কৌতিনহো-নেইমারে কষ্টের জয় ব্রাজিলের

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago

সেন্ট পিটার্সবার্গ রাশিয়ার সাংস্কৃতিক রাজধানী। আর ফুটবল সংস্কৃতির রাজধানী বলা যায় ব্রাজিলকে। দুই দেশের সংস্কৃতি যেন একাকার হলো শুক্রবার। সেন্ট পিটার্সবার্গ  নেভা নদীর তীরে অবস্থিত। অসংখ্য খাল আর সেতুর সমারোহ অঞ্চলটিতে। ব্রাজিলও মাঠে আক্রমণের অনেক সেতু এঁকেছে। কিন্তু শুরুতে গোল পায়নি। এ সেতু, সে সেতু ঘুরে শেষমেষ গন্তব্যে পৌঁছেছে ম্যাচে যোগ করা সময়ে। ম্যাচের ৯১ মিনিটের মাথায় গোল করে দলকে প্রথম লিড এনে দেন কৌতিনহো। আর শেষ বাঁশি বাজার ঠিক আগে গোল করলেন নেইমার।

সমর্থকদের উপহার দিলেন চোখ ভরা কান্না। কোস্টারিকার বিপক্ষে আর ২-০ গোলে জয়। গত বিশ্বকাপে ইনজুরি নিয়ে মাঠ ছাড়ার পর বিশ্বকাপে আবার গোল করলেন নেইমার।

বিশ্বকাপে তার এই গোল তিন মাসের বেশি সময় ইনজুরিতে থাকার পর। রাশিয়া বিশ্বকাপে ‘ই’ গ্রুপে সেন্ট পিটার্সবার্গে শুক্রবারের ম্যাচটি ব্রাজিল-কোস্টারিকা দুই দলের জন্যই ছিল কঠিন পরীক্ষা। ফেবারিট ব্রাজিলের লক্ষ্য ছিল জয় নিশ্চিত করে টুর্নামেন্টে নিজেদের দ্বিতীয় রাউন্ডের পথ পরিষ্কার করা। আর প্রথম ম্যাচে হারের পর কোস্টারিকার দরকার ছিল বিশ্ব আসরে টিকে থাকা।

ছবি: দ্য গার্ডিয়ান

ম্যাচের প্রথমার্ধ গোলশূন্য সমতা এবং হতাশা নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় ব্রাজিলকে। এরপর দ্বিতীয়ার্ধও গোলশূন্য সমতার দিকে যাচ্ছিল। কিন্তু শেষ সময়ে জালে দারুণ এক বল জড়িয়ে দিয়ে আসরে নিজের দ্বিতীয় গোল করলেন কৌতিনহো। সঙ্গে নিশ্চিত করলেন দলের জয়। আর ৯৭ মিনিটে গোল করে দলের জয়টা বড় করলেন নেইমার।

ম্যাচে বল দখলের হিসেবে ব্রাজিলের কাছে পাত্তাই পায়নি কোস্টারিকা। সেলেকাওরা ৭২ শতাংশ বল পায়ে নিয়ে খেলেছে। আক্রমণও করেছে বেশ। ম্যাচে গোল এবং গোলের বাইরে ২০টি শট নিয়েছে সেলেকাওরা। কিন্তু কোস্টারিকার গোলরক্ষক কেইলর নাভাস ‘চীনের প্রাচীর’ হয়ে দাঁড়ান ব্রাজিলের সামনে। তাই বার বার কোস্টারিকার গোলরক্ষকের হাতে গিয়ে শেষ হয়েছে আক্রমণগুলো।

ছবি: দ্য গার্ডিয়ান

ম্যাচের ৩ মিনিটে ভালো একটি শট নেন কৌতিনহো। কিন্তু তার দূর পাল্লার শটটি গোলের বেশ ওপর দিয়ে যায়। ১৩ মিনিটে দলকে এগিয়ে নেওয়ার দারুণ এক সুযোগ পায় কোস্টারিকা। ফাঁকায় বল পেয়েও বাইরে মারেন কোস্টারিকার বোরগেস।১৭ মিনিটে ফ্রি কিক থেকে বক্সের মধ্যে ভালো একটি শট নেন নেইমার। কিন্তু কাজে আসেনি তার শট। ২৬ মিনিটে নাভাসের জালে বল পাঠান জেসুস। কিন্তু অফ সাইডের ফাঁদে পড়েন তিনি। ৩০ মিনিটে আবার ওপর দিয়ে শট মারেন কৌতিনহো। এরপর নেইমার ৩৩ মিনিটে গোল করার দারুণ এক সুযোগ পান। কিন্তু গোলরক্ষকের সামনে থেকেও বলটি নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেননি তিনি।

ম্যাচের ৪৩ মিনিটে ব্রাজিল বক্সে ভয় ধরান ভেনেগাস। ৪৫ মিনিটে আবার ফ্রি কিক পায় কোস্টারিকা। কিন্তু তা থেকেও ব্যবধান বাড়াতে পারেনি। কোস্টারিকা অবশ্য ম্যাচে ভালো কিছু কাউন্টার অ্যাটাক তুলেছে। কিন্তু গোল করতে না পারায় গোল শূন্য সমতা নিয়ে শেষ করতে হয় দু’দলকে।

ছবি: দ্য গার্ডিয়ান

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে উইলিয়ানকে তুলে নিয়ে ডগলাস কস্তাকে মাঠে নামান ব্রাজিল কোচ তিতে। ধার বাড়ে ব্রাজিলের আক্রমণেও। ৪৮ মিনিটে পাউলিনহোর বাড়ানো ক্রসে গোলের কাছাকাছি পৌঁছে যান নেইমার। নাভাসকে ফাঁকি দিতে পারেননি। ৪৯ মিনিটে জেসুসের হেড বারে লেগে ফিরে আসে। এরপরই কৌতিনহো গোল দেওয়ার সুযোগ পান। কিন্তু তার গড়ানো শট ধরতে অসুবিধে হয়নি বিপক্ষে গোলরক্ষকের।

৫৬ মিনিটে আবার সুযোগ পান পাউলিনহো। কিন্তু তিনি কাজে লাগেতি পারেননি সে সুযোগ। ৫৮ মিনিটে গোলের সুযোগ মিস করেন কৌতিনহো। ৬৩ মিনিটে গোল করার ভালো একটি সুযোগ হারান নেইমার। এরপর ম্যাচের ৭২ মিনিটে ম্যাচের অন্যতম সহজ সুযোগটি মিস করেন নেইমার। সামনে নাভাসকে পেয়েও একটু দূর থেকে নেওয়া তার শটটি বার ঘেঁষে চলে যায়। ৭৮ মিনিটে নেইমার কৌশলে পেনাল্টি আদায় করলেও পরে ভিডিও দেখে রেফারি তা নাকচ করে দেন।

ছবি: দ্য গার্ডিয়ান

এরপর ৮৫ মিনিটে ম্যাচের নায়ক হতে পারতেন কৌতিনহো। কিন্তু সেটি মিস করে ম্যাচের ৯১ মিনিটে নায়ক হলেন তিনি। ব্রাজিল স্ট্রাইকার জেসুসের পাস ধরে গোল করে দলকে এগিয়ে নেন ব্রাজিলের এই মিডফিল্ডার। এরপর ৯৭ মিনিটে ডগলাস কস্তার পাস পা বাড়িয়ে গোলে ঢুকিয়ে দিয়ে শেষ কাজটা করেন নেইমার। এই জয়ে দুই ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট টেবিলে শীর্ষে উঠল ব্রাজিল। প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায় লেখা হয়ে গেছে কোস্তারিকার নামে।