কাভার্ডভ্যানের চাপায় বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সার্জেন্ট এস এম গোলাম কিবরিয়া মিকেল (৩১) এর দ্বিতীয় জানাজা’র নামায অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (১৭ জুলাই) সকাল ৮ টায় বরিশাল পুলিশ লাইন্স মাঠে এ জানাজা’র নামায অনুষ্ঠিত হয়।
এসময় বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোঃ শাহাবুদ্দিন খান-বিপিএম (বার), বরিশাল জেলা পুলিশের সুপা সাইফুল ইসলামসহ প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ, স্বজন, সহকর্মী-শুভাকাঙ্খি প্রমুখ।
জানাযার পূর্বে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোঃ শাহাবুদ্দিন খান-বিপিএম (বার) বলেন, সার্জেন্ট কিবরিয়া সবার প্রিয় মানুষ ছিলো। নিষ্ঠাবান ও দায়িত্বপরায়ন ছিলো। আমরা জনগনের নিরাপত্তায় থাকি, নিরাপদ সড়কের জন্য কাজ করি। ডিউটিরত অবস্থায় ঘাতকের আঘাতে কিবরিয়ার মৃত্যু হয়েছে, আমাদেরও ঘাত-অপঘাতে মৃত্যু হতে পারে, তারপরও ঝুঁকির মধ্য দিয়ে জনগনের নিরাপত্তায় কাজ করে যেতে হবে আমাদের। হয়তো এই ঝুঁকির মধ্যে আমাদের আর কোন সদস্যের জীবন চলে যেতে পারে। তবে কিবরিয়া অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবেন। তার পরিবারের সবার প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। আর যদি কেউ কিবরিয়ার আচরনে দুঃখ পেয়ে থাকেন তবে ক্ষমা করে দিবেন এবং দেনা-পাওনা থাকলে আমাদের বলবেন।
দ্বিতীয় জানাজা শেষে সার্জেন্ট কিবরিয়ার জন্মভূমি পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার সুবিদখালী ইউনিয়নের পূর্ব সুবিদখালী গ্রামের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হয়। বেলা ১১টায় তৃতীয় জানাজা সুবিদখালী সরকারি রয় পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত হয়।
জানাজা শেষে পূর্ব সুবিদখালীর সরদার বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে চিরনিন্দ্রায় শায়িত হন মিকেল। যেখানে তার দাদা-দাদীর কবর রয়েছে। এরআগে মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বাদ আসর রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সের শহীদ শিরু মিয়া মিলনায়তনে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
জানাজা শেষে সড়কপথে সার্জেন্ট কিবরিয়ার মরদেহ নিয়ে সড়ক পথে বরিশালের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন স্বজন ও সহকর্মীরা। বুধবার ভোররাত ৪ টা ২০ মিনিটে কিবরিয়ার মরদেহ নিয়ে বরিশালে পৌছান তারা।
এদিকে কিবরিয়ার মরদেহের জন্য ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের গড়িয়ার পারে আগে থেকে অপেক্ষমান ছিলেন সহকর্মী ও শুভাকাঙ্খিরা। তারা সেখান থেকে কিবরিয়ার লাশবাহি গাড়িকে সাথে নিয়ে বরিশাল পুলিশ লাইন্স এ আসেন। যেটা ছিলো তার শেষ কর্মস্থল। এদিকে সার্জেন্ট এস এম গোলাম কিবরিয়া মিকেল এর মৃত্যুতে শোকাহত স্বজন, সহকর্মী, শুভাকাঙ্খিসহ পরিচিতজনরা। দায়িত্ব পালনকালে তার এ চলে যাওয়াকে কর্মনিষ্ঠা ও দেশপ্রেমের প্রতীক হিসেবে দেখছেন সহকর্মী, সহপাঠীরা।
এস এম গোলাম কিবরিয়া মিকেল এর জন্ম পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার সুবিদখালী ইউনিয়নের পূর্ব সুবিদখালী গ্রামে। ২ বোনসহ ৩ ভাইবোনের মধ্যে সে সবার বড়। বাবা ইউনুস আলী সরদার উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান কমিটির যুগ্ম আহবায়ক। পারিবারিক ভাবেই আওয়ামীলীগ ঘরোয়ানা কিবরিয়ার স্কুল জীবনের শুরুটা নিজ এলাকায় পাড় করলেও, মাধ্যমিকের শুরুটা হয় পটুয়াখালী সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ে। এরপর সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেন।
পরবর্তীতে ২০১৫ সালে বাংলাদেশ পুলিশের সার্জেন্টের চাকুরিতে যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকেই বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগে ছিলেন। ৩ বছর আগে ব্যাচমেট ট্রাফিক সার্জেন্ট মৌসুমী আক্তারের সাথে তার বিয়ে হয়। তাদের সাংসারিক জীবেন ওহি নামে ২ বছরের এক শিশু সন্তান রয়েছে।
উল্লেখ্য বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের (বিএমপি) ট্রাফিক বিভাগের সার্জেন্ট গোলাম কিবরিয়া বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন জিরো পয়েন্ট এলাকায় দায়িত্ব পালনকালে কাভার্ড ভ্যানের চাপায় সোমবার (১৫ জুলাই) গুরুত্বর আহত হয়। এরপর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) সকালে মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে মারা যান।