কুমিল্লা নিয়ে চিন্তিত শিক্ষামন্ত্রী; কুমিল্লার প্রভাব সারাদেশে!

লেখক:
প্রকাশ: ৭ years ago

এবার জেএসসি ও জেডিসিতে পাসের হার কমেছে প্রায় ১০ শতাংশ। মোট ১০টি শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৮৩ দশমিক ৬৫, যা গতবছর ছিল ৯৩ দশমিক ৬ শতাংশ। অর্থাৎ এবার ৯ দশমিক ৪১ শতাংশ পাসের হার কমেছে। এবারও বোর্ডগুলোর মধ্যে খারাপ ফল করেছে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড। এই বোর্ডে পাসের হার ৬২ দশমিক ৮৩ শতাংশ। গতবছরও এই বোর্ডের ফলাফল ছিল সবচেয়ে কম।

এই বোর্ডের ফলাফলের কারণে সার্বিক ফলাফল খারাপ হয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, কুমিল্লা বোর্ড ধারাবাহিকভাবে খারাপ করছে। এর ফল সার্বিক ফলাফলে পড়ছে। এটি খুবি চিন্তার বিষয় তবে কেন কুমিল্লা খারাপ করছে সে বিষয়ে আমরা গভীরে যেতে চাই। গভীরে গিয়ে এটা নিয়ে গবেষণা করতে চাই। তবে আজকে যেহেতু ফল প্রকাশ হলো আজই তো আর এটা নিয়ে মাঠে নামা সম্ভব না। আমরা এটা নিয়ে মাঠে যাবো। পর্যালোচনা করবো। সার্বিক বিষয় নিয়ে আমরা ফলাফল নিয়ে গবেষণা করবো।

শনিবার দুপুরে সচিবালয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ আনুষ্ঠানিকভাবে জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেন।

তিন কারণে কুমিল্লায় ভয়াবহ ফল বিপর্যয়
আবারও তিন কারণে কুমিল্লা বোর্ডের ফলে ধ্স নেমেছে। সে কারণে অন্যান্য বোর্ডের চাইতে জেএসসি পরীক্ষার পাসের হার ও জিপিএ-৫ এ পিছিয়ে কুমিল্লা। ফলাফল খারাপ করার কারণ বের কারতে একটি তদন্ত কমিটি করেছে বোর্ড।

ফলাফলে পিছিয়ে পড়ার কারণ হিসেবে কুমিল্লা বোর্ডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল ছালাম বলেন, এবারও তিন কারণে কুমিল্লা বোর্ডের জেএসসি ফল খারাপ হয়েছে। কারণগুলো হচ্ছে- শহরের স্কুলে ভালো শিক্ষক সংকট, ইংরেজি ও গণিত বিষয়ে ভালো শিক্ষকের অভাব এবং এক কেন্দ্রের শিক্ষক অন্য কেন্দ্রে স্থানান্তরকরণ।

এবার এ বোর্ডে পাসের হার ৬২.৮৩ শতাংশ। এ বছর ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৫৩ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে পাস করেছে ১ লাখ ৬৪ হাজার ৪৫৬ জন। জিপিএ ৫ পেয়েছে ৮ হাজার ৮৭৫ জন। জিপিএ-৫ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে মেয়েরা এগিয়ে। এবার সাড়ে ৫ হাজার মেয়ে এবং ৩ হাজার ৩৭৫ জন ছেলে জিপিএ-৫ পেয়েছেন।

এর আগে ২০১৬ সালে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১৯ হাজার ১৮৬ জন, ২০১৫ সালে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ২০ হাজার ৭৪৭ জন, ২০১৪ সালে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১৭ হাজার ২৬৪ জন এবং ২০১৩ সালে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১৬ হাজার ৯৫ জন।

এবার কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ছয়টি জেলায় এসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষার পর জেএসসি পরীক্ষার ফলাফলে ভরাডুবি হয়েছে। এ বোর্ডে জেএসসি পরীক্ষায় এবার পাসের হার ৬২ দশমিক ৮৩ শতাংশ। যা গত চার বছরের তুলনায় অনেক কম।

মোহাম্মদ আব্দুল ছালাম বলেন, মফস্বলের চাইতে শহরের শিক্ষার্থীরা ভালো করেছে। শহরের স্কুলগুলোতে ভালো মানের শিক্ষক থাকায় এমন চিত্র তৈরি হয়েছে। এক স্কুলের শিক্ষকদের অন্য স্কুলে পরীক্ষার পরিদর্শনের দায়িত্ব দেয়াটাও ফল খাপার হওয়ার একটি কারণ হতে পারে।

