ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি

:
: ৬ years ago
ক্রেডিট কার্ড

ক্রেডিট-ডেবিট কার্ড জালিয়াতির কোনো ঘটনা প্রকাশ পেলে স্বভাবতই তা ব্যাংকের গ্রাহকদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়িয়ে দেয়। গত কয়েক বছরে এ ধরনের বেশকিছু জালিয়াতির ঘটনা উদ্ঘাটিত হয়েছে।

ওইসব ঘটনার কোনো কোনোটিতে বিদেশিরাও জড়িত ছিল। তখন দেখা গেছে, এদের মাধ্যমে বেশকিছু চক্র গড়ে উঠেছে।

এবার ব্যাংকের কার্ড জালিয়াতি করে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে শরিফুল ইসলাম নামে এক যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ১৪০০ ক্লোন কার্ড।

শরিফুলের বিরুদ্ধে পাঁচটি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে। সে রাজধানীর একটি চেইন সুপারশপের বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করার সময় গ্রাহকদের ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ডের পিন নম্বর চুরি করত হাতঘড়ির ডিভাইসের মাধ্যমে।

এরপর ওই তথ্য দিয়ে কার্ড ক্লোন করে বুথ থেকে গ্রাহকদের টাকা উঠিয়ে নিত। এ সময় সে নিজের চেহারা আড়াল করতে ব্যবহার করত পরচুলা ও কালো চশমা। বিষয়টি অভিনব মনে হলেও অপরাধের ক্ষেত্রে যে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন পন্থা অবলম্বন করা হয়ে থাকে তা অজানা নয়।

জানা যায়, শরিফুল উচ্চতর পড়ালেখার জন্য রাশিয়া গিয়েছিল। সেখান থেকে খনি প্রকৌশল বিষয়ে ডিগ্রি নিয়ে দেশে ফিরে আসে। আসার সময় রুমমেটের কাছ থেকে শিখে আসে ব্যাংকের কার্ড জালিয়াতির কৌশল।

বোঝা গেল, দেশে ফিরে সে সুশিক্ষার পরিবর্তে কুশিক্ষাটাকেই কাজে লাগিয়েছিল দ্রুত ধনী হওয়ার বাসনায়। কিন্তু বিধি বাম! ধরা পড়ে গেল। তবে চিন্তার বিষয় হল, শরিফুলের মতো আরও কতজন এ ধরনের অপকর্মে নিয়োজিত রয়েছে তা আমাদের অজানা।

এসব কাজে যারা জড়িত, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জোরালো তদন্তের মাধ্যমে তাদের চিহ্নিত ও গ্রেফতার করতে হবে। এই অপরাধীরা সাধারণ মানুষের ব্যাংক আমানতের টাকা চুরিতে লিপ্ত, কাজেই তাদের সাজা হতে হবে কঠোর। সেই সঙ্গে ব্যাংকের গ্রাহকদেরও সচেতন হতে হবে নিজেদের পিন কোড ব্যবহারে।

তবে এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় দায়িত্ব পালন করতে হবে ব্যাংকগুলোকে। এটা ঠিক, প্রযুক্তিগত উন্নতির কারণে গত এক-দেড় দশকে দেশের ব্যাংকিং কার্যক্রমে গুণগত পরিবর্তন এসেছে। অনলাইন ব্যাংকিং, এটিএম কার্ড, মোবাইল ব্যাংকিং ইত্যাদি সেবার মাধ্যমে ব্যাংকগুলো তাদের ব্যাংকিং সেবাকে গ্রাহকের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছে।

তবে দেখা যাচ্ছে, এসব ক্ষেত্রে নানা জালিয়াতি ও প্রতারণার ঘটনাও ঘটছে। অনেক ক্ষেত্রে গ্রাহকদের নানাভাবে বিড়ম্বনার শিকারও হতে হচ্ছে। এসব রোধে ব্যাংকগুলোকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। জোরদার করতে হবে নজরদারি কার্যক্রম। কারণ অনেক সময় ক্রেডিট-ডেবিট কার্ড জালিয়াত চক্রের সঙ্গে ব্যাংকের কর্মচারীদেরও যোগসাজশ থাকে।

উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকে অপরাধ-দুর্নীতির প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সেসব ঘটনার সঙ্গে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংশ্লিষ্টতাও পাওয়া গেছে। মোটকথা, ব্যাংকিং সেবা নিতে গিয়ে কেউ যেন কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে মূলত সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃপক্ষকেই। আর অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে।