প্রিয়তম্ উজ্জ্বল.
কোটা নিয়ে হুলুস্তুল কান্ড ঘটে গেল। মেধাবী শিক্ষার্থীরা দফায় দফায় রাস্তা অবরোধ করল। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট ডাকল। একপ্রকার জোয়ার দেখলাম। কিন্তু আমি এ অযুক্তিক দাবীর সাথে একমত হতে পারি নি। আমি মনে করি বাংলাদেশ থেকে এখনও কোটা উঠে যাবার মত সময় আসেনি। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে এখনও কোটার প্রয়োজন আছে। বাংলাদেশে সরকারী চাকরীতে ২৫৮ ধরনের কোটা রয়েছে। বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সূত্রমতে ১ম শ্রেণির চাকরীতে ৫ ধরনের কোটা রয়েছে। এগুলো হল মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ,জেলা কোটা ১০ শতাংশ,উপজাতি ৫ শতাংশ,প্রতিবন্ধী ১ শতাংশ। মোট ৫৬ শতাংশ। মেধাবী শিক্ষার্থীদের দাবী তারা এই কোটার আধিক্যের কারনে সরকারী চাকরী পাচ্ছে না। তাই তারা কোটা সংস্কার চায়। তাদের দাবী কোটা মোট ১০ শতাংশ করা হোক। তাদের মতে মুক্তিযোদ্ধা ৫ শতাংশ,নারী ১ শতাংশ,প্রতিবন্ধী ৩ শতাংশ,পার্বত্য কোটা ১ শতাংশ। মেধাবীদের এই কোটা বিন্যাস দেখে আমি লজ্জিত। আমার মনে হয় কোটা বিরোধীরা সব কোটা নিয়ে আন্দোলন করছে না। মূলত তারা বোঝাতে চাচ্ছে মুক্তিযোদ্ধা কোটা কেন ৩০ শতাংশ? এদের লড়াইটা হল ঐ ৩০ শতাংশকে নিয়া। প্রায় মেধাবী আন্দোলনকারীকে তাচ্ছিল্য ভরে বলতে শুনেছি নাতি-পুতিরা কেন কোটা পাবে? যদি তাদের কোটা দেয়া হয় তবে রাজাকারের সন্তানদের কেন ফাঁসি দেয়া হয়না? আমি বাকরুদ্ধ হয়ে যাই।এরা দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত। ধিক্কার জানাই ওদের শিক্ষাকে।
যারা দেশের জন্য জীবন দিল,নিজের কথা পরিবারের কথা একটুও না ভেবে দেশের তরে ঝাপিয়ে পরে আমাদের স্বাধীনভাবে বাঁচতে শিখিয়েছে,আমাদের একটা স্বাধীন ভূখন্ড দিল তাদের আত্মত্যাগের এই প্রতিদান? মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের তো বিনা পরীক্ষায় চাকরী দেয়া হয়নি? তবে তোমাদের এত ক্ষোভ কেন? আমার লেখা পড়ে হয়তো সবাই ভাবছেন আমার কোটা আছে। মাথা ঝুলিয়ে বলব হ্যাঁ আছে – নোমো কোটা। যেটার কোন প্রচলন নেই। একাত্তরে রেখে যাওয়া পাইক্কাদের বংশধরদের কথা।আমার কথা নয়। আমি রাগ করি না।সয়ে গেছে। পাঁকিরা মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় হিন্দুদের নির্যাতন করেছে বেশি। তার বংশধররা এখন পেলে যে হিন্দুদের ছেড়ে দিবে তা ভাবি কেমনে? কোটার কোষ্টকাঠিন্যে ঔষধ দিতে হল স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীকেই। তিনি এসে ঘোষণা দিলেন – সরকারী চাকরীতে কোন কোটা থাকবে না কিন্তু নৃগোষ্ঠী ও প্রতিবন্ধীদের বিবেচনা করা হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমি আপনার কথায় পুরাপুরি সমর্থন দিতে পারি নি। কোটা তুলে দিলে আমরা আবার পিছিয়ে পরব। যারা আমার লেখা পড়ছেন তারা লিখে রাখুন যদি সত্যিই কোটা তুলে দেয়া হয় তবে ২০ বছর পর আবার কোটার জন্য আন্দোলন করবেন। গগন বিদারী চিৎকার দিবেন কোটা চাই, কোটা চাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি বঙ্গবন্ধু কন্যা,আপনার কাছে আমাদের চাওয়া অনেক। আপনি নিজ মুখে স্বীকার করেছেন বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করবেন। আপনার অভিমান মানায় না। