ডেঙ্গু আতঙ্কে বরিশালের হাসপাতালগুলোতে রোগ পরীক্ষার হিড়িক পড়ায় ডেঙ্গু শনাক্তকরণ (এনএসওয়ান) কিটস সংকট দেখা দিয়েছে। ডেঙ্গু শনাক্তকরণ (এনএসওয়ান) কিটস না থাকায় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রক্তের এ পরীক্ষাটি বন্ধ রয়েছে।
একই সঙ্গে বরিশালের বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও ডেঙ্গুর মূল পরীক্ষা এনএসওয়ান কিটস সংকট দেখা দিয়েছে। এ কারণে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর নগরীর বিভিন্ন ক্লিনিক আর ডায়াগনস্টিক সেন্টার ডেঙ্গুর মূল পরীক্ষা এনএসওয়ান পরীক্ষা-নিরীক্ষা বন্ধ করে দেয়। এতে করে ভোগান্তিতে পড়েছেন রোগীরা।
রোগীর স্বজনরা জানান, বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে ডেঙ্গুর মূল পরীক্ষা এনএসওয়ান কিটস না থাকায় ওই পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। এ কারণে বেসরকারি ক্লিনিক আর ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষার জন্য তাদের যেতে হচ্ছে। কিটস সংকট দেখিয়ে সরকার নির্ধারিত ফি’র অতিরিক্ত অর্থ দিতে তাদের বাধ্য করা হচ্ছে। প্রশাসন এবং গণমাধ্যমের কাছে এ খবর গেলে বেসরকারি ক্লিনিক আর ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো ডেঙ্গু পরীক্ষায় অতিরিক্ত অর্থ নিতে না পেরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর ডেঙ্গু শনাক্তের পরীক্ষা নিরিক্ষা বন্ধ করে দেয়। এতে রোগী ও তাদের স্বজনরা দিশেহারা হয়ে পড়েন।
তারা আরও জানান, বেসরকারি ক্লিনিক আর ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো ডেঙ্গুর মূল পরীক্ষা এনএসওয়ান পরীক্ষা বন্ধ করে দেয়ার খবর বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও প্রশাসনকে জানানো হয়। খবর পেয়ে রাতেই মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ কয়েকটি ক্লিনিক আর ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে অভিযোগের সত্যতা পান। এসময় তিনি ডায়াগনস্টিক মালিকদের ডেকে সরকার নির্ধারিত ফি’র মধ্যে ডেঙ্গু রোগীদের পরীক্ষার নির্দেশ দিলে ফের পরীক্ষা শুরু হয়।
এদিকে বরিশালে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করতে শুরু করেছে। শুধু ঢাকা থেকে আসা রোগী নয়, স্থানীয়ভাবেও ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন ভর্তি হওয়া ৪৬ জন নিয়ে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত বরিশাল শেরে-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ১১৪ জন রোগী। ডেঙ্গুতে এ পর্যন্ত বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে দু’জন ও গৌরনদী উপজেলায় একজনের মৃত্যু হয়েছে।
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে ভর্তি একাধিক রোগীর স্বজনরা জানান, ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড, বিনামূল্যে ওষুধ এবং প্রতীকি মূল্যে ডেঙ্গু রোগ পরীক্ষার নিরীক্ষার কথা থাকলেও অনেক রোগীর স্থান হয়েছে ওয়ার্ডের মেঝেতে আবার কারও ঠাঁই হয়েছে বারান্দায়। ওষুধ বলতে মেডিকেল থেকে সরবারহ করা হচ্ছে প্যারাসিট্যামল আর ওমিপ্রাজল। চিকিৎসাধীন রোগীর গ্লুকোজ স্যালাইনও কিনতে হয় বাইরের ফার্মেসি থেকে।
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালের পরিচালক ডা. এসএম বাকির হোসেন জানান, ডেঙ্গু আক্রান্তদের বিশেষ ব্যবস্থায় চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। চিকিৎসকরা চেষ্টার কোনো ত্রুটি করছেন না। তবে শয্যার সংকট রয়েছে। এ কারণে ওয়ার্ডের মেঝেতে রেখে তাদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। ডেঙ্গু রোগীদের জন্য হাসপাতালে একটি পৃথক ওয়ার্ড চালুর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। তা হলে শয্যা সংকট দূর যাবে।
পরিচালক ডা. এসএম বাকির হোসেন জানান, ডেঙ্গু পরীক্ষার এনএসওয়ান কিটস ও গ্লকোজ স্যালাইন মেডিকেলে আপাতত নেই। এ কারণে এনএসওয়ান পরীক্ষা নিরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদফতরকে জানানো হয়েছে। ঢাকায় লোকও পাঠানো হয়েছে। আশা করা যায় ডেঙ্গু পরীক্ষার এনএসওয়ান কিট আগামীকালের মধ্যে বরিশালে পৌঁছাবে।