ঢাকা মহানগরে নির্বাচনী গণসংযোগের সপ্তম এবং শেষ দিনে আজ রোববার উত্তরার আজমপুরে গণসংযোগ ও প্রচারপত্র বিতরণ করেছে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনে ভোট চাওয়ার মতো করেই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের তাঁর বক্তব্য শুরু করেন। বক্তব্যের শুরুতে তিনি সবাইকে সালাম দিয়ে বলেন, ‘কেমন আছেন মুরুব্বিরা? ভাইয়েরা কেমন আছেন? তরুণ ভাইয়েরা কেমন আছ? চারদিকে কী? নৌকার জয়ধ্বনি।’
ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের শুরুতে মঞ্চের সামনে থাকা নেতা-কর্মীরা নিজেদের উপস্থিতি জানান দিতে বিশৃঙ্খলা করেন। এর কারণে গণমাধ্যমের কর্মীরা বিশেষ করে টেলিভিশনের ক্যামেরাপারসনেরা কাজ করতে পারছিলেন না। এ সময় ওবায়দুল কাদের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘শোডাউন করে যাঁরা মনোনয়ন দাবি করবেন, নিজের পছন্দমতো প্রার্থীর পক্ষে স্লোগান দিয়ে দাবি আদায় করবেন, সেই ধারণা যাঁরা করছেন—শোডাউনে কারও নমিনেশন (মনোনয়ন) হবে না। যারা শোডাউনের নামে বিশৃঙ্খলা করবে, তাদের নম্বর কাটা যাবে। আমি কিন্তু সব লক্ষ করছি, গোয়েন্দা সংস্থা এখানে মনিটরিংয়ে আছে। কারা কী করছে, সব দেখছি। প্রার্থীদের বলব, ক্যাডারদের থামান। না হয় কিন্তু আপনার নম্বর কাটা যাবে। ক্যাডারের ওপর যদি নেতার নিয়ন্ত্রণ না থাকে, এই নেতাগিরি করে কী লাভ?’
গত ৭ দিনে ২৫টি সমাবেশ করার কথা উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, হাজার হাজার জনতার ঢল, কোথাও কোনো বিশৃঙ্খলা হয়নি। কোথাও হয়নি। তিনি বলেন, ‘উত্তরা একটি ভদ্র এলাকা। আমি ভেবেছিলাম, এখানে একটি সুন্দর-সুশৃঙ্খল সভা হবে। আমি আবারও বলছি, শেষ পর্যন্ত কর্মীদের প্রমাণ করতে হবে যে আমরা একটি সুশৃঙ্খল দল আওয়ামী লীগ। ঠিক আছে? আছে কোথায় ঠিক? তোমরা তো সব উল্টাপাল্টা। এই ব্যানার, এই পোস্টার, এই বিলবোর্ড এই সব দেখে মনোনয়ন হবে না। মনোনয়ন হবে জনমতের ভিত্তিতে। শেখ হাসিনার কাছে সব প্রার্থীর আমলনামা জমা আছে। সামনে আরও ২০-২৫ দিন সময় আছে, নম্বর যাদের ভালো আছে, ক্যাডারের জন্য নম্বর কিন্তু কমে যাবে। যে নেতা ক্যাডারের কথায় চলে, ওই নেতার আমাদের দরকার নেই।’
দলে চাঁদাবাজদের জায়গা না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘চাঁদাবাজদের, দখলবাজদের প্রশ্রয় দেবেন না। চাঁদাবাজের জায়গা আওয়ামী লীগে নেই। এরপরে যারা অপকর্ম করবে, তাদের বিরুদ্ধে ধানমন্ডিতে শেখ হাসিনার কার্যালয়ে গিয়ে নালিশ করবেন। বিচার করা হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘রাজনীতি করি মানুষের জন্য। সে-ই নেতা, যে মানুষকে ভালোবাসে। সে-ই নেতা যাকে মানুষ ভালোবাসে। এটা বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি, শেখ হাসিনার রাজনীতি। এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। তাফালিং করবা না। পরিণতি ভালো হবে না। তাফালিং ছাড়ো, ক্ষমতার দাপট দেখাবে না। ক্ষমতার অহংকার মানুষ পছন্দ করে না।’
