কালো টাকা সাদা করার পক্ষে নন অর্থমন্ত্রী

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago

সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এবার বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ার ইচ্ছা নেই বলে জানান তিনি।

মুহিত বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য প্রতিবছর ঋণ দিতে হয়। এতে করে আর্থিক চাপ বাড়ছে সরকারের।

তিনি আরও বলেন, অনেক প্রচেষ্টা নেওয়ার পরও প্রতিষ্ঠানগুলোর দক্ষতা বাড়েনি। অনেক সময় নজর দেওয়া সম্ভব হয় না। তবে ভালো খবর হচ্ছে, নতুন করে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান আর বাড়ানো হবে না।

সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ স্টাডি ট্রাস্ট আয়োজিত ‘স্বপ্নপূরণের বাজেট’ শীর্ষক প্রাক-বাজেট আলোচনায় এসব কথা বলেন অর্থমন্ত্রী। স্টাডি ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ড. এ কে আবদুল মোমেন আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন।

অর্থমন্ত্রী আগে থেকে বলে আসছেন, বাজেট বাস্তবায়নের সামর্থ্য বাড়ছে। কিন্তু এই প্রথমবারের মতো তিনি স্বীকার করেন, আগের চেয়ে বাস্তবায়নের হার কমছে।

তিনি বলেন, একসময় ৯৩ থেকে ৯৫ শতাংশ বাজেট বাস্তবায়ন হতো। এখন সেটা ৮০ শতাংশে নেমে এসেছে। এ প্রবণতা বর্তমান সরকারের জন্য খুব খারাপ সংবাদ। এ জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের অদক্ষতাকে দায়ী করেন তিনি।

মন্ত্রী বলেন, বাজেট বাস্তবায়ন বাড়াতে অনেক পদক্ষেপ নেওয়া হলেও পুরোপুরি সফল হয়নি। উন্নয়ন প্রকল্প পরিচালক নিয়োগে নীতিমালা তৈরির কথা থাকলেও তা করা হয়নি। এখন দেখতে হবে, কোন ক্ষেত্রে কাজ করলে দ্রুত বাস্তবায়ন হবে। দারিদ্র্য বিমোচনে অনেক সাফল্য অর্জিত হয়েছে।

মুহিত দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, দেশে যথেষ্ট এমবিএ তৈরি করা হলেও গার্মেন্ট সেক্টরে শ্রীলংকাসহ অনেক দেশের লোক কাজ করছে। ফলে বাংলাদেশ থেকে বছরে পাঁচ বিলিয়ন ডলার (৫০০ কোটি ডলার) চলে যাচ্ছে। এটা হচ্ছে কারণ, আমরা দক্ষ জনবল তৈরি করতে পারছি না। ব্র্যাক এ বিষয়ে কাজ করছে। দক্ষতা বাড়াতে হলে আরও বেশি নজর দিতে হবে।

বাজেটের আকারের বিষয়ে মুহিত বলেন, উচ্চাভিলাষী নয়, স্বপ্ন ছিল পাঁচ লাখ কোটি টাকার বাজেট করব। সে লক্ষ্যে এখনও যেতে পারিনি। বাজেটের আকার না বাড়ালে আমরা জনগণকে সেবা দেবো কীভাবে? তাই আসন্ন বাজেটের আকার ধরা হয়েছে প্রায় চার লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা।

মুহিত এ কথাও বলেন, চলতি অর্থবছরের বাজেট শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়িত হবে ৮৪ শতাংশ। এই বাস্তবায়নের হার অনুযায়ী, আগামী বাজেটের আকার চার লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকার একটু বেশি হবে।

ব্যাংকিং সেক্টরে অনেক ধরনের গোলমাল রয়েছে বলে মন্তব্য করেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, ব্যাংক কেলেঙ্কারি খুব সিরিয়াস ব্যাপার। সর্বশেষ ২০০৪ সালে ব্যাংকিং কমিশন হয়েছিল। তারপর আর কিছু হয়নি। এটার খুব প্রয়োজন রয়েছে।

মুহিত আরও বলেন, এক ব্যাংকের পরিচালক অন্য ব্যাংকের পরিচালকের জন্য ঋণ অনুমোদন করে। এ ক্ষেত্রে আইনের দুর্বলতা রয়েছে। একীভূত করার বিষয়ে ব্যাংক কোম্পানি আইনে জটিলতা রয়েছে। এটা সংশোধন শ্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বর্তমানে বিনিয়োগের পরিবেশ খুব ভালো বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী। সে কারণেই দেশে প্রথমবারের মতো সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে।

কালো টাকা প্রসঙ্গে মুহিত জানান, কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ার বিষয়ে আর কোনো ইচ্ছা তার নেই। এর কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যতবার আমরা কালো টাকা সাদা করার ঘোষণা দিয়েছি, সব বার ফেইল করেছি। খুবই কম পরিমাণ কালো টাকা সাদা করা সম্ভব হয়েছে।

বাজেট বক্তৃতা এরই মধ্যে লেখা শুরু হয়েছে এবং অনেক বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, এবার শুরু থেকেই বাস্তবায়নের ওপর নজর দেওয়া হবে।

প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান বলেন, উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় ২০৫০ সাল নাগাদ ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট (কর্মক্ষম জনসংখ্যার আধিক্য) কাজে লাগাতে হবে। কর আদায়ে প্রবৃদ্ধি ও অর্থনীতির মধ্যে সম্পর্ক আছে। আদায়যোগ্য হওয়ার পর কর আদায় হচ্ছে না। এর ফাঁকফোকর বের করতে হবে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ব্যাংক খাতকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে হবে। ঋণ বিতরণ ও আদায়ে যেন কোনো রাজনৈতিক প্রভাব না থাকে, সে বিষয়ে নিশ্চিত করতে হবে। অর্থঋণ আদালতে অনেক মামলা আটকে আছে। এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে। তিনি আরও বলেন, গত পাঁচ-ছয় বছরে বাজেট বাস্তবায়নের হার কমেছে। বাস্তবায়ন হার বাড়াতে হলে প্রশাসনিক দক্ষতা বাড়াতে হবে।

পিকেএসএফ চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান বলেন, টেকসই উন্নয়নে কাউকে বাদ দেওয়া যাবে না, অনগ্রসরদের সামনে আনতে হবে। তার জন্য কৃষিতে জোর দিতে হবে। উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হলে কৃষককে প্রশিক্ষণ দিতে হবে।