#

রোববার যখন শেষ হয় চলমান জাতীয় ক্রিকেট লিগের দ্বিতীয় রাউন্ডের খেলা, তখনও হয়তো কেউ ভাবেননি সোমবার আসলে এমন এক সময় অপেক্ষা করছে বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য। হুট করেই সংবাদ সম্মেলনের ডাক দিলেন জাতীয় ক্রিকেটাররা, যেখানে জানা গেলো নির্দিষ্ট দাবিদাওয়া মানা না হলে সবধরনের ক্রিকেট বন্ধ থাকবে সারা দেশে।

সোমবার সংবাদ সম্মেলনের ডাক দিয়ে একজোট হন জাতীয় দল ও তার আশপাশে থাকা সকল ক্রিকেটাররা। যাদের বেশিরভাগেরই আজ প্রস্তুতি শুরু করার কথা ছিলো জাতীয় লিগের তৃতীয় রাউন্ড এবং ভারত সফরের প্রস্তুতি ক্যাম্পের জন্য।

অথচ হঠাৎ করেই জানা গেলো মাঠের খেলার প্রস্তুতি একপাশে রেখে ক্রিকেটাররা কথা বলবেন বাংলাদেশ ক্রিকেটেরই নানান বিষয় নিয়ে। যেসব নিয়ে অসন্তোষ ছিলো অনেকদিনের। সে বিষয়ে কথা বলতে গিয়েই তুলে ধরেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের যত অসঙ্গতির কথা, তুলে ধরেছেন ১১টি নির্দিষ্ট দাবি। এসব দাবি মানা না পর্যন্ত সবধরনের ক্রিকেট বয়কটের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

এমতাবস্থায় যে কারো মনেই প্রশ্ন উঠতে পারে, হঠাৎ করে কেনো এভাবে একজোট হলেন জাতীয় ক্রিকেটাররা? কেনোই বা দাঁড়ালেন এমন কঠোর অবস্থানে? সরাসরি ক্রিকেট বয়কটের সিদ্ধান্ত না জানিয়ে ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে আলোচনায় যেতে পারতেন না তারা?

বাংলাদেশ ক্রিকেটের নিয়মিত খোঁজখবর রাখেন যারা, যাদের নখদর্পনে রয়েছে দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের সকল কিছু- তাদের মনে অবশ্য এসব প্রশ্ন উঠবে না। কেননা, সবারই জানা আজ (সোমবার) যেসব বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন সাকিব, তামিম, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহরা- এসব নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন সাক্ষাৎকার বা সংবাদ সম্মেলনে ভিন্ন ভিন্ন ক্রিকেটাররা নানান সময়ে আওয়াজ তুলেছেন।

তবে এবারই প্রথম জোট বেঁধে, সুনির্দিষ্ট দাবি উল্লেখ করে সরব হয়েছেন ক্রিকেটাররা। যা বেশ সময়োপযোগী এবং যুক্তিযুক্তই বলা চলে। কারণ দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের কাঠামো এবং আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা নিয়ে অভিযোগ অনেক পুরনো। বিশেষ করে অনেক বিদেশি কোচও নানান সময়ে বলেছেন সবার আগে ঘরোয়া ক্রিকেটের কাঠামো ঠিক করতে।

কিন্তু বারবার প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও, যেমনটা তেমনই থেকে যায় জাতীয় ক্রিকেট লিগ বা বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগের অবস্থা। এমনকি দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের সবচেয়ে জমজমাট আসর ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগের ব্যাপারেও শোনা যায় নানান কথা। বিশেষ করে ম্যাচের উইকেট এবং আম্পায়ারিংয়ের মান নিয়ে ক্রিকেটার ও দলগুলোর অসন্তোষ নিত্যদিনের।

এছাড়া ঘরোয়া লিগগুলোতে খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক ও অন্যান্য ভাতার অপ্রতুলতার ব্যাপারেও প্রায়ই শোনা গিয়েছে নানান অনুযোগ। বিশেষ করে বিসিবির মতো বিশ্বের অন্যতম ধনী ক্রিকেট বোর্ড যখন দেশের সবচেয়ে বড় ঘরোয়া লিগের ম্যাচ ফি ঠিক করে মাত্র ৩৫০০০ ও ২৫০০০ টাকা- তখন প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক।

এমনকি দেশের ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের অন্যতম আকর্ষণ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের ফরম্যাটেও আমূল পরিবর্তন এনেছে ক্রিকেট বোর্ড। যেখানে সব দলের দায়িত্ব নিয়েছে তারাই এবং খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক বাড়ানোর বদলে উলটো কমিয়ে আনার কথাও শোনা যাচ্ছে জোরেশোরে। এসব জিনিসও সহজভাবে নেয়নি জাতীয় ক্রিকেটাররা।

হঠাৎ করা ডাকা এ আন্দোলনে শুধু ক্রিকেটারদের স্বার্থ নিয়েই কথা বলেননি সাকিব-তামিমরা। দাবি তোলা হয়েছে স্থানীয় কোচ ও মাঠকর্মীদের ব্যাপারেও। এছাড়া জাতীয় দলের বাইরের ক্রিকেটারদের ফিটনেস ও পারফরম্যান্সের উন্নতির ব্যাপারেও আওয়াজ তুলেছেন জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা।

যা থেকে স্বাভাবিকভাবেই বোঝা যায়, দীর্ঘদিন ধরেই জমে থাকা নানান অভিযোগ ও অনুযোগের সমষ্টিগত অভিপ্রকাশই সবার একজোট হয়ে করা এই আন্দোলন। এবার দেখার বিষয়, এই আন্দোলনের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড কেমন পদক্ষেপ নেয়!

উত্তর দিন

Please enter your comment!
এখানে আপনার নাম লিখুন