ফল বেরোনোর আটচল্লিশ ঘণ্টা কেটে গেলেও তিন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন, তা ঠিক করতে হিমশিম খাচ্ছে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব। টানা দুদিন ধরে বৈঠক সত্ত্বেও কংগ্রেসের দোলাচল অব্যাহত। মুখ্যমন্ত্রী ঠিক করতে একসময় ইউপিএ চেয়ারপারসন সোনিয়া গান্ধীকেও আসরে নামতে হয়। কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীর সরকারি বাসভবনে যান তিনি। সঙ্গী হন কন্যা প্রিয়াঙ্কাও। কিন্তু তবুও এই খবর লেখার সময় পর্যন্ত নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না, মুখ্যমন্ত্রী মনোনয়নপর্বের ‘মধুরেণ সমাপয়েত’ হবে কি না।
গোবলয়ের এই তিন রাজ্য ছাড়াও ভোট হয়েছিল দক্ষিণের তেলেঙ্গানা ও উত্তর-পূর্বের মিজোরামে। তেলেঙ্গানায় বৃহস্পতিবার দ্বিতীয়বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রিত্বের শপথ নেন তেলেঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতির (টিএসআর) অবিসংবাদী নেতা চন্দ্রশেখর রাও। মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শনিবার শপথ নেবেন মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্টের (এমএনএফ) নেতা জোরামথাংগা। কিন্তু মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান ও ছত্তিশগড়ের দায়িত্ব কাদের ওপর বর্তাচ্ছে, বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত তা নিশ্চিত নয়।
মধ্যপ্রদেশের দাবিদার ৭৪ বছর বয়সী কমলনাথ, ৩৫ বছর ধরে যিনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন লালন করে চলেছেন। অবিভক্ত মধ্যপ্রদেশে কখনো অর্জুন সিং, কখনো শ্যামাচরণ ও বিদ্যাচরণ শুক্ল, কখনো মোতিলাল ভোরা কখনো বা দিগ্বিজয় সিংয়ের জন্য সেই স্বপ্ন তাঁর পূরণ হয়নি। কমলনাথের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। দুজনেই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পনেরো বছর পর রাজ্যে ক্ষমতায় এনেছেন দলকে। শ্যাম না কুল কাকে রাখবেন রাহুল?
দলীয় তথ্য অনুযায়ী, মধ্যপ্রদেশের সম্ভাব্য সমাধান সূত্র হলো কমলনাথ মুখ্যমন্ত্রী, তাঁর ডেপুটি হবেন জ্যোতিরাদিত্য। এতে প্রবীণ ও নবীনের ভারসাম্য রক্ষা হবে। তা ছাড়া উপমুখ্যমন্ত্রী করার মধ্য দিয়ে এই ইঙ্গিতও দেওয়া যাবে যে ভবিষ্যতে রাজ্যের ভার বর্তাবে জ্যোতিরাদিত্যর ওপরেই। একই সমাধান সূত্র রাজস্থানের জট ছাড়ানোর জন্যও প্রয়োগ করতে চাইছেন রাহুল। প্রবীণ অশোক গেহলটকে মুখ্যমন্ত্রী করে নবীন শচীনকে উপমুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব দিতে চাইছেন তিনি। কিন্তু বেঁকে বসেছেন রাজস্থান প্রদেশ কংগ্রেসের তরুণ সভাপতি শচীন পাইলট। পাঁচ বছর ধরে সভাপতি হিসেবে সংগঠনকে তিনি মজবুত করেছেন। তাঁর দাবি উড়িয়ে দেওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। অথচ বিধায়কদের বেশির ভাগ অশোক গেহলটের পক্ষে। জ্যোতিরাদিত্য কিছুটা নমনীয় হলেও শচীন এখনো নরম নন। কী করবেন রাহুল? টালবাহানা ও দোলাচল চূড়ান্ত।
ছত্তিশগড়ের দাবিদার তিন নেতা। পনেরো বছর আগে নকশাল হামলায় দলের শীর্ষ নেতৃত্ব শেষ হয়ে যাওয়ার পর রাজ্যে দলকে গড়ে একটু একটু করে গড়ে তোলেন ভূপেশ বাঘেল, টি এস সিং দেও এবং তাম্রধ্বজ সাহু। লোকসভার বিরোধী নেতা মল্লিকার্জুন খারগেকে ছত্তিশগড় পাঠিয়েও তিনজনের মধ্যে একজনকে বেছে নেওয়া সহজ হচ্ছে না। সতর্কতার প্রধান কারণ আগামী চার মাসের মধ্যে লোকসভার ভোট। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব এটাই নিশ্চিত করতে চায়, লোকসভা ভোটে যেন বিরূপ প্রভাব না পড়ে।
তিন রাজ্যের দাবিদারই দিল্লিতে ঘাঁটি গেড়েছেন। দফায় দফায় তাঁরা আলোচনায় বসছেন রাহুলের সঙ্গে। সমর্থকদের তাঁরা নির্দেশ দিয়েছেন, সিদ্ধান্ত যা–ই হোক, সবাই যেন সংযত থাকেন। প্রত্যেকেই বলছেন, শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশ ও সিদ্ধান্ত শিরোধার্য। রাহুল গান্ধী বলেছেন, দলের সব নির্বাচিত বিধায়কদের অভিমত নেওয়া হচ্ছে। ঠিক সময়েই সিদ্ধান্ত জানানো হবে। কিন্তু কখন ও কোন সিদ্ধান্ত, বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত তা নিশ্চিত নয়। ‘কৌন বনেগা মুখ্যমন্ত্রী’, সেই দোলাচলও অব্যাহত।
© স্বত্ব আর্থটাইমস্ ২৪.কম
প্রকাশক ও সম্পাদক: মোঃ জাকারিয়া আলম (দিপু)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ:বরিশাল-৮২০০।
আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:::
নিউজ মেইল:::
earthtimes24@gmail.com(নিউজ)
news@earthtimes24.com(নিউজ)
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
২০১৭ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত earthtimes24.com