শাহীন মিয়া, দীপ্ত সরকার ও মো. হাফিজ। সবার বয়স সবেমাত্র ২৩’র কোটায়। তিনজনই সহপাঠী। তাদের একেকটি নাম একেকটি গল্প। যে গল্পের পরতে পরতে জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে দুঃখ-দুর্দশার মাঝে স্বাচ্ছন্দ্যবোধের অাক্ষরিকতা বিরাজ করেছিল। জীবনযুদ্ধে হার না মানা এ তিন তরুণের অদম্য জীবনে বড় কোনো স্বপ্ন ছিল না।
তারা শুধু স্বপ্ন দেখতেন পড়ালেখা শেষ করে নিম্মবিত্ত পরিবারের হাল ধরবেন। স্বপ্ন দেখেছিলেন দুঃখের সাগর নিমজ্জিত অসহায় পিতৃহারা পরিবারগুলোর মুখে উচ্ছ্বাসতার হাসি ফোটানোর। কিন্তুু নিয়তির কী নির্মম পরিহাস..! তাদের স্বপ্নগুলোতে ঠিক যেন পাকা ধানে মই দেয়ার অবস্থা। ডুবে গেল তরী তীরে এসেই।
বলছিলাম ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) বস্ত্র প্রকৌশল বিভাগের তিন মেধাবী শিক্ষার্থীর কথা। যারা বিস্ফোরণের অাগুনে দগ্ধ হয়ে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে প্রহর গুণছেন। অর্থসংকটে নিভে যাচ্ছে তাদের জীবনপ্রদীপ।
কুয়েট থেকে ফাইনাল পরীক্ষা শেষে তারা ময়মনসিংহের ভালুকায় স্কয়ার ফ্যাশন কারখানায় শিক্ষানবিশ (ইন্টার্ন) প্রকৌশলী হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। কথা ছিল একমাস পর তারা বস্ত্র প্রকৌশলের স্বীকৃতি নিয়ে বের হবেন। তাই একমাসের জন্য তারা ওই পোশাক কারখানার পাশে মাস্টারবাড়ি এলাকার একটি ভবনের তিনতলায় চার বন্ধু মিলে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছিলেন।
কিন্তুু একমাস পূর্ণ হওয়ার অাগেই ২৫ মার্চ দিবাগত রাত ১টার দিকে ওই বাসার গ্যাস লাইন বিস্ফোরণের অাগুনে দগ্ধ হয় এ তিনজনসহ তৌহিদ নামে অারও একজন। তৌহিদ ঘটনাস্থলে মারা যান। দীপ্ত, হাফিজ অার শাহিনকে উদ্ধার করে ঢামেকে ভর্তি করা হয়। তারা এখন বার্ন ইউনিটের অাইসিইউতে প্রতিনিয়ত মৃত্যুকে অালিঙ্গন করছে।
স্বজনরাও তাদের প্রতীক্ষায় নিরবে নিভৃতে অাইসিইউর সামনে প্রতিটি প্রহর গুণছেন। কিন্ত অপেক্ষার প্রহর যেন কেবলই দীর্ঘ হচ্ছে। কেউ প্রকাশ্যে অাবার কেউ লোকচক্ষুর অাড়ালে ফেলছেন অশ্রুর নোনা জল। এযেন বুকের ভেতর নীরব রক্তক্ষরণ। যা কোনোভাবেই থামছে না প্রিয় মানুষগুলোর সুস্থ না হওয়ার শঙ্কায়। তারাই তো পরিবারের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন।
সকাল দুপুর বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়। তবুও প্রিয় সন্তানের মা ডাক শব্দটি যেন অার মোবাইলের স্পিকারে বেজেওেঠে না। এমন অপ্রত্যাশিতে প্রাপ্তিতে শাহিনের মায়ের নীরব অশ্রজলের মাখামাখি আইসিইউতে সৃষ্টি হয়েছে শোকাবহ পরিবেশ। কারো সান্ত্বনায় মা সাফিয়া বেগম অাত্মতৃপ্তি খুঁজে পাচ্ছেন না প্রিয় সন্তানের এমন অবস্থায়।
স্বজনদের জড়িয়ে ধরে অশ্রুজলে ব্যথাতুরা হৃদয়ের অার্তনাতে শুধু বলছেন, “একমাস পরেই বাড়িত অাসব কইল বাজান, এহন তো হের কাছে অাইলাম অামি..! অামার লগে তো হেয় কথা কয় না। মোবাইলে কইত মা…অার বেশিদিন নাই… বাড়িত অাইতাছি, নতুন চাকরি নিমু, কষ্ট করতো অইব না অার..!
তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, শাহিনরা চার বোন দুই ভাই। ভাইদের মধ্যে সে ছোট। তার বাবা মারা যাওয়ার অাগে তাদের একটা দোকান ছিল সেটি এখন তার বড় ভাই চালায়। এ দোকান থেকে যা অায় হয় তাই দিয়ে তাদের সংসার ও শাহিনের পড়ালেখার খরচ চলতো। তাদের স্বপ্ন ছিল শাহিন পড়ালেখা শেষ করে চাকরি করবে। তাতে সব কষ্ট শেষ হয়ে যাবে। কিন্তুু এখন কষ্ট যেন অারও বেড়ে গেল।
একই অবস্থা দীপ্ত সরকারের। তারও বাবা নেই। বড় ভাই নারায়ণ সরকারও এক প্রকারের বেকার। এমএ পাশ করেও অর্থ সংকটে কোনো চাকরি পাননি। তাই কোনো রকমে নিজেদের সংসার চালাতেন তিনি। অার দীপ্ত টিউশনি করে নিজের পড়ালেখার খরচ চালাতেন। স্বপ্ন ছিল ছোট ভাইটা একটা ভালো চাকরি নিয়ে সব কষ্ট দূর করবে। কিন্তুু তা যেন অধরায় রয়ে গেল।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তিনজনেরই শ্বাসনালি পুড়ে গেছে। শাহীন মিয়ার শরীরের ৮৩ শতাংশ, হাফিজুর রহমানের ৫৮ শতাংশ আর দীপ্ত সরকারের ৫৪ শতাংশ পুড়ে গেছে। এদের তিনজনকেই বর্তমানে কৃত্রিমভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস দেয়া হচ্ছে।
শাহীনের বাড়ি সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার খাস সাতবাড়িয়া এলাকায়। দীপ্ত সরকারের বাড়ি মাগুরার শালিকা উপজেলার দীঘল এলাকায় এবং হাফিজের বাড়ি মাগুরায়। শাহিন ও দীপ্তের বাবা বেঁচে নেয়। হাফিজের বাবা থাকলেও অার্থিকভাবে অসচ্চল। তাই তাদের এমন অবস্থায় চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করতে পারছেন না স্বজনরা।
অাহত তিনজনের চিকিৎসায় প্রতিদিন ব্যয় হচ্ছে প্রায় এক লাখ টাকা। এ বিপুল পরিমাণ অর্থ তাদের পরিবারের পক্ষে বহন করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই তিন বন্ধুকে বাঁচাতে ছুটে এসেছেন সহপাঠী বন্ধু- ফুয়াদ, মির্জা ও বখতিয়ারসহ ১০/১৫জন বন্ধু। তারা সবাই নিজেদের সাধ্যমত রক্ত সংগ্রহসহ যাবতীয় কাজ নিবিড়ভাবে করে যাচ্ছেন। কিন্তুু তারা সকলেই শিক্ষার্থী হওয়ায় তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে বিপুল পরিমাণ প্রয়োজনী অর্থ সরবরাহ করা।
তাই তারা দেশের হৃদয়বান ও ধনাঢ্য ব্যক্তিতের নিকট বারবার অাকুল অাবেদন জানিয়েছেন যেন, তারা তাদের বন্ধুকে বাঁচাতে অার্থিকভাবে সাহায্য করে। তাদের কাছে সাহায্য পাঠাতে চাইলে রয়েছে তিনটি মাধ্যম-
বিকাশ-
০১৯৪৫-১৪৭৮০৪ (ফুয়াদ)
০১৭২৭-৩৪০০৮৩ (বশির মির্জা)
০১৯১৮-৯৬৫৮৮২ (বখতিয়ার)
(বিকাশে টাকা পাঠানোর অাগে নিশ্চিত হয়ে নেবেন)
ব্যাংক-
ডাচ বাংলা ব্যাংক লিমিটেড, খুলনা শাখা, ব্যাংক হিসাবের নাম- খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, হিসাব নং- ১২০.১১০.২৬৪৩৭
অথবা
জানতা ব্যাংক লিমিটেড, কুয়েট কর্পোরেট শাখা, হিসাবের নাম- জরুরি সাহায্য তহবিল, হিসাব নং- ০১০০০১৯২৮৬৩৮৪
অথবা
ঢামেক বর্নে ইউনিটের দ্বিতীয় তলায় অাইসিইউতে অবস্থানরত অাহতদের স্বজনদেরকে সরাসরিও দিতে পারবেন।