মাত্র ২০ বছর বয়সে ট্রাকের আঘাতে ডান হাত হারিয়েছেন গোপালগঞ্জের খালিদ হাসান হৃদয়। বাসে হেলপারের কাজ করে বাবা রবিউল ইসলামের সঙ্গে সংসারের হাল ধরেছিলেন তিনি। সংসারের খরচ মেটানোর পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া বোনের পড়াশোনার ভার ছিল হৃদয়ের কাঁধে। ডান হাত হারানোয় এখন আর আগের মতো কর্মদক্ষতা ফিরে পাবেন না এই তরুণ। তবে একটি কৃত্রিম হাত সংযোজন করতে পারলে কিছুটা হলেও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে পেতে পারেন হৃদয়। তাঁর চিকিৎসকদের কাছ থেকে এমন আশার কথা শোনা গেল।
হৃদয়ের চিকিৎসক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক শামসুজ্জামান শাহীন। আজ বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, আজকাল কৃত্রিম হাত পাওয়া যায়, যেগুলোতে মটরাইজড সিস্টেম রয়েছে। এসব হাত দিয়ে ধরা যায়, সামান্য ওজন বহন করা ও কিছুটা লেখালেখিও করা যায়। হৃদয়ের কাঁধ থেকে যদি হাতের দু-তিন ইঞ্চি পাওয়া যায়, তাহলে কৃত্রিম হাত বসানো যাবে। আশা করা যায়, এটি সম্ভব হবে।
কৃত্রিম হাত কেনা বেশ ব্যয়বহুল উল্লেখ করে অধ্যাপক শামসুজ্জামান শাহীন বলেন, জার্মানিতে কৃত্রিম হাত ভালো পাওয়া যায়। মাপ দিয়ে দিলে ওখানকার কোম্পানি মটরাইজড হ্যান্ড তৈরি করে পাঠিয়ে দেয়। এরপর দেশেই সংযোজন করা যায়। তবে কৃত্রিম হাত ১০ লাখ টাকার কমে পাওয়া যায় না। হৃদয়ের হাতের চামড়া লাগানোর পর বোঝা যাবে কত মাপের হাত প্রয়োজন হবে। কাঁধ দিয়েও কৃত্রিম হাত নাড়াচাড়া করা যায়। তাই হৃদয় যদি কাঁধ নাড়াতে পারেন, তাহলেও এই হাত সংযোজন করা যেতে পারে।
দুই থেকে তিন মাস পর কৃত্রিম হাত সংযোজন করা যেতে পারে উল্লেখ করে এই চিকিৎসক বলেন, সবকিছু নির্ভর করছে হৃদয়ের শারীরিক অবস্থার ওপর। এই মুহূর্তে তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। যেকোনো সময় এটি অন্যদিকে টার্ন নিতে পারে। কারণ রাজীবের অবস্থাও হাতকাটা যাওয়ার পর ভালো ছিল। তাই আরও দু-তিন দিন পর বোঝা যাবে হৃদয়ের অবস্থা কোন দিকে যাচ্ছে। ছেলেটি যে শঙ্কামুক্ত, এটি এই মুহূর্তে বলা যাবে না।
গত মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গোপালগঞ্জ সদরের বেতগ্রাম বাসস্ট্যান্ড এলাকায় দুর্ঘটনার শিকার হন হৃদয়। ট্রাকের ধাক্কায় ডান হাত হারিয়েছেন তিনি। টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেসের চালকের সহকারী হৃদয়ের ডান হাতটি বাসের জানালায় ঝুলে থাকার কিছু পর তা সড়কে পড়ে যায়। রক্তাক্ত হৃদয়কে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে, পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। তাঁর অস্ত্রোপচার হয়েছে। এ সময় হৃদয়কে আট ব্যাগ রক্ত দিতে হয়েছে।
কিছুটা রক্তশূন্যতা থাকায় আজ দুপুরে হৃদয়কে আরও এক ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়েছে। তাঁর বাবা রবিউল ইসলাম বলেন, ওষুধের রিঅ্যাকশন কেটে গেলে হৃদয়ের হাতের ক্ষতস্থানে যন্ত্রণা হয়। এ সময় চিৎকার করে। তবে ওষুধ দেওয়ার পর ব্যথা কমে এসেছে। খাবার সামান্য খেতে পারছে। আজকে ড্রেসিং করানো হয়েছে। কোনো ধরনের ইনফেকশন এখন পর্যন্ত ওর হয়নি।