ মোহাম্মদের কোনো সম্পর্ক নেই বলে জোর দাবি করেছে দেশটি। সবশেষ সৌদি আরবের বড় মিত্রদেশ যুক্তরাষ্ট্রের অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ঘটনাটি বিচার-বিশ্লেষণ করে তাদের মনে হয়েছে, যুবরাজ মোহাম্মদের সরাসরি নির্দেশে খাসোগিকে হত্যা করা হয়।
সিআইএর এই প্রতিবেদন নতুন করে বিপাকে ফেলে ট্রাম্প প্রশাসনকে। সিআইএর প্রতিবেদনটির ওপর হোয়াইট হাউস এখনো কোনো মতামত দেয়নি। গত শনিবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেছেন, পূর্ণ প্রতিবেদনটি দু-এক দিনের মধ্যে তাঁর কাছে আসবে।
তবে ফক্স নিউজ প্রচারিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাক্ষাৎকারটি রেকর্ড করা ছিল। ওয়াশিংটন পোস্ট সিআইএর প্রতিবেদনটি প্রকাশ করার আগে ওই সাক্ষাৎকার রেকর্ড করা হয়। তাই সেটিতে সিআইএ প্রতিবেদন সম্পর্কে ট্রাম্পের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
অডিও টেপ প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, অডিও টেপে কী আছে, তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তাঁকে জানানো হয়েছে। তিনি আর ওই টেপ শুনতে চান না। তিনি আরও বলেন, ‘না শুনেও ওই টেপে কী আছে তার সব জানি। এটা খুব নৃশংস, হিংস্র ও ভয়াবহ।’
সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, এ হত্যার ব্যাপারে কিছু জানতেন না বলে যুবরাজ মোহাম্মদ তাঁকে বলেছেন।
ট্রাম্প বলেন, এ হত্যার পেছনে কে আছে, তা হয়তো কেউ জানতে পারবে না। হত্যার সঙ্গে সম্পৃক্ততা রয়েছে—এমন ১৭ জন ব্যক্তির বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টিও তিনি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘একই সঙ্গে সৌদির মতো আমাদের একটি বন্ধু আছে এবং নানা দিক দিয়ে তার সঙ্গে আমাদের ভালো বন্ধুত্ব রয়েছে। এই বন্ধুত্ব আমরা টিকিয়ে রাখতে চাই।’
যুবরাজ মোহাম্মদ ক্ষমতায় আসার পর খাসোগি দেশ ছেড়ে স্বেচ্ছানির্বাসনে চলে যান যুক্তরাষ্ট্র। তিনি ওয়াশিংটন পোস্টে কলাম লিখতেন। তাঁর লেখায় সৌদি শাসক ও যুবরাজ মোহাম্মদের সমালোচনা থাকত। তাঁর তুর্কি বাগ্দত্তা হাতিজে জেংগিসকে বিয়ে করার জন্য আগের স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদসংক্রান্ত কাগজপত্র আনতে গত ২ অক্টোবর সৌদি কনস্যুলেট ভবনে গিয়েছিলেন খাসোগি। সিআইএর প্রতিবেদনে জানানো হয়, খাসোগিকে তুরস্কে যেতে উৎসাহিত করতে ফোন করেছিলেন যুবরাজ মোহাম্মদের ভাই যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত খালিদ বিন সালমান। ভাইয়ের নির্দেশেই তিনি খাসোগিকে ফোন করেছিলেন।