ক্যামেরুনের বিপক্ষে ১০ পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নামবে ব্রাজিল!

লেখক:
প্রকাশ: ২ years ago

আগে থেকেই ইনজুরিতে আক্রান্ত নেইমার, দানিলো। সেই তালিকায় যোগ দিয়েছেন অ্যালেক্স সান্দ্রো। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে ক্যামেরুনের বিপক্ষে এই তিনজন খেলতে পারবেন না- এটা নিশ্চিত।

তবে আফ্রিকান প্রতিপক্ষের বিপক্ষে আজ মাঠে নামার আগে ব্রাজিল দল নিয়ে আরও দুশ্চিন্তা বাড়ছে সমর্থকদের। কারণ, পুরো ব্রাজিল দলটাই যেন এখন মিনি হাসপাতাল। যার ফলে ক্যামেরুনের বিপক্ষে পুরোপুরি দ্বিতীয় সারির দল মাঠে নামানোর সম্ভাবনাই বেশি কোচ তিতের। পুরো ১১জন না হলেও অন্তত ১০টি পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে বলা জানা যাচ্ছে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের খবরে।

মূলত ব্রাজিল ফুটবলারদের মধ্যে ফ্লু আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। কেউ বলছে কোভিড-১৯। আবার কেউ বলছেন, নতুন কোনো ফ্লু। কিন্তু কোথা থেকে এই ফ্লুয়ের আগমণ, সেটা নিয়েই চিন্তিত সবাই।

যদি, এসব দুশ্চিন্তার মধ্যেই আশার আলো- গোড়ালির চোট সারিয়ে সুস্থ হয়ে উঠছেন নেইমার। ফিট হওয়ার পথে দানিলোও। বৃহস্পতিবার অনুশীলনও করেছেন ব্রাজিল দলের সাইড ব্যাক দানিলো। বাঁ-পায়ের গোড়ালিতে চোট পেয়েছিলেন তিনি।

বুধবার তার চোটের জায়গায় সিটি স্ক্যান করা হয়। রিপোর্ট যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক। বৃহস্পতিবার ফিজিওথেরাপিস্ট ও ট্রেনারদের তত্ত্বাবধানে হালকা অনুশীলনও করেন তিনি।

সবকিছু ঠিক থাকলে বিশ্বকাপের প্রি-কোয়ার্টার ফাইনাল তথা দ্বিতীয় রাউন্ড থেকেই দানিলোর মাঠে ফেরার সম্ভাবনা প্রবল। শেষ ষোলোয় মাঠে নেমে পড়তে দেখা যেতে পারে নেইমারকেও। আর সেই প্রত্যাবর্তনে আশায় বুক বাঁধছেন স্বয়ং ব্রাজিল সুপারস্টার নিজে। এই নিয়ে টানা ছয়দিন দলের অনুশীলনে নেই নেইমার। পুল সেশনে আলাদা ট্রেনিং করেছেন তিনি। তবে সেখানে অনেক চনমনে দেখা গেছে সেলেসাওদের মধ্যমনিকে।

নেইমার নিজেই জানিয়েছেন, গোড়ালির চোট ‘শূন্য’-তে নেমে এসেছে। অর্থাৎ আগের চেয়ে অনেক সুস্থবোধ করছেন তিনি। তবে চোটমুক্তি ঘটলেও এখনও পুরো ফিট নন। কারণ নেইমার থেকে ভিনিসিয়াস জুনিয়র সবাই কম বেশি আক্রান্ত অজানা ‘ফ্লু’তে। ফলে চোটের পাশাপাশি হালকা জ্বর আক্রমণ করেছে ব্রাজিল শিবিরকে।

স্বাভাবিক কারণেই ক্যামেরুন ম্যাচের আগে কোনোরকম ঝুঁকি নিতে রাজি নন কোচ তিতে। চোট আর ফ্লু আক্রান্তদের বিশ্রাম প্রয়োজন। দলকে নিরাপদ রাখতেও দলে ব্যাপক রদবদল আনতে হচ্ছে কোচকে। আগের দুই ম্যাচের প্রথম একাদশ থেকে অন্তত দশজন ফুটবলারকে বদলে ক্যামেরুনের বিপক্ষে একাদশ তৈরি করার সম্ভাবনা বেশি তিতের।

মূলত ফ্রান্স কোচ দিদিয়ের দেশমই এই পথ দেখিয়ে দিয়েছেন। তিউনিসিয়ার বিপক্ষে ১০জনই পরিবর্তন করে দেন তিনি। যদিও ১-০ গোলে হারতে হয়েছিলো ফরাসীদের। ব্রাজিল কোচেরও জয়-পরাজয়ের ভয় নেই। সার্বিয়া এবং সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে জিতে এরই মধ্যে দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত করে ফেলেছেন তিনি। এমনকি ক্যামেরুনের কাছে হেরে গেলেও সম্ভবত শীর্ষস্থান থাকছে তাদের দখলেই। এ কারণেই বড় রদবদল আনতে যাচ্ছেন তিনি।