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিরা আপনার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। আপনি বঙ্গবন্ধু কন্যা না হলে আপনাকে বলতাম না। কোন আবদারও থাকতো না। আপনার কথা মতই কোন কোটা থাকবে না তবে এর আগে ছোট্ট একটা কাজ করুন। বাংলাদেশের সকল প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা,ও তাদের সন্তান,নাতীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী বিনা পরীক্ষায় সরকারী চাকরী দিয়ে কোটা তুলে দিন। তাদের ক্ষেত্রে কোন বয়স বিবেচনা করা হবেনা। বর্তমানে বাংলাদেশে সরকারী চাকরীর পদ খালি আছে ২ লাখ ৭৫ হাজার ৫৮৭ টি।এবং যুদ্ধাপরাধীর সন্তান,নাতী,পূতি যারা সরকারী চাকরীতে কর্মরত তাদের চাকরী থেকে অব্যহতি দিয়ে দিলে দেশের সূর্যসন্তানদের পরিবারের জন্য নতুন কোন পদ তৈরি করতে হবেনা। এতে করে সবাইকে চাকরী দেয়া যাবে বলে আমার ব্যক্তিগত অভিমত।
অনেকের কাছেই এ প্রস্তাবনাকে উদ্ভট বলে মনে হতে পারে। তাদের উদ্দেশ্যে বলব- যারা সোনার বাংলা নির্মানকারী সৈনিকদের শ্রদ্ধার চোখে দেখেন না তাদের জন্য এমনই করা উচিত। যদি মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবার কোটা না পায় তবে যারা দেশের জন্য কিছু করেনি তারা কেন তাদের সমান হবে। একটা সাধারন লোকের নাতী আর একজন মুক্তিযোদ্ধার নাতী এক নয়। যদি কেউ মনে করেন এক।তবে আমার দাবী মানতে হবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পৈত্রিক সম্পত্তিও পুত্রকে দেশের প্রচলিত দামে সরকারের কাছ থেকে কিনে নিতে হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের জন্য বরাদ্দকৃতকোটা করুনা নয় এটা তাদের সম্মান। এ সম্মান কেড়ে নিবেন না মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। আমি চাই প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা হোক। ভগবান শ্রীরাম সতী সীতাকে প্রজাদের বিশ্বাস অর্জনের জন্য গর্ভবর্তী অবস্থায় বনবাসে দেয়ার কারনে অযোধ্যা নগরী ধ্বংশ হয়ে গিয়েছিল। সাধারন ক্ষমার কারনে পিতার নির্মম মৃত্যু দেখতে হয়েছে। পিতার মুখের কথা “সবাই পায় সোনার খনি আমি পেয়েছি চোরের খনি” কিভাবে আমরা ভাববো সেই চোর আজ সাধু হয়ে গেছে? আমাদের পরে স্বাধীন হয়েও অনেক দেশ উন্নত হয়েছে কিন্তু আমরা পারছি না। কিন্তু কেন? এর কারন একটাই মমতা?
কাদের মমতা দেখাবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যারা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পিতার বুকের উপর বুলেট চালিয়েছিল? যারা আজও বঙ্গবন্ধুকে বাঙালী জাতীর পিতা বলে স্বীকার করেনা? যারা আপনার জনসভার নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ছিল? যারা আজও স্বাধীন বাংলাদেশে থেকে নিজেকে রাজাকার বলে দম্ভ করে। ওদের মমতা দেখালে প্রিয় পতাকা আবার ছিন্ন ভিন্ন করবে।
আপনি মমতাময়ী মা বলবেন- সন্তান অন্যায় করতেই পারে তাই বলে আমি কি নির্দয় হব?
