#

প্রেমসংক্রান্ত দ্বন্দ্বে নয়, মেসে ছাত্রদের ব্ল্যাকমেইল ও নির্যাতন করে পরিবারের কাছ থেকে অর্থ আদায় করতে না পেরে সাগর দত্তকে গলায় ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে। এ সময় আহত সজীব সাহা নামে আরেক ছাত্রের বুকে এক রাউন্ড গুলি চালানো হয়। আর এ হত্যা মামলার আসামিকে ধরতেই তার বান্ধবীকে টোপ হিসেবে ব্যবহার করেছে ডিবি পুলিশ।

কুমিল্লায় চাঞ্চল্যকর কলেজছাত্র হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশ। নগরীর রেইসকোর্স এলাকায় এক কলেজছাত্রকে গলা কেটে হত্যা এবং অপর ছাত্রকে গুলি করে আহত করার মূলহোতা সোহাগ উদ্দিন রানাকে (৩০) ঘটনার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে।

শুক্রবার রাতে ঢাকা কমলাপুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে কুমিল্লা জেলা গোয়েন্দা ডিবি। তাকে গ্রেফতারের জন্য ডিবির এসআই শাহ কামাল আকন্দ পিপিএমের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল রানার বান্ধবীকে টোপ হিসেবে ব্যবহার করে। সোহাগ উদ্দিন রানা কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার বাতাবাড়িয়া আমতলী গ্রামের সেলিম জাহাঙ্গীরের ছেলে।

শনিবার বেলা ১২টার দিকে কুমিল্লা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন।

প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাখাওয়াত হোসেন ও তানভীর সালেহীন ইমন, ডিবির পরিদর্শক নাছির উদ্দিন মৃধা, কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ আবু ছালাম মিয়াসহ জেলা, ডিবি ও থানা পুলিশের কর্মকর্তারা। বিকালে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়ার জন্য ঘাতক রানাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

মেসে ছাত্রদের জিম্মি করে টাকা আদায় করতে না পেরে গ্রেফতার হওয়া রানা ও নাসির নামে তার এক সহযোগী কলেজছাত্র সাগর দত্তকে গলা কেটে হত্যা এবং সজীব সাহাকে হত্যার উদ্দেশে গুলি করে।

গত বুধবার ভোরে নগরীর রেইসকোর্স এলাকায় চিন্ময় ভৌমিকের মালিকানাধীন বিএইচ ভূঁইয়া হাউস নামের তিনতলা ভবনের নিচতলার কক্ষে চাঞ্চল্যকর এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। গ্রেফতার হওয়া রানা জেলার মনোহরগঞ্জ উপজেলার বাতাবাড়িয়া গ্রামের সেলিম জাহাঙ্গীরের ছেলে। ৭৫ হাজার টাকায় পিস্তল কিনে অপরাধ জগতে পা বাড়ায় সে।

ডিবি পুলিশের কাছে হত্যার দায় স্বীকার করে সোহাগ উদ্দিন রানার দেয়া জবানবন্দির বরাত দিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাংবাদিকদের জানান, বেশ কয়েক মাস আগে সোহাগ উদ্দিন রানা স্টুডেন্ট ভিসায় মালয়েশিয়ায় গিয়ে একটি পেট্রলপাম্পে চাকরি নেয়। ওখানে সে অবৈধ হয়ে পড়লে পুলিশ তাকে আটক করে। এ ঘটনায় সে দেড় মাস জেল খাটে।

পরে সে জেল থেকে বের হয়ে মালয়েশিয়ায় থাকাবস্থায় সাউথ আফ্রিকা যাওয়ার জন্য বাংলাদেশি একজন দালাল ধরে এবং সে তার বাবার মাধ্যমে নিজ এলাকার ৪ জনকে মালয়েশিয়া নেয়ার কথা বলে প্রতারণার আশ্রয়ে ৮ লাখ টাকা নেয়। ওই টাকা থেকে সে সাউথ আফ্রিকা যাওয়ার নামে ৬ লাখ টাকা দালালকে দিয়ে প্রতারিত হয়।

এদিকে এলাকার ওই ৪ জনকে মালয়েশিয়া পাঠাতে না পারায় তার বাবা চাপে পড়ে জায়গা বিক্রি করে তাদের টাকা পরিশোধ করে। এরই মধ্যে রানা তার বাবা-মায়ের অজান্তে দেশে ফিরে এলেও বাড়ি না গিয়ে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়াতে থাকে।

একপর্যায়ে সে অপরাধ জগতে পা বাড়ায় এবং একজনের কাছ থেকে ৭৫ হাজার টাকায় ৭.৬৫ বোরের একটি পিস্তল কিনে। ঘটনার ২-৩ দিন আগে রানা ও নাসির নামে তার এক বন্ধু কুমিল্লা নগরীর রেইসকোর্স এলাকার বিএইচ ভূঁইয়া হাউজ নামের তিনতলা ভবনের নিচতলার মেসে থাকা ছাত্রদের জিম্মি করে টাকা আদায়ের ফন্দি আঁটে।

২ এপ্রিল তারা ওই মেসে গিয়ে ভাড়া থাকার কথা বলে। এতে ছাত্ররা সম্মত হলে সে ছাত্র সজীবের কাছে ভাড়া বাবদ অগ্রীম ১ হাজার টাকা দেয়। পরদিন রাতে রানা ও নাসির ওই মেসে উঠে এবং ছাত্র সাগর ও সজীবকে বিভিন্ন কৌশলে ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করে এবং অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তাদের বাবার কাছ থেকে টাকা আদায়ের চেষ্টা করে।

এ সময় তাদের (সাগর-সজীব) রশি দিয়ে বেঁধে নির্যাতন করে। কিন্তু সারারাত নির্যাতন করেও টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়। এরই মধ্যে ভোর হয়ে যাওয়ায় ঘটনাটি জানাজানির ভয়ে রানা ও নাসির দুই ছাত্রকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয় এবং রানা পিস্তল দিয়ে সজীবের বুকে গুলি করে।

এ সময় পিস্তলে গুলি আটকে গেলে ধারালো ছুরি দিয়ে সাগরকে গলা কেটে হত্যা করে তারা পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল, ছুরি ও রশি উদ্ধার করে।

ঘাতকদের গ্রেফতার অভিযানে থাকা ডিবির এসআই শাহ কামাল আকন্দ পিপিএম জানান, রানার সঙ্গে ৩ বছর আগে থেকে এক মেয়ের সম্পর্ক চলে আসছিল।বিষয়টি জেনে ওই মেয়েকে ডিবি হেফাজতে আনা হয় এবং একপর্যায়ে ওই মেয়ের মোবাইল ফোনে রানা কল করলে তার মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে ঢাকার কমলাপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়। অপর ঘাতককে ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে। এ ঘটনায় কোতোয়ালি মডেল থানায় হত্যা ও অস্ত্র আইনে ২টি মামলা হয়েছে।

উত্তর দিন

Please enter your comment!
এখানে আপনার নাম লিখুন