নকআউটের ম্যাচগুলোর জন্যই দলকে তৈরি করার দিকে মনযোগ এখন বেশি কোচ তিতের। তবে, ব্রাজিল শিবিরে এই মুহূর্ত সবচেয়ে বেশি সচেষ্ট কোচ তিতে না দলের ডাক্তার রডরিগো লাসমার, বলা কঠিন। চোট আর জ্বর মিলিয়ে ব্রাজিল শিবিরে এই মুহূর্তে আক্রান্ত ফুটবলারের সংখ্যা- সাত।

চোট আর জ্বরে আক্রান্ত ফুটবলারদের নামগুলো দেখলেও যে কেউ আঁতকে উঠবে। নেইমার- গোড়ালির চোট এবং ভাইরাল জ্বর। দানিলো- গোড়ালির চোট। অ্যালেক্স স্যান্দ্রো- নিতম্ব এবং থাই মাসলে চোট। অ্যান্টোনি- জ্বর থেকে ওঠার পর অস্বস্তি। পাকুয়েতা- ভাইরাল জ্বর। ভিনিসিয়ুস জুনিয়র- ভাইরাল জ্বর। অ্যালিসন- জ্বর জ্বর ভাব সঙ্গে অস্বস্তি।

ব্রাজিলের টেকনিক্যাল টিমের বাইরে পুরো মেডিকেল টিম এখন সচেষ্ট কিভাবে দ্রুত এই ভাইরাল জ্বরের মোকাবিলা করা যায়। ব্রাজিল দলের ভেতরের মিনি হাসপাতাল হওয়ার খবর বাইরে আসতেই চাঞ্চল্য বেড়ে যায় ব্রাজিল মিডিয়ায়। বৃহস্পতিবার সবাই হাজির হয়েছিলেন ব্রাজিল দলের মিডিয়া সেন্টারে। অনেকটা বাধ্য হয়েই টিম ডাক্তার রদ্রিগো লাসমারকে সংবাদ সম্মেলন করে ব্যাখ্যা দিতে হয় ফুটবলারদের শারীরিক অবস্থা নিয়ে।

ব্রাজিলের মেডিকেল টিম প্রাথমিক ভাবে মনে করছে, এই ভাইরাল জ্বর নিয়ে এখনই মাথাব্যথার মতো কিছু ঘটেনি। সকাল বা বিকেলের দিকে তিতে যখন প্র্যাকটিস করাচ্ছেন, তখন দোহায় মারাত্মক গরম। প্র্যাকটিসের পরেই ফুটবলাররা এসে তাপানুকুল ঘরে ঢুকে পড়ছেন। এতেই ঠান্ডা-গরমে কাহিল হচ্ছেন ফুটবলাররা।

পরিস্থিতি সামাল দিতে বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে আসতে হয় ব্রাজিল দলের কো অর্ডিনেটর জুনিনহো পওলিস্তাকেও। কারণ, শুধু তো জ্বর নয়। টিম হোটেলে অনেক ফুটবলারের বমিও হয়েছে। যদিও সেই ফুটবলারদের নাম প্রকাশ্যে আনতে চাচ্ছে না টিম ম্যানেজমেন্ট।

কোভিডের কোনো শঙ্কা আছে কি না তা জানিয়ে কো অর্ডিনেটর পওলিস্তা বলেন, ‘এই জ্বরের সঙ্গে কোভিডের কোনও সম্পর্ক নেই। এমনকি, কোভিড হয়েছে কিনা, তা পরীক্ষা করে দেখার মতো অবস্থাতেও পুরো ব্যাপারটা পৌঁছোয়নি। ফুটবলারদের শারীরিক সমস্যা নিয়ে আমরা সর্বক্ষণ নজর রাখছি।’

স্বাভাবিকভাবেই জানতে চাওয়া হয় নেইমারের চোটের শেষ পরিস্থিতির বিষয়ে। জুনিনহো এবং রদ্রিগো লাসমার দু’জনেই নেইমারের চোট নিয়ে একই কথা বললেন, ‘আগের চেয়ে পরিস্থিতি অনেকটাই ভাল। চিকিৎসার মধ্যেই আছেন তিনি। তবে ঠিক কোন ম্যাচে নেইমার মাঠে নামতে পারবে, আনুষ্ঠানিকভাবে এখনই কিছু বলা সম্ভব নয়।’