কুষ্টিয়ায় কলের গুদাম থেকে ৫২ টন চিনি গায়েব

লেখক:
প্রকাশ: ৩ years ago

কুষ্টিয়া চিনিকলের সুরক্ষিত গুদাম থেকে রহস্যজনকভাবে ৫২ মেট্রিক টন চিনি উধাও হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। যার আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ৩২ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। এ ঘটনায় চিনিকলের স্টোরকিপার ফরিদুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। চিনি উধাও হওয়ার প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটনে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. রাকিবুর রহমান খান এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাড়াই বন্ধ (বর্তমানে আখ মাড়াই ও চিনি উৎপাদন বন্ধ রয়েছে) কুষ্টিয়া চিনিকলের স্টোরে রক্ষিত চিনির পরিমাণ নির্ণয় ও পর্যবেক্ষণকালে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ৫২ মেট্রিক টন চিনি ঘাটতি পান। মিলের গুদামে ১০০ টনের ওপর চিনি মজুত থাকলেও এখন আছে অর্ধেকেরও কম। বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে মিলের এমডিকে অবগত করা হলে তিনি স্টোরকিপার ফরিদুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করেন। এছাড়া চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশন কর্তৃপক্ষকে চিঠি মারফত বিষয়টি অবহিত করেন।

এদিকে প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটনে চিনিকলের মহাব্যবস্থাপক (কারখানা) কল্যাণ কুমারকে প্রধান করে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

নিরাপত্তা বলয় ভেদ ও সুরক্ষিত গুদামে রক্ষিত বিপুল পরিমাণ চিনি কীভাবে গায়েব হলো তা নিয়ে চিনিকলের কর্মকর্তাসহ স্থানীয় জনমনে নানা প্রশ্ন উঠেছে। বিপুল পরিমাণ চিনি চুরির সঙ্গে মিলের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীর একাংশ জড়িত বলে অনেকেই মন্তব্য করছেন। এ ঘটনায় এ পর্যন্ত থানায় মামলা হয়নি। মিল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মিলের সিবিএ সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান বলেন, ‘এটা ন্যক্কারজনক ঘটনা। দীর্ঘদিন ধরে একটি চক্র এ কাজ করে আসছিল। মিল বন্ধ না হলে হয়তো বিষয়টা ধরা পড়তো না। তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।’

এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেন সিবিএ সভাপতি ফারুক হোসেন। তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় ফ্যাক্টরি, গুদাম আর কর্মকর্তাদের কেউ কেউ জড়িত। ১০-১২ বছর ধরে এমন কাজ চলে আসছিল বলে মনে হয়। এখন বিষয়টি সামনে এসেছে। পাচার হওয়া চিনির দামও কম নয়। প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা। একদিনে এতো চিনি পাচার হয়নি। সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে দোষীদের শাস্তি দিতে হবে।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফরিদুল ইসলাম স্টোরকিপার ছিলেন। সম্প্রতি তাকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয়া হয়। এর আগে সোহেল নামের একজন দায়িত্বে ছিলেন। তার সময় চিনি চুরির ঘটনা হয়ে থাকতে পারে বলে বেশিরভাগ শ্রমিক-কর্মচারী মনে করেন। তার আমলে তেল চুরি হয়, যার প্রমাণ পেয়েছে মিল কর্তৃপক্ষ।

মিলের জেনারেল ম্যানেজার (প্রশাসন) হাবিবুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি গত বৃহস্পতিবার নজরে আসে। সেদিনই ফরিদুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত ও তদন্ত টিম গঠন করে করপোরেশনকে জানানো হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘মিলের গুদামে  চিনি কখনো একেবার শেষ হয়নি। এবার মিল বন্ধ হওয়ার পর চিনির স্টক শেষ হয়। তাই রেজিস্টার ও গুদামের চিনির হিসাবে গরমিল পাওয়া যায়। তার পরিমাণ ৫০ টনের বেশি। তদন্ত চলছে, বিষয়টি উঠে আসবে। যারা জড়িত তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

একাধিক সূত্র জানিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে চিনিকলের একটি চক্র গোপনে ট্রাকে চিনি পাচার করে আসছে। এ বছরও দিন ছাড়া রাতেও চিনির ট্রাক গেছে।

এর আগে দুর্নীতির দায়ে ২০২০ সালের ১৮ নভেম্বর কুষ্টিয়া চিনিকলের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম মুর্শেদ, চিনিকলের সিবিএ সভাপতি ফারুক হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমানকে একযোগে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। গত ১৯ বছরে কুষ্টিয়া চিনিকলটিতে লোকসান হয়েছে ৪২০ কোটি টাকা। ফলে শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের দৌরাত্ম্য, চরম দুর্নীতি, ব্যবস্থাপনায় ক্রুটি ও ক্রমাগত লোকসানে ২০২০-২১ অর্থবছর মিলে আখ মাড়াই ও চিনি উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।

এদিকে ঐতিহ্যবাহী এ মিলটি বন্ধ থাকায় প্রায় এক হাজার শ্রমিক-কর্মচারী কর্ম হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।