সবিনয়ে বলতে চাই – যারা দেশের কথা ভাবেনা তারা দেশের সন্তান নয়,তারা আমার ভাই নয়,ওরা পাঁকিদের প্রেতাত্তা।ওদের দমন করুন। নচেৎ ওরা আবার আমার সোনার বাংলাকে পিছিয়ে দেবে। পিতাকে হাড়িয়ে এমনিতেই আমরা অনেক পিছিয়ে পড়েছি। তাই হটকারী প্রজাদের অযোক্তিক দাবী মেনে সোনার বাংলাকে অযোদ্ধা নগরী বানাবেন না। একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা এক একটা সতী সীতা। সতী নারীর অভিশাপ বিফলে যায়না। সে আপনি আমার চাইতে অনেক ভাল জানেন।
আসুন জেনে নেই কোটার আদ্যোপান্ত-
♦ কোটা কি?
– কোটা হচ্ছে অনগ্রসর গোষ্ঠিকে সামনে এগিয়ে নিয়ে আসার একটা প্রক্রিয়া মাত্র। ধরুন একটা সমাজের ৩ জন লোক স্টোডিয়ামে খেলে দেখতে গিয়েছে। স্টোডিয়ামের চারপাশে ৪ ফুট উচু দেয়াল রয়েছে।১ম ব্যক্তির উচ্চতা ৫.৭ ফুট, ২য় লোকটির উচ্চতা ৪ ফুট এবং ৩য় ব্যক্তির উচ্চতা ৩ ফুট। যদি কোন সুবিধা না দেয়া হয় তবে এই ৩ জনের মধ্যে মাত্র একজন খেলে দেখতে পারছে বাকি দুজন বঞ্চিত হচ্ছে। এখন যদি তিন জনকেই খেলা দেখানোর ব্যবস্থা করা হয় তবেই দরকার হবে কোটার। যদি ৩য় ব্যক্তির পায়ের নিচে ২ ফুট ও ২য় ব্যক্তির পায়ের নিচে ১ ফুট উচু কোন বস্তু দিয়ে দেয়া যায় তবে সবাই ভাল ভাবে খেলা দেখতে পারবে। তবে স্টোডিয়াম নির্মানকারী লোকজনের পরিবারের প্রতি কোন সুযোগ সেটা কোটা হিসাবে নয় সম্মান হিসাবে পরিগনিত হবে।
♦ কোটা না থাকলে কি ক্ষতি হবে।
– বাংলাদেশে এখনও কোটার দরকার রয়েছে। এই কোটা দেশের জন্য মঙ্গলজনক বলে আমি মনে করি। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে এখনও কোটার প্রয়োজন আছে। মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা ৩০ শতাংশ। এটা তাদের সম্মানর্থে।এটা কমানোর পক্ষে আমি নই। তারা যা দিয়েছে সে ঋণ আমরা কোনদিনই শোধ করতে পারব না। তাই ওই ৩০ শতাংশ নিয়া কোন কথা বলতে চাইনা।
নারী কোটা ১০ শতাংশ। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ৭ শতাংশ নারী চাকরী করছে। নারীবাদীরা আমার সাথে একমত না হয়ে বলবে যে দেশের প্রধানমন্ত্রী,বিরোধীদলের নেত্রী,স্পিকার,বিচারপতি,সংসদ উপনেতা,ভিসি নারী সে দেশে কোটার দরকার কি?
