ক্যান্সার শব্দটি শুনলে সবাই আঁতকে ওঠেন। অনেকের ধারণা, একবার ক্যান্সার হওয়া মানেই ফলাফল নিশ্চিত মৃত্যু।
এ ধারণা একেবারেই অমূলক। আধুনিক বিজ্ঞানের কল্যাণে এখন আর ক্যান্সার মানেই অবধারিত মৃত্যু নয়। শুরুতেই দ্রুত শনাক্ত করতে পারলে এ রোগের চিকিৎসা, এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভও সম্ভব। নিত্যনতুন অধিক কার্যকরী কেমোথেরাপি জাতীয় ওষুধ আবিষ্কৃত হচ্ছে, রেডিওথেরাপিসহ অত্যাধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার যথাযথ প্রয়োগে বেশ কিছু ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগী সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ করছে। উন্নত বিশ্বে মৃত্যুর কারণগুলোর মধ্যে ক্যান্সার দ্বিতীয়, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে তৃতীয়। এক হিসাবে দেখা গেছে, বিশ্বের ১২ ভাগ মৃত্যুর জন্য ক্যান্সারই দায়ী। তাই ক্যান্সার হওয়ার আগেই একে প্রতিরোধ করা প্রয়োজন।
একটু সচেতন হলেই ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব। ক্যান্সার নামক এই বিভীষিকার হাত থেকে বেঁচে থাকতে হলে আমাদের দরকার যথাযথ শিক্ষা ও সচেতনতা। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ক্যান্সারের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কারণ জীবনযাপনের সঙ্গে জড়িত। সুতরাং এগুলোকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এক-তৃতীয়াংশ ক্যান্সারের ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব। এক্ষেত্রে যে নিয়মগুলো মেনে চলা উচিত তা হলো— ধূমপান সম্পূর্ণভাবে ত্যাগ করা। মনে রাখতে হবে ধূমপানে বিষপান। অন্যান্য তামাক জাতীয় দ্রব্য যেমন সাদাপাতা, জর্দা ইত্যাদি ব্যবহার বন্ধ করা। শিরায় ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে মাদক গ্রহণ এবং অন্য সব ধরনের নেশা পরিহার করা। খাদ্যাভ্যাস সুন্দরভাবে অনুসরণ করা, যেমন— সুষম খাবার গ্রহণ, পর্যাপ্ত পরিমাণে আঁশ ও এন্টি-অক্সিডেন্টযুক্ত খাবার খাওয়া, তাজা মৌসুমি ফলমূল ও শাকসবজি খাওয়া, চর্বিজাতীয় ও তৈলাক্ত খাবার কম খাওয়া, প্রিজারভেটিভ বা কেমিক্যালযুক্ত খাবার বর্জন, ফাস্টফুড ও কোমল পানীয় বর্জন, রঙিন খাদ্য ও পানীয় বর্জন ইত্যাদি।
আর্সেনিকমুক্ত পানি পান নিশ্চিত করা। নিয়মিত হাঁটাচলা, ব্যায়াম এবং সঙ্গে খাদ্য নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে শরীরের ওজন ঠিক রাখা। যারা কসমেটিকস ব্যবহার করেন তারা যেন ভেজাল ও নিম্নমানের কসমেটিকস পরিহার করেন। দীর্ঘসময় সরাসরি সূর্যের নিচে না থাকা উচিত, প্রয়োজনে ছাতা বা হ্যাঁট ব্যবহার করা ভালো। রক্তদান বা গ্রহণ অথবা যে কোনো ইঞ্জেকশন গ্রহণের সময় এবং এন্ডোস্কপি, কলোনোস্কপি ইত্যাদি পরীক্ষার সময় সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা। বেশ কিছু জীবাণুর বিরুদ্ধে টিকা নিয়ে ক্যান্সার প্রতিরোধ সম্ভব, যেমন হেপাটাইটিস বি-ভাইরাস, হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসের টিকা ইত্যাদি। যেসব জীবাণু এবং রোগব্যাধি ক্যান্সার তৈরি করতে পারে তা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী দ্রুত চিকিৎসা করা। কর্মক্ষেত্রে ক্যান্সার তৈরিকারী রেডিয়েশন বা কেমিক্যালের সংস্পর্শ পরিহার করা। এক্ষেত্রে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ নিশ্চিত করা। পরিবেশ দূষণ, বিশেষ করে বায়ু ও পানিদূষণ বন্ধ করা। শরীরের কোথাও চাকা বা গোটা, ক্ষত, তিলের রঙ পরিবর্তন, দীর্ঘদিনের জ্বর, দ্রুত ওজন কমে যাওয়া, খাদ্যে অরুচি, পায়খানার কোনো পরিবর্তন (যেমন পায়খানার সঙ্গে রক্ত যাওয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য), প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত যাওয়া, কাশির সঙ্গে রক্ত যাওয়া ইত্যাদি দেখা দিলে অবহেলা না করা। প্রত্যেক সুস্থ ব্যক্তিরই উচিত নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো যাতে শরীরে কোনো ক্যান্সার দানা বাঁধতে শুরু করলে তা প্রাথমিক অবস্থায়ই দমন করা সম্ভব হয়। বিশেষ করে বয়স্কদের বৃহদান্ত্র বা কোলন, মহিলাদের জরায়ুমুখ ও স্তন, পুরুষদের প্রোস্টেট ইত্যাদি নিয়মিত পরীক্ষা করার প্রয়োজনীয়তা আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানে স্বীকৃত। এসব স্থানে ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা থাকে বিধায় নিয়মিত স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে প্রতিরোধ সম্ভব।