কৃষক বিক্ষোভে উত্তাল ভারত

লেখক:
প্রকাশ: ৪ years ago

ভারতের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় পাস হওয়া নতুন কৃষি সংস্কার বিলের প্রতিবাদে দেশটির বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষোভ হয়েছে। রাস্তায় নেমে এই বিলের প্রতিবাদ করছেন কৃষকরা।শুক্রবার দেশটির কৃষক সংগঠনগুলো মিলিতভাবে ভারত বন্ধ পালনের ডাক দিয়েছিল। কংগ্রেস-সহ ভারতের অধিকাংশ বিরোধীদল নীতিগত সমর্থন জানিয়েছিল এই বন্ধে।

পাঞ্জাব-হরিয়ানার বিভিন্ন জায়গা ছাড়াও কর্নাটক, মহারাষ্ট্র, বিহারেও প্রতিবাদ-বিক্ষোভ করেছেন কৃষকরা। অনেক জায়গায় রাস্তা আটকে, রেললাইনের ওপরে বসে এই বিলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ দেখিয়েছেন তারা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে দেশজুড়ে মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত পুলিশ।

তবে বিক্ষোভের দাবানল সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে পাঞ্জাব ও হরিয়ানাতে। অমৃতসর, জালন্ধর, লুধিয়ানা, আম্বালা, চণ্ডীগড়ের বিভিন্ন জায়গায় রাস্তা অবরোধ করে বিভিন্ন কৃষক সংগঠন। জালন্ধরের কাছে সকাল থেকেই অমৃতসর-দিল্লি জাতীয় সড়ক অবরোধ করেছে ভারতীয় কিষান ইউনিয়ন ও রেভোলিউশনারি মার্ক্সিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া।

আম্বালাতে বিক্ষোভের কারণে বন্ধ হয়ে যায় দিল্লি-চণ্ডীগড় বাস চলাচল। কিষান মজদুর সংঘর্ষ কমিটি বৃহস্পতিবার থেকেই পাঞ্জাবজুড়েই ‘রেল রোকো’ অভিযান চালিয়ে আসছে। পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিং বিক্ষোভকারী কৃষকদের করোনাভাইরাস সুরক্ষাবিধি মেনে শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করার আবেদন জানিয়েছেন। এনডিএর শরিক শিরোমণি আকালি দলও এই বিলের প্রতিবাদে সারা পাঞ্জাবজুড়ে তিন ঘণ্টার ‘চাক্কা জ্যাম’ কর্মসূচি পালন করে।

কৃষি সংস্কার বিল ২০২০-এর প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসে কর্নাটকের রাজ্য কৃষক সংগঠনগুলো। বোম্মানহালিতে কর্নাটক-তামিলনাড়ু জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান রাজ্যের কৃষকরা। মহারাষ্ট্রেও বিক্ষোভ করেছে বাম সমর্থিত অল ইন্ডিয়া কিষান সভা। রাজ্যের প্রায় ২১টি জেলাতে বিলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন কিষান সভার ৩০ হাজারেরও বেশি সদস্য।

পশ্চিমবঙ্গের বাংলা দৈনিক আনন্দবাজার বলছে, উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন জায়গাতেও পথে নেমে বিক্ষোভ করেছেন কৃষকরা। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে দিল্লি- উত্তরপ্রদেশ সীমানায় চিল্লাতে বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়। বিল প্রত্যাহারের দাবিতে বারাবাঁকিতে অযোধ্যা-লখনউ হাইওয়ে অবরোধ করেন বিক্ষোভকারীরা।

 

দিল্লির উপকণ্ঠে নয়ডাতেও কৃষকদের বিক্ষোভ দেখা গেছে। ভারতীয় কিষান ইউনিয়ন রাস্তা অবরোধ করে এই বিলের প্রতিবাদ করছে। কৃষি বিলের বিরুদ্ধে বিহারের রাস্তায় নেমেছেন লালু প্রসাদ যাদবের দুই ছেলেকেও। কৃষকদের নিয়ে পাটনার রাস্তায় সমাবেশ করেছেন তারা। সমাবেশে রাষ্ট্রীয় জনতা দলের (আরজেডি) নেতা তেজস্বী যাদবকে দেখা গেছে ট্রাক্টর চালাতে।

এই বিলকে কৃষক বিরোধী অ্যাখ্যা দিয়ে তেজস্বী বলেছেন, সরকার আমাদের ‘অন্নদাতাদের’ পুতুল বানানোর চেষ্টা করছে। ২০২২ সালের মধ্যে কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার কথা বলেছিল সরকার। কিন্তু এই বিল তাদের আরও গরিব করবে।

বৃহস্পতিবার কৃষকদের দেশজুড়ে এই বন্ধের ডাকে সমর্থন জানিয়েছিল কংগ্রেস। শুক্রবার সকালে কৃষি বিলের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন সরকারের তীব্র সমালোচনা করেন রাহুল গান্ধী ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী।

 

বন্ধের প্রতি সমর্থন জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে রাহুল গান্ধী লিখেছেন, ‘ত্রুটিপূর্ণ জিএসটি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে ধ্বংস করেছে। নতুন কৃষি আইন আমাদের কৃষকদের ক্রীতদাস বানাবে।’

প্রিয়াঙ্কা লিখেছেন, ‘কৃষকদের থেকে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য কেড়ে নেয়া হবে। কোটি কোটি কৃষকদের ক্রীতদাসে পরিণত হতে বাধ্য করা হবে। না পাবে দাম, না পাবে সম্মান। নিজের জমিতেই শ্রমিকে পরিণত হবে কৃষক।’ বিজেপির আনা কৃষি বিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রাজত্বের কথাও মনে করিয়ে দেয় বলেও তোপ দাগেন তিনি।

কৃষি সংস্কার বিল দেশের কৃষকদের আর্থিক উন্নতির জন্য আনা হয়েছে বলে শুরু থেকে দাবি করে আসছে ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার। বিরোধীদের আপত্তি উড়িয়ে সংসদে বিলটি পাশ করেছে নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন বিজেপি। তারপর থেকেই দেশজুড়ে বিরোধীরা বিক্ষোভ করে আসছেন।