আপনাদের কথা যদি মেনে নেই তবে পত্রিকাখুলে নারী নির্যাতনের চিত্র দেখে কেন শিউরে উঠি? যতটা দৃশ্যমান নারীরা ততটা এখনও এগিয়ে যায় নি। কথাটা তেতো হলেও সত্যি যে বেশিরভাগ নারীই চাকরী করে কোটায়। যেমন সংসদেও ৫০ আসন রয়েছে কোটায় যেটা নারীর জন্য সংরক্ষিত। নারীরা বেশি চাকরী করছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এমন একটা জনশ্রুতি রয়েছে। অনেকের মতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৬০% নারী কোটা রয়েছে। যাতে করে নারীর চাকরী সোজা হয়েছে বলে বিজ্ঞ সমালোচকগন মনে করেন। আমাদের সামাজিক প্রক্ষাপট কিছুটা বদলেছে। এখন মেয়েরা স্কুলে যেতে পারছে,তাদের মতামতের কিছুটা হলেও মূল্য তারা পাচ্ছে পরিবারের কাছে। কিছু পরিবারে মা চাকরী করছে। একটুখানি সুবিধা পেয়ে কিছু চঞ্চল নারীরা নিজেদের মানুষ ভাবতে শুরু করেছে। ভুলে গেছে বিগত ইতিহাস। তারা কোটাকে এখন করুনা ভাবছে,তারা করুনা চায়না। সেই মেধাবী নারী সমাজকে বলি- তোমাদের করুনা করা হচ্ছে না,দেশের মঙ্গালার্থে একটা সুযোগ দেয়া হচ্ছে। কারন নারীকে পিছনে রেখে দেশকে এগিয়ে নেয়া সম্ভব নয়।তারপরও যদি মনে কর এটা করুনা তবে তোমাদের জন্য ৪৬% খালি রয়েছে। একটা ঘটনা বলি – একটা মশার বাচ্চা হয়েছে। মা অনেক কষ্ট করে তাকে উড়তে শেখাচ্ছে। এখন বাচ্চাটা কিছুটা উড়তে পারে। একদিন মা মশাটা বাইরে যাবে তাই বাচ্চাকে বলছে- মা মনি তুমি বাইরে যাবেনা।ভাল করে উড়তে শেখা হলে তখন যেও। বাচ্চা মশা বলল ঠিক আছে মা। মা মশা চলে যাবার পরই ফড়িং এসে বলল বাচ্চা মশা জানো নিচে বাগানটা কত সুন্দর। যাবে তুমি? প্রথম বাচ্চা মশাটি রাজি হয়নি পরে রাজি হল। সে ভাল ভাবেই ঘুরে এল। বাসায় এসে না পেয়ে মা মশা তো অস্থীর।কোথায় গেল? কিছুক্ষন পর বাচ্চা মশা ফিরে এসে মাকে গর্ব করে বলছে জানো মা আজ আমি লোকালয়ে গিয়েছিলাম। তুমি তো বললা মানুষরা নাকি ভাল নয়। কিন্তু ওরা তো আমাকে উড়তে দেখে হাতে তালি দিচ্ছিল। তুমি এত মিথ্যাবাদী কেন মা? মা বাচ্চা বুকে নিয়ে বলল – ওটা খুশির হাতে তালি নয় ওটা মৃত্যুফাঁদ।
*জেলা কোটা
স্বাভাবিকভাবেই ঢাকায় বসবাস করা মানুষগুলো সব দিক থেকে এগিয়ে। জেলা কোটা না থাকলে গ্রামের ছেলে মেয়েদের চাকরী পাওয়া দুষ্কর হয়ে যাবে। এইখানে ছোট্ট একটা ঘটনা বলি- আমার একমাত্র মৌসাতো বোন।বাড়ি গলাচিপা। ও খুব ভাল গান গায়। ওর অনেক দিনের ইচ্ছা একটা সাউন্ড বক্স কিনবে। কিন্তু কিছুতেই কিনতে পারছেনা। কারন ওর হাতে ১৫০০ টাকা নেই। মেসোর কাছে বললে তখনই কিনে দিবে। কিন্তু ও সেটা চায়না।সে নিজে কিনতে চায়। আমার কাছেও টাকা নেই কারন আমিও গ্রামে থাকি। ৫ বছর পর ওর সাথে দেখা।ওরা এখন ঢাকা থাকে। কাওরান বাজার বসে দেখা। আমি বেড়াতে এসেছি। কথা বলার এক পর্যায়ে আমার ফোনটা বেজে উঠল। আমি কথা বলে ফোন রাখতেই ও বলল – দাদা তুই এখনও নকিয়া ১২০০ মোবাইল চালাও?
