কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভ রোববার

লেখক:
প্রকাশ: ৭ years ago

কোটা বাতিলের বিষয়ে জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণার প্রজ্ঞাপন জারির দাবিতে রোববার সারা দেশের প্রতিটি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দিয়েছে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। বিক্ষোভ চলাকালীন সকল ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকবে।

শনিবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, গত পরশু কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার আন্দোলনকারী ভাইয়ের উপর অতি উৎসাহী কিছু সন্ত্রাসী হামলা চালায়। রংপুরে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন কর্মসূচিতে পুলিশ বাধা দেয় এবং আন্দোলনকারীদের ছবি তুলে গ্রেফতারের হুমকি দেয়। এছাড়া পরিষদের যগ্ম-আহ্বায়ক জসিম উদ্দিন আকাশের বাড়িতে (চট্টগ্রামের বাঁশখালি) হামলা হচ্ছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। পাশাপাশি হামলাকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাই।

মামুন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার প্রজ্ঞাপন জারির দাবিতে দেশের প্রতিটি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে রোববার সকাল ১১টায় বিক্ষোভ মিছিল করা হবে। বিক্ষোভ চলাকালীন সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত সকল ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ থাকবে।

পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক নুরুল হক নুর বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কোটা বাতিলের ঘোষণার ৩১ দিন পার হয়ে গেলেও এখনও প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি। আমরা বারবার তাগিদ দিয়েছিলাম। কিন্তু এখন নতুন কমিটি গঠনের কথা বলে ছাত্র সমাজের সাথে নতুন প্রহসন করছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য তারা টালবাহানা করছে।

তিনি বলেন, আমরা আন্দোলন করেছি, প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন। তাহলে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যক্তির ঘোষণার প্রজ্ঞাপন জারি হতে এতো দেরি কেন? অতি দ্রুত প্রজ্ঞাপন জারি করে বাংলার ছাত্রসমাজকে শান্ত করুন।

সংবাদ সম্মেলন চলাকালীন যুগ্ম-আহ্বায়ক জসিম উদ্দিন আকাশের বাড়িতে হামলা হয় বলে অভিযোগ করা হয়। এ প্রসঙ্গে জসিম বলেন, আন্দোলনে সংশ্লিষ্টতার কারণে আমার বাসায় হামলা করা হয়েছে। সন্ত্রাসীরা আমার পরিবারের সবাইকে মেরে আহত করেছে। শুক্রবার আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়েছে। আজ তারা আমার বাসায় ভাঙচুর করছে। আমি ন্যায়ের জন্য আন্দোলনে এসেছিলাম বলে আজ আমার ও আমার পরিবারের উপর এই পরিণতি। আমি এর বিচার চাই।

সংবাদ সম্মেলনে এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন, যুগ্ম-আহ্বায়ক রাশেদ খান, ফারুক হাসান, বিন ইয়ামিন মোল্লা ও মাহফুজ খানসহ কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার কোটা সংস্কারে কমিটি গঠনের প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। প্রস্তাবনা পাঠানোর পর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোজাম্মেল হক খান জানান, গঠনের ১৫ দিনের মধ্যে কোটা পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন দেবে কমিটি। মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে প্রধান করে কমিটি গঠন করা হবে। কমিটির সদস্য সংখ্যা হতে পারে পাঁচ থেকে সাত। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, লেজিসলেটিভ বিভাগের সিনিয়র সচিব, অর্থ সচিব, সরকারি কর্মকমিশনের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সচিবের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। কমিটিতে কে কে থাকবেন, তা নির্ধারণ করবেন প্রধানমন্ত্রী। তার অনুমোদনের পর কমিটি গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি হবে। তবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কমিটি গঠনের এ উদ্যোগকে আন্দোলন ভণ্ডুলের ষড়যন্ত্র আখ্যা দিয়ে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন আন্দোলনকারীরা।

প্রসঙ্গত, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ২০১৩ সাল থেকে আন্দোলন করছে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তা গতি পায়। আন্দোলনকারীদের দাবি, কোটায় ১০ শতাংশের বেশি নিয়োগ নয় এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে মেধাতালিকা থেকে শূন্যপদ পূরণ করতে হবে।

গত ৮ এপ্রিল শাহবাগ অবরোধ করে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। পুলিশ তাদের উঠিয়ে দিলে রাতভর ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। সে রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও তাণ্ডব চালায় দুর্বৃত্তরা। পক্ষে-বিপক্ষে সংসদ ও দেশব্যাপী তুমুল আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে ১১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী সংসদে ঘোষণা দেন, চাকরিতে আর কোটাই থাকবে না। তবে আদিবাসী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে। কোটা বাতিলের ঘোষণার পর আন্দোলনকারীরা ক্যাম্পাসে আনন্দ মিছিল করে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘মাদার অব এডুকেশন’ উপাধিতে ভূষিত করে। এরপর তারা প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশের দাবি জানিয়ে আসছে। সর্বশেষ গত বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধন থেকে বৃহস্পতিবারের (১০ এপ্রিল) মধ্যে প্রজ্ঞাপনের দাবি জানান। অন্যথায় রোববার (১৩ এপ্রিল) থেকে তারা ফের আন্দোলনের নামবেন বলে ঘোষণা দেন।

বর্তমানে সরকারি চাকরিতে নিয়োগে ৫৬ শতাংশ পদ বিভিন্ন কোটার জন্য সংরক্ষিত। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান কোটা ৩০ শতাংশ, নারী ১০ শতাংশ, জেলা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ৫ শতাংশ ও প্রতিবন্ধী ১ শতাংশ।