‘বিএনপি কাউন্সিলের প্রস্তুতি নিচ্ছে’- দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এমন বক্তব্যের পর দলীয় প্রধান হিসেবে বেগম খালেদা জিয়ার বিকল্প হিসেবে তার পুত্রবধূ ডা. জোবায়দা রহমানকে ভাবা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে দলের মধ্যে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কেউ মুখ খুলছেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলটির এক আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক জাগো নিউজকে বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে দলের কাউন্সিল হোক বা তার মুক্তির পর কাউন্সিল হোক, দলীয় প্রধান হিসেবে দলের মধ্য থেকে তার বিকল্প ভাবা হচ্ছে।’
‘দলকে শক্তিশালী করতেই এমন ভাবনা-চিন্তা’- দাবি করে ওই নেতা আরও বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক যে অবস্থা তাতে তিনি মুক্তি পেয়ে দলের হাল কতটুকু ধরতে পারবেন, তা নিয়ে কারও কারও মধ্যে সংশয় রয়েছে। সেক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবে ধরে নেয়া যেতে পারে যে, খালেদা জিয়া দলীয় প্রধান না হলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলের প্রধান হবেন। কিন্তু এ নিয়েও কেউ কেউ ভাবছেন, কারণ তারেক রহমান তো দেশে ফিরতে পারছেন না। তিনি প্রবাসে থাকার ফলে দলের অভ্যন্তরীণ তথ্য অনেক সময় সঠিকভাবে পান না। একটি স্বার্থান্বেষী মহল তাকে বিভ্রান্ত করতে সচেষ্ট থাকে। ক্ষেত্র বিশেষ ত্যাগী নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা তৈরি হয় যা দলের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এ কারণে দলীয় প্রধানের সঙ্গে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের নিবিড় সম্পর্ক থাকা দরকার, যা এ মুহূর্তে তারেক রহমানের পক্ষে সম্ভব নয়।’
‘আবার খালেদা জিয়া-তারেক রহমান তথা জিয়া পরিবারের বাইরে কাউকে দলীয় প্রধান করার চেষ্টা হলে দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলা আরও বাড়বে। জিয়া পরিবারের কাছে দলের নেতৃত্ব ধরে রাখাসহ সার্বিক বিবেচনায় জোবায়দা রহমানকে আগামী কাউন্সিলে দলীয় প্রধান হিসেবে ভাবা হচ্ছে।’
দলের এক সাংগঠনিক সম্পাদকও নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া যতদিন বেঁচে থাকবেন ততদিন পর্যন্ত তিনিই দলের প্রধান হিসেবে থাকবেন। সংগঠনে তার শূন্যতা অনুভূত হলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান হিসেবে তারেক রহমান নেতৃত্ব দেবেন। লন্ডন থেকেও দলের নেতৃত্ব দেয়া সম্ভব। আর যদি তারেক রহমান মনে করেন যে জোবায়দা রহমানকে নেতৃত্বে আনা দরকার, সেটা তিনিই সিদ্ধান্ত নেবেন।’
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবীর খোকন বলেন, ‘কাউন্সিল নিয়ে বিক্ষিপ্তভাবে আলোচনা চলছে কিন্তু প্রাথমিক প্রস্তুতি আমরা এখনও শুরু করিনি। বিষয়টি নিয়ে স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা করে দিন-তারিখ ঠিক করা হবে। এরপর প্রস্তুতি নেব।’
দলীয় প্রধান বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে রয়েছেন, শারীরিভাবে তিনি অসুস্থ। কারামুক্তি হলে তার কি দলের নেতৃত্ব দেয়ার মতো সক্ষমতা থাকবে বা তার বিকল্প ভাবা হচ্ছে কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে খায়রুল কবীর খোকন বলেন, ‘না, এখন পর্যন্ত আমরা বিকল্প চিন্তা করছি না। দলের নেতাকর্মীরা আশাবাদী, ম্যাডাম কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবেন এবং রাজনৈতিক নেতৃত্ব দেবেন।’
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সুকোমল বড়ুয়া বলেন, ‘আমি মনে করি, কাউন্সিলের আগে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি প্রাধান্য দেয়া উচিত। তার মুক্তির আগে কাউন্সিল করা উচিত হবে না বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি।’
তিনি বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির পর তারপর দলের পরবর্তী সিদ্ধান্ত তার সঙ্গে আলোচনা করে নেয়া যাবে। কেননা তার যে দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা সেটা কাজে লাগানো উচিত।’
অবশ্য কাউন্সিলের প্রস্তুতির বিষয়ে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন কিছুই জানেন না বলে জাগো নিউজকে জানান।
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমরা আশা করছি কাউন্সিলের আগেই আমাদের নেত্রী মুক্তি পাবেন। আমরা আমাদের নেত্রীকে বাদ দিয়ে কাউন্সিল করছি না। তাকে নিয়েই কাউন্সিল করব।’