তিনি আরও বলেন, নকলমুক্ত পরীক্ষা আয়োজন করাটাই ছিলো আমাদের মূল লক্ষ্য। সে বিষয়ে আমরা সফল হয়েছি। তবে ফল খারাপ হওয়ার কারণ খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। বোর্ডের কর্মকর্তা ও শিক্ষকদের সমন্বয়ে এ কমিটি গঠন করা হবে। ফল খারাপ হওয়ার কারণগুলো খতিয়ে দেখে তা সমাধানে কাজ করবে কুমিল্লা বোার্ড।

৫ বছরের মধ্যে সর্বনিন্ম ফলাফল
কুমিল্লা বোর্ডের গত ৫ বছরের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৩ সালে পাসের হার ছিল ৯০ দশমিক ৪৫ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছিল ১৬ হাজার ৯৫ জন শিক্ষার্থী। ২০১৪ সালে পাসের হার ৯৩.৭৫ ও জিপিএ-৫ অর্জন করে ১৭ হাজার ২৬৪ জন, ২০১৫ সালে পাসের হার ৯২.৫১ ও জিপিএ-৫ অর্জন করে ২০ হাজার ৭৪৭ জন এবং ২০১৬ সালে পাসের হার ৮৯.৬৮ ও জিপিএ-৫ লাভ করে ১৯ হাজার ১৮৬ জন। ৫ বছরের এ ফলাফলের মধ্যে এ বছর সর্বনিম্ন ফলাফল হয়েছে।

৫ বছরের তুলনায় এ বছর পাসের হার কমেছে ৩০.৯২ শতাংশ এবং জিপিএ-৫ কমেছে ১১ হাজার ৮৭২। এ বোর্ডে শুধু পাসের হার ও জিপিএ-৫ ই কমেনি, কমেছে শতভাগ পাস করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও। এ বছর শতভাগ পাস করেছে মাত্র ৬১টি প্রতিষ্ঠান।

এর আগে ২০১৩ সালে শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ৩১৪টি, ২০১৪ সালে ৫২৭টি, ২০১৫ সালে ৪৪৫টি ও ২০১৬ সালে ৩৪৮টি। গত কয়েক বছর ধরে এসএসসি, এইচএসসি এবং এ বছর জেএসসিতে ফলাফলের ধারাবাহিক এমন বিপর্যয়ে ক্ষুব্দ ও হতাশ হয়ে পড়েছেন শিক্ষার্থী-অভিভাবক ও সুশীল সমাজের লোকজন। ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা বলেন, দেশের সকল বোর্ডের তুলনায় কুমিল্লা বোর্ড পর্যায়ক্রমে নিম্নমুখী ফলাফল করে আসছে।

সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) কুমিল্লার সভাপতি বদরুল হুদা জেনু জানান, সারা দেশের মেধাবীদের তুলনায় কুমিল্লা কখনোই পিছিয়ে ছিল না, কিন্তু এখন বোর্ড দাবি করছে প্রকৃত মেধাবীরাই পরীক্ষায় পাস করছে। বোর্ডের এমন বক্তব্য অযৌক্তিক বলে দাবি করে তিনি বলেন, এমন ফল বিপর্যয়ের পেছনে বোর্ড কর্তৃপক্ষের মনিটরিং না থাকা দায়ী। শিক্ষকরাও দায় এড়াতে পারেন না।

তবে বোর্ডের উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. বাহাদুর হোসেন জানান, এবার জেএসসিতে মফস্বল এলাকার বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ইংরেজিতে ফেল করেছে ৭৬ হাজার ৬৮১ জন এবং গণিত বিষয়ে ফেল করেছে ৪৫ হাজার ৯১৫ জন শিক্ষার্থী। এ কারণে অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর পাসের হার কমে গেছে।

জেএসসিতে কুমিল্লা বোর্ডে কমেছে জিপিএ-৫
কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে জেএসসি পরীক্ষায় পাশের হারের ভরাডুবির পাশাপাশি জিপিএ-৫ কমেছে আশঙ্কাজনক হারে। এবার এ বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৮ হাজার ৮৭৫ জন। যা গত চার বছরের তুলনায় অনেক কম। শনিবা দুপুর ১২টায় কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড থেকে ফলাফল ঘোষণা করা হয়।

এ বছর এ বোর্ডে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৫৩ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ১ লাখ ৬৪ হাজার ৪৫৬ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৮ হাজার ৮৭৫ জন। জিপিএ-৫ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে মেয়েরা এগিয়ে রয়েছেন। এবার সাড়ে ৫ হাজার মেয়ে এবং ৩ হাজার ৩৭৫ জন ছেলে জিপিএ-৫ পেয়েছেন।

এর আগে ২০১৬ সালে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১৯ হাজার ১৮৬ জন, ২০১৫ সালে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ২০ হাজার ৭৪৭ জন, ২০১৪ সালে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১৭ হাজার

২৬৪ জন এবং ২০১৩ সালে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১৬ হাজার ৯৫ জন।