আগামী ২৪ এপ্রিল (মঙ্গলবার) দুপুর দুই টায় শাহবাগে মহাসমাবেশ করবে মুক্তিযোদ্ধা মহা-সমাবেশ বাস্তবায়ন পরিষদ। কোটা সংস্কারের দাবিকে স্বাধীনতা বিরোধী চক্রের ‘তথাকথিত আন্দোলন’ আখ্যায়িত করে তা প্রতিহত করতে এই সমাবেশ করবেন তারা।
সমাবেশ থেকে জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষা ও প্রিয় স্বাধীনতার বিরুদ্ধে সব ষড়যন্ত্র প্রতিহত করার লক্ষ্যে কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন পরিষদের আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ আহাদ চৌধুরী।
সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এই মহাসমাবেশের ঘোষণা দেয়া হয়। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা মহা-সমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব আলহাজ মিনাজুর রহমান, আব্দুস সালাম মজুমদার প্রমুখ।
আহাদ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা কোনো সুযোগ-সুবিধা কিংবা কিছু পাওয়ার আশায় জীবনবাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধ করিনি। কোটা আমরা কখনও চাইনি। মহান নেতা বঙ্গবন্ধু এ কোটার ব্যবস্থা করেছিলেন। তবে অতি সম্প্রতি তথাকথিত কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে স্বাধীনতাবিরোধী চক্র চাতুরতার সঙ্গে কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রী ও যুবকদের মাঝে ভ্রান্ত ধারণা সৃষ্টির মাধ্যমে দেশব্যাপী অরাজকতা সৃষ্টি করেছে। যা মূলত মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি সরাসরি আঘাত’।
তিনি বলেন, কুচক্রি মহল এসব ছাত্রদের দিয়ে মুযোদ্ধাদের অপমান করেছে। যারা মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করলো তাদের বিচার কি আমরা পেতে পারি না?’
৩০ শতাংশ কোটা মুক্তিযোদ্ধাদের প্রয়োজন আছে কিনা জানতে চাইলে এ বিষয়ে সরাসরি উত্তর না দিয়ে তিনি বলেন, এটা সরকারের বিষয়। প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন কোটা থাকবে না। সেটা হলেও কোনো সমস্যা নেই। আবার বলেছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে কোটা সংস্কারে কাজ করছে, সংস্কার হলেও আপত্তি নেই। প্রধানমন্ত্রী যেটা করবেন সেটাতেই আমরা রাজি’।
তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি মুক্তিযোদ্ধাদেরকে বঙ্গবন্ধুর দেয়া যে কোনো সুবিধা নেত্রী দিতেও পারেন আবার নাও দিতে পারেন। মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের প্রতি ইতোপূর্বে জননেত্রী যে শ্রদ্ধাবোধ দেখিয়েছেন তাতে আমরা গর্ববোধ করি। আমরা বিভ্রান্ত হওয়া ছাত্র-ছাত্রী ও যুবকদের কাছে ব্যথিত হৃদয়ে জানাতে চাই, মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান না দাও, কিন্তু অপমান করিও না।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ১৯৯১ সাল থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আন্দোলন করছি, কোটার জন্য নয়। মুক্তিযোদ্ধারা যেনো একটু ভাল থাকে সে জন্য আন্দোলন করছি। আমাদের আন্দোলন এখনও যেসব মুক্তিযোদ্ধা রিক্সা চালান তাদের অবস্থার উন্নয়নের জন্য’।
আহাদ চৌধুরী বলেন, তথাকথিত কোটা সংস্কারের নামে স্বাধীনতাবিরোধীরা ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপচেষ্টা চালিয়েছে। দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধারা এই পরিস্থিতিতি চুপচাপ বসে থাকতে পারে না। স্বাধীনতা বিরোধীদের এই হীন চক্রান্তকে প্রতিহত করা এখন সময়ের দাবি। আজকে কোনো দ্বিধা নয়, কোনো দ্বন্দ্ব নয়, কোনো নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা নয়। সব মুক্তিযোদ্ধা এবং দেশপ্রেমিক জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই চক্রান্তকে প্রতিহত করতে হবে।
তিনি সব মুক্তিযোদ্ধাসহ দেশপ্রেমিকদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে এ কর্মসূচি সফল করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমরা অবশ্যই দেশের স্বাধীনতা ও স্বার্বভৌমত্ব রক্ষা তথা দেশবিরোধী সব ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে সক্ষম হব’।
আহাদ চৌধুরী বলেন, ‘বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিমাসে ১০ হাজার টাকা ভাতা পান। এমনও মুক্তিযোদ্ধা রয়েছে এ টাকা দিয়ে তাদের চিকিৎসা ব্যয়ই মেটে না।
তিনি বলেন, ‘১৯৭২ সাল থেকে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা থাকলেও সেটা কি আদৌ মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানরা পেয়েছে? ১৯৭২ থেকে ৭৫ সাল পর্যন্ত ছিল এক রকম অবস্থা, ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত ছিল অন্য রকম পরিস্থিতি, ১৯৯৬ থেকে ২০০১, ২০০১-২০০৬, সর্বশেষ ২০০৮ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা কোটার জন্য ছিল ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশ। সব মিলিয়ে গড়ে ৫ শতাংশ কোটাও মুক্তিযোদ্ধারা পায়নি’।