এ সময় সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ইয়াবা, মাদক ও দুর্নীতিকে না বলেন। তাঁর সঙ্গে নেতা-কর্মীরাও কণ্ঠ মেলান। পরে তিনি নেতা-কর্মীদের মোটরসাইকেলে তিনজন না ওঠার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আমার দুর্ভাগ্য। ঢাকা শহরে এখন বেশির ভাগ লোক হেলমেট পরে মোটরসাইকেলে ওঠে। কিন্তু রাজনৈতিক কর্মীরা মোটরসাইকেলে হেলমেট ব্যবহার বেশির ভাগ ক্ষেত্রে করে না। এটা বদ অভ্যাস। এটা ত্যাগ করবা। তুমি যদি হেলমেট ছাড়া মোটরসাইকেলে ওঠো, একটা গাড়ি ধাক্কা দিল, তুমি পড়ে গেলা। শরীর হাসপাতালে গিয়ে মেরামত করা যায়, কিন্তু মাথায় যদি ইনজুরি (আঘাত) হয়, মেরামত করা যায় না। সে জন্যই হেলমেট ব্যবহার করতে হবে।’
নির্বাচনের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন কোনো সরকার গঠন করা হবে না বলেও উল্লেখ করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, এই সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে। সরকার শুধু ‘রুটিন ওয়ার্ক’ করবে। এ ছাড়া সরকারের আকার ছোট হবে। কোনো অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের সুযোগ নেই।
সরকারের উন্নয়নের বিবরণ দিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিদ্যুতের কী অবস্থা? মানুষ তখন (বিএনপির আমলে) কী বলত? গেল রে গেল খালেদা (বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া) গেল। বিদ্যুৎ গেলেই বলত খালেদা গেল। বিদ্যুতের শতভাগ শেখ হাসিনা আপনাদের দিয়েছে। ১৬ কোটি মানুষের ১৫ কোটির হাতে মোবাইল দিয়েছেন শেখ হাসিনা। ৯ কোটির হাতে ইন্টারনেট। ৯ কোটির ঘরে ঘরে ইন্টারনেট। আর কী দেবে?’
বিএনপির উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির খবর কী? আছে? আন্দোলন কবে হবে? মওদুদ আহমদ আগস্ট মাসে বলেন এক মাসে। সেপ্টেম্বরে বলেন এক মাসে। অক্টোবরে এসে বলেন এক মাসের মধ্যে আন্দোলন হবে এবং দেশের চেহারা বদলে যাবে। মওদুদ আহমদের কথা, ‘বহুরূপী’ ব্যারিস্টারের কথা মানুষ কি বিশ্বাস করে? তিনি আরও বলেন, বিএনপি জাতিসংঘের মহাসচিবের কাছ থেকে চিঠি পাওয়ার নামে মিথ্যাচার করেছে। কোটা আন্দোলন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনের ওপর ভর করে শেষে নালিশ আর গুজবের ওপর ভর করেছে। বিএনপির মূল অস্ত্র গুজব–সন্ত্রাস। গুজব–সন্ত্রাসের মতো অপকর্মের কারণে বিএনপিকে জবাব দিতে হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ঢাকা–১৮ আসনের সাংসদ সাহারা খাতুনের সভাপতিত্বে গণসংযোগে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, এ কে এম এনামুল হক শামীম, দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ প্রমুখ অংশ নেন। এ ছাড়া ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতা-কর্মীরা গণসংযোগে অংশ নেন।
© স্বত্ব আর্থটাইমস্ ২৪.কম
প্রকাশক ও সম্পাদক: মোঃ জাকারিয়া আলম (দিপু)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ:বরিশাল-৮২০০।
আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:::
নিউজ মেইল:::
earthtimes24@gmail.com(নিউজ)
news@earthtimes24.com(নিউজ)
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
২০১৭ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত earthtimes24.com