আমি বললাম – কথা তো ভালই চলে। সে উত্তর না দিয়ে ব্যাগ থেকে একটা স্মার্ট ফোন বের করে বলল – মাত্র ২৫০০০ টাকা। একটা কিনে নিস।
কিছু বোঝা গেল?
তবে আরেকটা ঘটনা বলি। ২০১৬ ডিসেম্বরে ঢাকা এসেছি চাকরীর খোজে। কোথাও চাকরী পাচ্ছিনা।সবাই রেফারেন্স চাচ্ছে আমিও রেফারেন্স দিয়া চাকরী করব না। একটা বিপিও কোম্পানিতে আবেদন করেছিলাম। সেখানে চাকরীর মত ভাইভা নিয়া একটা ট্রেনিং করালো। সরকারি ট্রেনিং এস ই আই পি। ৩ মাস ট্রেনিং শেষে বছর খানেক পরে ৬০০০ টাকা পেলাম। কি শিখেছি সেটা না জানাই ভাল। তারপর তারা আবার ডাকলো এয়ারটেল নাকি আমাদের চাকরী দেবে। আমি যাইনি। তবে ভেবেছি শুধু সরকারি টাকাগুলো ধান্দবাজরাই পায়। বিপিওর মাধ্যমে আমার পরিশ্রমলব্ধ টাকা পায় অন্য একজন। প্রাইভেট কোম্পানীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলে মেয়েদের আলাদা একটা কদর থাকে। আমি জাতিয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বদাই অবজ্ঞার পাত্র। আমার ট্রেনার নামকরা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ অধ্যয়নরত। আমি অর্থনীতিতে মাস্টার্স। ম্যাম ফটাফট ইংরেজী বলে,কানের এপাশ ওপাশ দিয়ে যায় কিছুই বুঝিনা। সে তো মহাবিরক্ত। একদিন আমায় জিজ্ঞাসিল বাসায় কম্পিউটার আছে?
আমি বললাম না। ম্যাম এমন ভাব করল যেন তার বাড়া ভাতে ছাই দিয়েছি। মুখ কুচকিয়ে বলল – অনার্স মাস্টার্স করা একটা ছেলের বাসায় কম্পিউটার নাই! আসলে আপনারা ন্যাশনালের ছেলেমেয়েদের নিয়া আর পারি না। মাত্র ২৫০০০ টাকা জোগাড় করতে পারেন নি। কিভাবে প্রাইভেট জব করবেন শুনি?
মনে মনে বলেছিলাম ২৫০০০ টাকা একমাসে হাতে নিয়ে খরচ করার সাধ্য আমার হয়নি এখনও। এটা শুধু আমার কথা নয়। লক্ষ লক্ষ গ্রামের শিক্ষার্থীর কথা। সেই জেলা কোটা উঠালে আমার মত দরিদ্র সন্তানরা চাকরী পাবে কিভাবে? সব চাকরী তো ঢাকার ছেলে মেয়েরা পাবে। প্রশ্ন করতে পারেন গ্রামের অনেক ছেলে মেয়েরা তো জেলা কোটা চায় না,তাদের কি বলবেন?
তাদের শুধু এইটুকু বলব – শিল্পপতির বাসায় টিউশনি করে তার বাসায় রাতে কোরমা পোলাও খেয়ে চাপা মারা হচ্ছে আমি প্রতিরাতে কোরমা পোলাও খাই। মা বলতেন ” খয়রাতির টাকা হলে কুত্তার ছাও কেনে” গ্রাম থেকে এসে কোন ছেলে যদি জেলা কোটা না চায় তবে তার ট্যাকনিক্যাল সমস্যা আছে। উপজাতি,প্রতিবন্ধিদের কথা বলার কি বলার প্রয়োজন আছে?
