বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে। সামনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আবারও আলোচনায়- কেমন হবে নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভা বা সরকার? তবে সংবিধানে এ বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলা নেই। ফলে গত দুই মেয়াদে তফসিল ঘোষণার পর মন্ত্রিসভার আকারে হেরফের দেখা গেছে। কিছুটা পরিবর্তন আসলেও মূলত বিদ্যমান সরকারই নির্বাচনকালীন দায়িত্বে থেকেছে।
যেহেতু সংবিধানে কিছু বলা নেই, তাই তফসিল ঘোষণার পর বিদ্যমান মন্ত্রিসভায় কিছুটা পরিবর্তন এনে সেটাকে অন্তবর্তীকালীন সরকার বা নির্বাচনকালীন সরকার বলা হচ্ছে।
গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। রোডম্যাপ অনুযায়ী- চলতি বছরের নভেম্বরে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। একইসঙ্গে আগামী ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ কিংবা আগামী বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
সে অনুযায়ী বলা হচ্ছে, গত দুই বারের মতো নভেম্বরে তফসিল ঘোষণার পর থেকেই শুরু হবে অন্তবর্তীকালীন বা নির্বাচনকালীন সরকার। যে সরকার শুধু রুটিন কাজ চালিয়ে যাবে। কোনো নীতি-নির্ধারণী সিদ্ধান্ত নেবে না।
এবারের নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভা নিয়ে সুনির্দিষ্ট করে কোনো তথ্য জানাতে পারেননি সরকারের দায়িত্বশীলরা। তারা বলছেন, এ বিষয়ে কথা বলার সময় এখনো হয়নি। কেউ বলছেন, এটি প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। মন্ত্রিসভার আকার কেমন হবে, সেটি তার ওপরই নির্ভর করছে।
২০১৪ সালে নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভায় বিএনপিকে যুক্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হলেও দলটি তাতে সাড়া দেয়নি। এবারও নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভাকে সামনে রেখে এমন একটি প্রস্তাবের কথা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। গত ৭ মে তিনি বলেছেন, বিএনপি আগামী নির্বাচনে আসলে দলটিকে নির্বাচনকালীন সরকারে রাখার বিষয়টি বিবেচনা করা হতে পারে।
যদিও বিএনপি বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা আগেই জানিয়ে দিয়েছে। তারা নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজনে আন্দোলনও করে আসছেন। নির্বাচনকালীন সরকারে বিএনপির অংশীদারত্বের সম্ভাবনা এরইমধ্যে নাকচও করে দিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বিরোধী দলগুলোর আন্দোলনের মুখে তৎকালীন বিএনপি সরকার স্থায়ীভাবে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী এনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছিল। এরপর থেকে নির্বাচিত সরকারের মেয়াদ শেষে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়ে পরবর্তী সরকার গঠিত হচ্ছিল। ২০০৬ সালে রাজনৈতিক সংকটের প্রেক্ষাপটে জরুরি অবস্থা জারির পর গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছর ক্ষমতায় থাকার কারণে এ পদ্ধতির দুর্বলতা নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন ওঠে। পরে ২০১১ সালে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে বাতিল হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা। এরপর ২০১৪ সালে দশম ও ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়। বিদ্যমান সরকারই এ দুটি নির্বাচনের সময় দায়িত্বে থাকে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর মন্ত্রিসভার আকার ছোট হতে পারে। বিশেষ করে টেকনোক্র্যাট (সংসদ সদস্য নন) মন্ত্রীদের পদত্যাগ করতে বলা হতে পারে। তবে এবার নতুন করে কাউকে যুক্ত করার সম্ভাবনা নেই বলেই মনে করছেন তারা। তবে নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভা থেকে টেকনোক্র্যাট মন্ত্রীদের বাদ দেওয়ার বাধ্যবাধকতা নেই বলেও মনে করেন সংবিধান বিশেষজ্ঞরা।
