খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যকে রাজনৈতিক পণ্য বানাবেন না: তথ্যমন্ত্রী

:
: ১ বছর আগে

বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যকে রাজনৈতিক পণ্য না বানাতে দলটির নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।

তিনি বলেছেন, ‘তারা বেগম জিয়াকে রাজনীতির পণ্য বানিয়েছে। এটা তার জন্য প্রচণ্ড অবমাননাকর। বেগম জিয়ার প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা এবং সম্মান রেখে আমি তাদেরকে অনুরোধ জানাবো, দয়া করে বেগম জিয়াকে বা বেগম জিয়ার স্বাস্থ্যকে রাজনৈতিক পণ্য বানাবেন না।’

বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) দুপুরে সচিবালয়ে বাংলাদেশ সংবাদপত্র পরিষদের (বিএসপি) নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্য বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘মির্জা ফখরুল সাহেব যখন বক্তৃতা করেন, তখন মনে হয়, ভেতরে ভেতরে উনি এফআরসিএস পাস করেছেন। উনি এখন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারও বটে। কারণ, বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা বলছেন, তার (খালেদা জিয়া) শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল আর মির্জা ফখরুল সাহেব গলা ফাটিয়ে বলেন, উনি জীবন-মরণ সন্ধিক্ষণে। এখন ডাক্তারদের কথা ঠিক না ফখরুল সাহেবের কথা ঠিক, এটাই হচ্ছে প্রশ্ন।’

মির্জা ফখরুল সাহেবসহ বিএনপি নেতারা তরুণদেরকে দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, কৃষ্টি ধ্বংসের শিক্ষা দিচ্ছেন, অগ্নিসন্ত্রাসের শিক্ষা দিচ্ছেন, এ মন্তব্য করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, বুধবার চট্টগ্রামের জামালখান এলাকার রাস্তায় ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা সংগ্রামে অমর ভূমিকা রাখা মাস্টারদা সূর্যসেন, মাওলানা মনিরুজ্জামান থেকে শুরু করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন এবং স্বযত্নে রক্ষিত ম্যুরালগুলো বিএনপির তারুণ্যের সমাবেশে যাওয়ার পথে তারা ভাঙচুর করেছে। এর অর্থ বিএনপি আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি কোনোটাই মানে না এবং ধ্বংস করতে চায়। আমার প্রশ্ন, তারা তরুণদের কী শিক্ষা দিচ্ছে? এই ভাঙচুর, অগ্নিসন্ত্রাসের শিক্ষা দিচ্ছে?’

এ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের কোথাও রাস্তার পাশে এত সুন্দরভাবে ইতিহাস, ঐতিহ্যের প্রদর্শনী নেই, যেটি চট্টগ্রামের জামালখান এলাকায় করা হয়েছে। শতাধিক চিত্রকর্ম সেখানে স্থান পেয়েছে। এই দৃষ্টিনন্দন দেয়ালে আমাদের পুরো ইতিহাস তুলে আনা হয়েছে। সেগুলো তারা ভাঙচুর করেছে। এ অপরাধের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে মামলা হয়েছে। এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সরকার বদ্ধপরিকর।’

ছয়জন মার্কিন কংগ্রেসম্যান বাংলাদেশের নির্বাচন বিষয়ে সে দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর চিঠি দিয়েছেন। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী প্রায় ২০০ বাংলাদেশির প্রতিবাদলিপি দেওয়া এবং মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর কংগ্রেসম্যানদের চিঠি না পাওয়ার খবর বেরিয়েছে। এ বিষয়ে আপনার মত কী? এর জবাবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিএনপি তো ইতোপূর্বে কংগ্রেসম্যানদের নামে ভুয়া চিঠিও প্রকাশ করেছিল। যেখানে স্টেট ডিপার্টমেন্ট বলছে, তারা চিঠি পায়নি; সেখানে কংগ্রেসম্যানদের চিঠির যথার্থতা নিয়েই প্রশ্ন দেখা দেয়। তবে, কংগ্রেসম্যানরা এরকম চিঠি দিতেই পারে। শত শত কংগ্রেসম্যানের মধ্যে ছয়জন চিঠি দিয়েছে, এগুলো বাংলাদেশেই খবর হয়, অন্য কোনো দেশে খবর হয় না।’

নিউজপ্রিন্ট সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে
এর আগে বিএসপি সভাপতি ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য মোজাফফর হোসেন পল্টু এবং বিএসপির সাধারণ সম্পাদক জি এম কিবরিয়া তাদের বক্তৃতায় সংবাদপত্র পরিষদের পক্ষে নিউজপ্রিন্টের দামের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি থেকে পরিত্রাণের ব্যবস্থা, বিগত অর্থবছরগুলোর ক্রোড়পত্রের বকেয়া বিল পরিশোধ, তথ্য মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কমিটিতে বিএসপি সদস্যদের অন্তর্ভুক্তি, পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রদান ব্যবস্থা কেন্দ্রীকরণসহ কয়েক দফা দাবি তুলে ধরেন।

এ বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে নিউজপ্রিন্ট ব্যবসার একটা সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে। এই সিন্ডিকেট দাম বাড়ায়-কমায়। এই সিন্ডিকেটের কারণেই সরকারের কয়েক দফা উদ্যোগের পরও খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিল চালু করা সম্ভব হয়নি। আগে যখন বাংলাদেশে উৎপাদিত নিউজপ্রিন্ট দিয়ে পত্রিকা ছাপানো হতো, তখন বিজ্ঞাপন বাদে শুধু পত্রিকা বিক্রির অর্থ দিয়েই মোটামুটিভাবে পত্রিকা চালানো যেত। কিন্তু, এখন নিউজপ্রিন্টের একটা সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে, এটা ভাঙতে হবে। আমি এই বিষয়গুলো নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাথেও কয়েক দফা আলোচনা করেছি। এ ব্যাপারে সবারই সোচ্চার হওয়া প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।’

তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আপনারা জেনে খুশি হবেন, আমাদের মন্ত্রণালয়ের অব্যয়িত কয়েক কোটি টাকা আমরা চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরকে দেওয়ার প্রস্তাব করেছি, যাতে বকেয়া বিল পরিশোধ করতে পারে। দেশে যখন এক-দেড়শ’ পত্রিকা ছিল, তখন বিজ্ঞাপন কেন্দ্রীয়ভাবে ছিল। এখন সাড়ে ১২ শত পত্রিকা। বিজ্ঞাপন এত বেশি যে, বাস্তবতার নিরিখে এগুলো কেন্দ্রীয়ভাবে ব্যবস্থাপনা সম্ভব নয়।’