বিশ্বের জনপ্রিয় ও বহুল ব্যবহৃত কোলগেট ব্র্যান্ডের টুথপেস্টে ক্যান্সারের উপাদান আছে কি না তা পরীক্ষা করবে সরকারি মান নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই)। পরীক্ষায় ক্ষতিকর কোনো উপাদান মিললে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি পণ্যটির আমদানি বন্ধ করে দেয়া হবে।
বুধবার বিএসটিআইয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
জানা গেছে, বিশ্বের জনপ্রিয় টুথপেস্ট ব্র্যান্ড কোলগেট। বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত এ টুথপেস্টে ব্যবহার করা হচ্ছে ক্ষতিকর উপাদান ট্রাইক্লোসেন, যা দীর্ঘদিন ব্যবহারে দাঁতের মাড়ির ক্ষতিসহ ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ের একটি গবেষণা এমনটিই বলছে।
বিএসটিআই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বিদেশি একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান কোলগেট টুথপেস্ট নিয়ে প্রতিবেদন দিয়েছে। তারা জানিয়েছে, এতে ট্রিকলোসা নামের একটি ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার হয়, যা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। কোলগেট টুথপেস্ট দেশে তৈরি হয় না। এটি আমদানি করা হয়। তারপরও বিএসটিআইয়ের পক্ষ থেকে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। টুথপেস্টটি পরীক্ষা করা হবে। যদি ক্ষতিকর কোনো উপাদান পাওয়া যায় আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। ফলে আমদানিও বন্ধ করে দেয়া হবে বলে জানান বিএসটিআই কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে বিএসটিআই পরিচালক (সিএম) এস এম ইসহাক আলী বলেন, কোনো পণ্যের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠলে বিএসটিআই তা পরীক্ষা করে। কোলগেট টুথপেস্টের বিষয়টি বিএসটিআই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেখছেন।
জানা গেছে, কোলগেটের পক্ষ থেকে বলা হয় টুথপেস্টের ব্যবহৃত ট্রাইক্লোসেন মাড়ির রোগ প্রতিরোধ করে। এ বিষয়ে ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) অনুমোদন দেয়। সম্প্রতি এ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে খোদ এফডিএ! কারণ কোলগেটের অনুমোদন পত্রেই আছে তারা ট্রাইক্লোসেন ব্যবহার করছে, যাতে ক্যান্সারের ঝুঁকি রয়েছে। তবে এতো দিন বিষয়টি প্রকাশ না হওয়ায় সাধারণ মানুষ এ বিষয়ে কিছু জানত না।
সম্প্রতি টক্সিকোলজি জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে ট্রাইক্লোসেন উপাদান ক্যান্সারের সেলের বৃদ্ধি ঘটাতে পারে। তবে এবারই প্রথম এ ধরনের তথ্য প্রকাশ পায়নি। বরং এর আগেও এ ধরনের গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে। সেখানেও বলা হয়েছে যে, এ ধরনের উপাদান মানুষের শরীরে মারাত্মক ক্ষতি ডেকে আনতে পারে।
মানুষের চামড়া ভেদ করে শরীরে প্রবেশের ক্ষমতা রয়েছে ট্রিকোসান নামের এই রাসায়নিক উপাদানটির। এটি শরীরে ঢুকে বিভিন্ন হরমোন এবং বিভিন্ন গ্রন্থির স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত করে।
এই উপাদানটি রাসায়নিক শিল্পে ব্যাপকহারে ব্যবহৃত হয়। লন্ড্রি ডিটারজেন্ট, বিভিন্ন পরিষ্কারক সামগ্রী, ডিওডোরেন্ট এবং অ্যান্টিস্যাপটিকসে এর অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এ উপাদানটি ক্ষতিকারক কারণ এটি মানুষের ত্বকের ভেতরে প্রবেশ করে রক্তে মিশে যেতে পারে। ফলে শরীরে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়।
ট্রাইক্লোসেনের এ ক্ষতিকর দিকটি সামনে আসার পরও কোলগেট তাদের টুথপেস্টে এই উপাদানের ব্যবহার বন্ধ করেনি। বরং তাদের দাবি, এই উপাদান মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয়। কানাডায় ইতোমধ্যে এই উপাদানের ব্যবহার বন্ধ করা হয়েছে।