ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চান বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা

লেখক:
প্রকাশ: ৫ years ago

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) উপাচার্য অধ্যাপক এসএম ইমামুল হকের ৪৬ দিনের ছুটি মঞ্জুরের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার পর আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

ভিসির বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনের কারণে টানা ৩৫ দিন পরে মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক প্রধান ফটকের তালা খুলে দেওয়া হয়েছে। সকাল থেকেই কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যার যার কাজে ফিরেছেন।

ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ও ট্রেজারার অধ্যাপক ড. এ কে এম মাহবুব হাসান সকালেই বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য ও ব‌রিশাল শিক্ষা বো‌র্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. ইউনুস, বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিত হন। এসময় তারা ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলেন ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দ্রুত ক্লাসে ফিরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ স্বাভাবিক রাখার আহ্বান জানান।

এদিকে, দুপুর ১২টার দিকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে আনন্দ মিছিল বের করেন। মিছিলটি প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে শুরু হয়ে বরিশাল-পটুয়াখালী ও বরিশাল-ভোলা মহাসড়ক হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। মিছিল শেষে রং মেখে উল্লাস করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আবু জাফর মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, আমরা ভিসির অপসারণ নয়তো পূর্ণ মেয়াদে ছুটিতে পাঠানোর দাবি জানিয়েছিলাম। একটি অহিংস আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমাদের দাবি বাস্তবায়ন হয়েছে। এজন্য রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা। পাশাপাশি সার্বিক সহযোগিতার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, দাবি বাস্তবায়ন হয়েছে, এবার শিক্ষকরা চাই যতো দ্রুত সম্ভব শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরিয়ে নিতে ও পরীক্ষাগুলো শুরু করতে। অনেক পরিশ্রম করে হলেও গত ৩৫ দিনে পিছিয়ে পড়া ক্লাস ও পরীক্ষার ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী লোকমান হোসেন, শফিকুল ইসলাম, তনুশ্রী ভ্ট্টাচার্যসহ একাধিক শিক্ষার্থী আন্দোলনের সফলতার কথা তুলে ধরে উল্লাস প্রকাশ করে বলেন, ভিসিকে ছুটিতে পাঠানোর মধ্য দিয়ে আমাদের দাবি বাস্তবায়ন হয়েছে। এ আনন্দ প্রকাশের ভাষা আমাদের নেই। এখন আমরা চাই, আন্দোলনের কারণে পিছিয়ে পড়া পড়াশোনার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে।

দুপুরে শিক্ষকদের উপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ও ট্রেজারার অধ্যাপক ড. এ কে এম মাহবুব হাসানের সঙ্গে দেখা করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের নেতারা। এসময় তারা বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরেন ও উপাচার্য অধ্যাপক এসএম ইমামুল হকের ঘনিষ্ঠ যারা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানান।

গত ২৬ মার্চ শিক্ষার্থীদের বাদ দিয়ে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠান আয়োজন করায় প্রতিবাদ জানায় ববি শিক্ষার্থীরা। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এসএম ইমামুল হক শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে কটূক্তি করেন। এর প্রতিবাদে ২৬ মার্চ থেকেই ভিসির পদত্যাগ অথবা পূর্ণ মেয়াদে ছুটির দাবিতে প্রশাসনিক ও একাডেমিক ভবনের প্রধান ফটক আটকে আন্দোলন কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। পরে তাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন শিক্ষকরাও। অবশেষে গত সোমবার (২৯ এপ্রিল) ভিসির ৪৬ দিনের ছুটি মঞ্জুরের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর শিক্ষার্থীরা ৩৫তম দিনে আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন।

মঙ্গলবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব গেটের তালা খোলা হলেও আগামী বৃহস্পতিবার থেকে ক্যাম্পাস স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে বলে আশা শিক্ষার্থীদের।

তবে আগামী রোববারের (৫ মে) আগে ক্লাস ও পরীক্ষা কার্যক্রম পুরোদমে শুরু করা সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।