♦ যাদের বয়স নেই তারা কেন কোটা আন্দোলনের সাথে ছিল?
– অনেকেই উত্তর দিয়েছেন একটা যোক্তিক আন্দোলনের সাথে একাত্বতা প্রকাশ।কিন্তু আমার তা মনে হয়না। সরকারকে বে-কায়দায় ফেলতে এদের আগমন। তারা যদি এত দরদী হয় তবে নিজেরা কিভাবে আমাদের ক্ষতি করছে? একটা মেধাবী ছেলে পিয়ন থেকে বিসিএস সব পরীক্ষাই দিয়ে থাকে। সে অনেক পরিক্ষায় উত্তীর্ন হয়েও থাকে। কিন্তু তাতে তার হয়না। বড় চাকরী পাবার আশায় সে আবার পরীক্ষা দেয়। অনেকের মাঝে মাঝে হয়ে যায়। আগের চাকরী ছেড়ে দিয়ে নতুন চাকরীতে যোগদান করে। কিন্তু একটা পদ খালি হয়। সরকার কিন্তু একটা পদের জন্য ফের নিয়োগ দেয়না। তবে কাদের কপাল পুড়লেন সম্মানিত মেধাবীগন? তোমাদের এত যখন মেধা একটা চাকরীতে কর্মরত অবস্থায় অন্য চাকরী খোজ কেন? দ্বৈতনীতি বাদ দেও তবে কোটার সংস্কারের প্রয়োজন হবে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আইনসহ বাস্তবায়ন করুন সরকারী চাকরীতে কর্মরত অবস্থায় অন্য কোন সরকারী চাকরীতে আবেদন করা যাবেনা। যদি আবেদন করতে হয় তবে পূর্বের চাকরী ইস্তফা দিয়ে তবেই আবেদন করা যাবে। চাকরীর জন্য লড়াই করবে বেকার ছেলেমেয়েরা। পিতার রাজ্যে এই বৈষম্য চাইনা। মেধাবীরা আসো খোলা মাঠে দেখি তোমাদের কত দম।
♦ যদি কোটা বন্ধ করতে হয় তবে আরও অনেক কিছু বন্ধ করতে হবে।
– আমি মুক্তিযোদ্ধা কোটা বন্ধের পক্ষে নই। কারন কোন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটা আন্দোলনে আসেনি। যদি এসে থাকে তবে বুঝে নিতে হবে ফুলের মধ্যে গোবর পোকা জন্মেছে।
কোটা বন্ধ করলে নিম্মোক্ত সুবিধা বন্ধ করে দিতে হবে
১. সকল পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতিয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশকৃতদের সকলক্ষেত্রে নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে। যদি সে ব্যবস্থা না করা হয় তবে কোন পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশকৃত কেউ জাতিয় বিশ্ববিদ্যাল নিয়োগ দিতে পারবে না।
২. পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা যে পরিমান সরকারী সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকে সেই সুযোগ সুবিধা সবার ক্ষেত্রে দিতে হবে
৩. মাতৃত্বকালীন ছুটি বন্ধ করে দিতে হবে। কারন নারী পুরুষের সমান অধিকার।
৪. নারীদের জন্য সংরক্ষিত সংসদীয় আসন বিলুপ্তি করতে হবে।
৫. বাস,লঞ্চ,স্টিমার, রেস্তরা সহ বিভিন্ন যানবাহন থেকে শুরু করে সকল ক্ষেত্রে নারীর জন্য সংরক্ষিত আসন বাতিল করতে হবে।
৬.শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া বিলুপ্তি করতে হবে।
বঙ্গবন্ধুর বাংলায় এই বৈষম্য আগে দূর করতে হবে। তারপর কোটা সংস্কার করলে আমার কোন আপত্তি নেই। তবে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ বহাল তবিয়তে রাখতে হবে।
লেখক.
কবি ও সাংবাদিক.