কেউ কেউ বলছেন, সংবিধানে সুনির্দিষ্ট দিক-নির্দেশনা না থাকায় নির্বাচনকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতিও ওইসময়ে মন্ত্রিসভা গঠনে প্রভাব ফেলতে পারে। নির্বাচনকালীন সরকারে যদি আওয়ামী লীগ ছাড়াও অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণের বিষয়ে সমঝোতা হয়, সেক্ষেত্রে মন্ত্রিসভায় নতুন মুখ আসতে পারে। সেক্ষেত্রে বাদ পড়তে পারেন কেউ কেউ।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়ে সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. মোতাহার হোসেন সাজু জাগো নিউজকে বলেন, নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়ে সংবিধানে কোনো কিছু উল্লেখ নেই। তবে পঞ্চদশ সংশোধনীর রায়ে বলা হয়েছিল, পর পর দুই টার্মে (মেয়াদ) নির্বাচনকালীন একটি প্রক্রিয়া করা যেতে পারে। বিরোধী দলীয় নেতারা যদি তাদের বক্তব্য সংসদে উপস্থাপন করেন, সেটা যদি সংসদ সদস্যরা একমত হয়ে রাজি থাকেন, তাহলে পর পর দুটি সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। কিন্তু সেই সংসদ নির্বাচন তো কয়েকটি পার হয়ে গেলো।
এবার নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভা কেমন হবে জানতে চাইলে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘সেটা বলার সময় এখনো আসেনি। আর এটা বলার একমাত্র এখতিয়ার প্রধানমন্ত্রী রাখেন, আমি রাখি না।’
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে ২০১৩ সালের ২১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীসহ ২৯ সদস্যের নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়। এর মধ্যে ২১ জন মন্ত্রী ও সাতজন প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। ওই মন্ত্রিসভায় মহাজোট সরকারের ১৬ মন্ত্রী ও ১৪ জন প্রতিমন্ত্রী বাদ পড়েন। প্রধানমন্ত্রীর আরও দুই উপদেষ্টা নিয়োগ দেওয়া হয়।
নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের জন্য ২০১৩ সালের ১১ নভেম্বর মন্ত্রিসভা বৈঠকের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে তারিখবিহীন পদত্যাগপত্র জমা দেন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা। এর মধ্য থেকে রাষ্ট্রপতি যাদের পদত্যাগপত্রগুলো গ্রহণ করেন, তারাই নির্বাচকালীন সরকারে স্থান পাননি। ওই মন্ত্রিসভায় আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জাসদের ছয়জন মন্ত্রী ও দুজনকে প্রতিমন্ত্রী নিয়োগ দেওয়া হয়।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে ওই বছরের ৮ নভেম্বর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। ২০১৮ সালের ১২ নভেম্বর তখনকার মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেছিলেন, ‘সিডিউল ডিক্লেয়ার (তফসিল ঘোষণা) হয়ে যাওয়ায় ওইসময় থেকেই নির্বাচনকালীন সরকার শুরু হয়ে গেছে।’
তখন মন্ত্রিসভার বৈঠক ও আইন অনুমোদনও হয়েছিল। এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেছিলেন, ‘আইন অনুমোদন ক্যাবিনেটের কার্যক্রমের মধ্যেই পড়ে। এটাকে রুটিন ওয়ার্কই বলা যায়। কোনো উন্নয়ন প্রকল্প এগুলোকে স্পর্শ করে না।’
নির্বাচনকালীন সরকার গঠনে ২০১৮ সালের ৬ নভেম্বর মন্ত্রিসভা বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টেকনোক্র্যাট মন্ত্রীদের পদত্যাগের নির্দেশ দেন। ওইদিনই বিকেল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে চারজন মন্ত্রী মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছিলেন।
© স্বত্ব আর্থটাইমস্ ২৪.কম
প্রকাশক ও সম্পাদক: মোঃ জাকারিয়া আলম (দিপু)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ:বরিশাল-৮২০০।
আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:::
নিউজ মেইল:::
earthtimes24@gmail.com(নিউজ)
news@earthtimes24.com(নিউজ)
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
২০১৭ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত earthtimes24.com